ক বি তা

রিফাত চৌধুরী

গফুরের মহেশ

গফুরের মহেশ চলে যায় দীর্ঘতম মাঠের ঘাস মাড়িয়ে—তথাপি এ জনারণ্যে শোনা যায় অরণ্যের হূৎস্পন্দন।

কল্পনা। কল্পনা। জাস্ট কল্পনা। আমি আমার কল্পনাটাকে টেকনোলজি দিয়ে ধরে রাখতে চাই। তুমি আমাকে আর খুঁজো না। আমেনা। অপার করুণা! ‘...ভেবে দেখেছ কী, তারারাও যত আলোকবর্ষ দূরে...’ আমাকে ডাকছে দূরের আকাশ। এই খাঁচাখানার দিন শেষ হয়ে এসেছে। একেবারে সৌর-পরিবারের বাইরে চলে যাচ্ছি আমি—আমি চলে যাচ্ছি লং ডিসট্যান্স ট্রাভেলে। ইঞ্জিনের জোর আছে, ট্যাংকভর্তি তেল আছে। আমি বুঝি আরও অনেক দূরের খবর পেয়ে গেছি। যেখানে মুক্তবিহঙ্গ তারার সপ্তক পার হয়ে যায়। (সোনার পাখি?) (ইচ্ছাপাখি?) পাখি দেখলে হিংসা হয়...ওরা যে উড়তে পারে!

পাবলো শাহি

ইতিহাসের সব গোপন রস ও পাপ

মানুষ সম্পর্কে ভাবতে গিয়ে আমি তোমাকে নিয়ে একটা গল্প লিখতে চেয়েছিলাম; যে গল্পে আছে পৃথিবীর প্রাচীন সমাধিচিহ্ন আর সাপের মালা দিয়ে গাঁথা তার সব কাহিনির শেষ। ধরো যে ধুতুরা পুঁতা ছিল আমাদের মনে, তারা তোমার মতো। আর আমার গল্পের সব নারীই ধূসর, রহস্যময়, যোনি দুর্গের আধার। ভাবো তা তেমন টানে আমাকে, এসব কিছুর সঙ্গে কথা বলি—ধ্বংসচিহ্নের মধ্যে বলির পাঁঠাকে জ্যামিতি শেখাব বলে। তার পরও তুমি ভাবতে পার, অর্ধদগ্ধ কষ্টের জামপাতার কথা। অথচ আমরা তো কষ্টের নাম জানি না; কেবল পকেটে লুকিয়ে রাখি অশ্বত্থগাছ। আর যারা পাগলের মতো দীর্ঘ ও শোচনাহীন বাণী বুকে নিয়ে ঘোরে—তারা জানে শতাব্দী থেকে সুপ্রাচীন ব্যাবিলন হয়তো একদিন আমাদের দিকে ফিরে আসবে; ইতিহাসের সব গোপন রস ও পাপ নিয়ে।

কচি রেজা

হে কোলাহল

তারপর পুড়ে পুড়ে আগুনের চেয়েও লাল আমার চুল,

চিৎকার করেও উঠেছিলাম

চিতার ভাঁজে সেসব লিখেছিল গোরখোদক যখন

                                চন্দনকাঠে ঢেকে ফেলা হয়

মৃতদের বাজারেও দরদাম হয়নি অনুমান করেই

মাঝেমধ্যে ভুলের মতন বেড়ে ওঠে নীল হয়ে যায় ওঝা

কার দেহের মাংসে পুরু হচ্ছে ঠোঁট, কেউ খাঁচায়

                                জল ভরে দিয়েছিল স্নানের

মন্ত্র পড়ে এবার নামাও আমাকে

একদিন সহজ ছিল না ছোঁয়া, খুব ভয় আজ

আমাকে লুকাও, হে কোলাহল

রাসেল আহমেদ

এপিটাফে চোখ রেখে

কবরখানার এপিটাফ স্পষ্টতর হতে শুরু করেছে গোরখোদকের দীর্ঘশ্বাসে। তুমি, আমার সঙ্গে কথা বলছ লাল মখমলের আরাম এবং মাশরুমের সুগন্ধ নিয়ে। কীট ও গোলাপের অন্তঃস্থ ঘুম ফেলে ফণীমনসার ঝোপে নেমে আসা আহত চাঁদ মৃত কাঁটার আঘাতে আবার উঠে যেতে শুরু করেছে দীর্ঘশ্বাসগুলোর সঙ্গে। গাছতলায় জমে আছে ১০০ বছরের সঞ্চিত আদিম সংস্কার।

কতিপয় যাযাবর বেদে বলেছিল উড়ে যেতে হবে, যেহেতু কিছু দিগ্দর্শী নক্ষত্র উড়ছিল মাথার ওপর দিয়ে।

অন্য স্ত্রীলোকের মতোই বেদেনীরা বলছিল হেঁটে আসার কথা, যেহেতু সরসর করে একটি সদ্য সরীসৃপ হেঁটে যাচ্ছিল মার্বেল-মাখা শরীরে মুমূর্ষু নগরের দিকে আর তাদের সমস্ত গায়ে চকচক করছিল আকাশ।

স্পষ্টতর এপিটাফে চোখ রেখে অবশেষে তুমি, উচ্চারণ করেছিলে, দেখো, তোমারই ব্যবহার্য খড়িমাটি দিয়ে কেউ লিখে রেখে গেছে তোমার বংশ।

লাল মখমলের আরাম এবং মাশরুমের সুগন্ধি চাতুর্য নিয়ে তারা গেঁথে যাচ্ছে কবর থেকে কবরে।