১ লাখ ২০ হাজার ডলার জমা না দিলে মামলা

নিউইয়র্কে কোম্পানীগঞ্জ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ইউএসএর এক পক্ষের প্রতিবাদ সভায় ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা ১ লাখ ২০ হাজার ডলার অবিলম্বে অ্যাসোসিয়েশনের ফান্ডে জমা দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। অন্যথায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়।
সভায় বক্তারা বিপক্ষের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, একতরফা নির্বাচনের চিন্তা বাদ দিয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। একের পর এক গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে চলেছেন, আশা করি আপনাদের শুভবুদ্ধি হবে। না হলে কোম্পাআনিগঞ্জবাসীকে সঙ্গে নিয়ে অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই শুরু হবে।
২২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ব্রুকলিনের চার্চ-ম্যাকডোনাল্ডে গ্রিনহাউস রেস্টুরেন্টে আয়োজিত সংগঠনের বিদায়ী সভাপতি পক্ষের প্রতিবাদ সভায় অ্যাসোসিয়েশনের বিদায়ী সেক্রেটারি মোশাররফ হোসাইনের (সবুজ) বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে ব্যাংক থেকে ১ লাখ ২০ হাজার ডলার উত্তোলন, সমিতির কার্যালয়ে তালা দিয়েছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ কার্যকরী কমিটির ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা, হিসাব-নিকাশ না দেওয়াসহ নানা অভিযোগ আনা হয়।
কোম্পানীগঞ্জ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের প্রবীণ সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং আরজু হাজারীর পরিচালনায় প্রতিবাদ সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন নোয়াখালী সমিতির সহসাধারণ সম্পাদক ইউসুফ জসিম, বৃহত্তর নোয়াখালী সমিতির সাবেক সভাপতি সালামত উল্লাহ, অ্যাসোসিয়েশনে বিদায়ী সভাপতি আবদুল মালেক, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মশিউর রহমান, মাস্টার আবদুল করিম, সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক চৌধুরী মামুন, সাবেক সহসভাপতি মোস্তফা মিয়া, ব্যবসায়ী নুরুল হুদা, কামাল উদ্দিন, মো. মোশারেফ হোসেন, মোশারফ হোসেন, ব্যবসায়ী মাঈন উদ্দিন, এনওয়াইপিডি অফিসার মোস্তফা স্বপন, আনিছুর রহমান, আবুল বাশার, সাবেক চেয়ারম্যান ইদ্রিস মিয়া, সাবেক কমিশনার আবদুল মালেক প্রমুখ।
সভায় আবদুল মালেক বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কার্যকরী কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় তিনি কার্যকরী কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে ট্রাস্টি বোর্ডের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কার্যকরী কমিটি ৩ বছর মেয়াদ কমিটির নির্বাচনী বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে এবং নবনির্বাচিত কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে ট্রাস্টি বোর্ডের কাছে ক্ষমতা অর্পিত হবে এবং আগের কমিটি বিলুপ্ত হবে। ট্রাস্টি বোর্ড কার্যকরী কমিটির অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব পালন করবে।
বিদায়ী সভাপতি আবদুল মালেক অভিযোগ করেন, ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টায় সমিতির অ্যাকাউন্ট থেকে সাবেক কর্মকর্তাদের নাম প্রত্যাহার করে ট্রাস্টি বোর্ডের ৩ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ওই সময় অ্যাকাউন্টের কার্যক্রম শেষ করে ব্যালেন্স জানতে চাইলে ম্যানেজার তাদের সকাল ৯টা ৬ মিনিটে জানান, বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক মোশারেক হোসেন ও কোষাধ্যক্ষ কামরুল ইসলাম ব্যাংকের অন্য ব্রাঞ্চ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার ডলার সার্টিফায়েড চেকের মাধ্যমে উত্তোলন করেন, যা কার্যকরী কমিটির বিদায়ী সভাপতি এবং বাকি সদস্যরা জানতেন না।
প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ট্রাস্টি বোর্ড ৯০ দিন ও প্রয়োজনে আরও ৩০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত কমিটির নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। নির্বাচন সংক্রান্ত কোন জটিলতা দেখা দিলে ট্রাস্টি বোর্ড তা সমাধানের ক্ষমতা রাখে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বোর্ড অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব পালন করছে। ট্রাস্টি বোর্ডের মেয়াদপূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বোর্ডকে বাতিল করার কোন বিষয় গঠনতন্ত্রের ধারা–উপধারায় নেই।
বক্তারা অভিযোগ করেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সমিতির নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। নির্বাচন কমিশন সাধারণ সভায় নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করে এবং মনোনয়নপত্রও বিক্রি করে। কিন্তু নিউইয়র্কের বাইরে অবস্থানরত ভোটারের ব্যালট মেইল করার ব্যাপারে জটিলতা সৃষ্টি হয় এবং নানাবিধ কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। নিউইয়র্কের বাইরে মেইলিং ব্যালট নির্বাচন আচরণবিধিতে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সেক্রেটারি পক্ষ রহস্যজনক জটিলতা সৃষ্টি করে।
বক্তারা বলেন, নির্বাচন কমিশন ও ট্রাস্টি বোর্ড সাংবিধানিক পদ। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ট্রাস্টি বোর্ডের দিকনির্দেশনা সবাইকে মেনে চলার বিধান থাকলেও সেক্রেটারি পক্ষ শুরু থেকে এ ধারা লঙ্ঘন করে ট্রাস্টিকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নির্বাহী কমিটি একক সিদ্ধান্তে ট্রাস্টি বোর্ড বাতিল করতে পারে না। কিন্তু বিদায়ী নির্বাহী কমিটির সেক্রেটারি গ্রুপ গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে ট্রাস্টি বোর্ড বাতিলের দৃষ্টতা দেখাচ্ছে। তাঁরা আরও অভিযোগ করেন, ১৫ জনের কমিটিকে পাশ কাটিয়ে সেক্রেটারির নেতৃত্বে তিনজন মিলে অবৈধ প্রক্রিয়ায় বাড়ি কিনে সমিতিকে দ্বিধা বিভক্ত করেছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ১০ হাজার বা তার বেশি অর্থ খরচ করতে উপদেষ্টা পরিষদ ও ট্রাস্টি বোর্ডের অনুমোদন নেয়নি তারা।
বক্তারা সেক্রেটারির বিরুদ্ধে নিজের বাসায় বসে রেজুলেশন লেখা, সভায় উপস্থিতির স্বাক্ষরকে রেজুলেশন বুকে স্বাক্ষর হিসেবে দেখানো, সমিতির অফিস বাদ দিয়ে কার্যকরী কমিটির সদস্যদের বাসার সামনে গিয়ে গাড়িতে বসে স্বাক্ষর নেওয়া, সাধারণ সভায় সদস্যদের সাধারণ প্রশ্নের জবাব না দেওয়া এবং সদস্যদের প্রস্তাবিত প্রস্তাবগুলো ভোটে না দেওয়া, সমিতির অফিসে বারবার তালা দেওয়া ইত্যাদি অভিযোগ আনেন।
সভায় বক্তারা আরও অভিযোগ করেন, সংগঠনের সর্বশেষ সাধারণ সভায় ট্রাস্টি থাকার বিপক্ষে ভোট নিলেও পক্ষে ভোট না নিয়ে অগঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ট্রাস্টি বাতিল ঘোষণা করা হয়। কথিত সাধারণ সভায় নিজস্ব কিছু লোক দিয়ে হট্টগোল তৈরি করা হয়। সাধারণ সভায় বিনা প্রয়োজনে সিকিউরিটি ভাড়া করে সমিতির অর্থ অপচয় করা হয়। এক বছরে চার বার সাধারণ সভা করে সমিতির আর্থিক ক্ষতি সাধন করা হয়।
সভায় বক্তারা গঠনতন্ত্রের আলোকে ঐক্যের ভিত্তিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে অ্যাসোসিয়েশনের ধারাবাহিকতা রক্ষাকল্পে কার্যক্রম পরিচালনায় সংগঠনের সব সদস্যসহ কোম্পানীগঞ্জবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।