বাংলাদেশিদের ওপর হামলা

জীবনের প্রয়োজনে সংঘবদ্ধ হওয়া মানুষ সংঘ টেকাতেই নেতা বেছে নেয়। এটি মানুষের আদিম প্রবণতা। অনুকূল সময়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার কিংবা দুর্যোগ মুহূর্তে সবাইকে রক্ষার দায়িত্বটি নেতার ওপরই বর্তায়। একটি অঞ্চলের মানুষ নানা প্রয়োজনে পৃথক পৃথক সংঘের সভ্য হতে পারেন, বেছে নিতে পারেন নিজেদের পছন্দের নেতাকেও। কিন্তু যখন গোটা অঞ্চল সংকটের মুখে পড়ে, তখন এই পৃথক সংঘ আর পৃথক থাকে না। সবগুলো সংঘের নেতৃত্ব পর্যায়ে থাকা ব্যক্তিদের ওপরই তখন সম্মিলিতভাবে সংকট মোকাবিলার দায়টি বর্তায়।
আমেরিকায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা নানা প্রয়োজনে এমন বহু সংগঠন গড়ে তুলেছেন। এসব সংগঠনের অধিকাংশই আঞ্চলিক সংগঠন। রয়েছে নানা সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক ও ধর্মীয় সংগঠন। পরিচয় যা-ই হোক এসব সংগঠনের মূল পরিচয়, এগুলো বাংলাদেশি সংগঠন। এই সংগঠনগুলোর অধিকাংশকেই সারা বছর নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। আরও ভালো করে বললে, নিজ নিজ সংগঠনের নেতৃত্ব পেতে অন্তঃকলহের খবরই বেশি আসে।
নেতৃত্বের প্রতি অসংখ্য মানুষের আগ্রহ নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। কারণ, এটি অন্তত নেতৃত্বশূন্য ভবিষ্যতের আশঙ্কাকে দূরীভূত করে। ফলে সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব নিয়ে চলা কোন্দল আশাবাদীও করতে পারত। কিন্তু তেমনটি তো হচ্ছে না। কারণ, এখানে কলহটিই মুখ্য, নেতৃত্বের লোভটিই মুখ্য; নেতৃত্বটি নয়। তেমনটি হলে আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশির বাস যে নিউইয়র্কে, সেখানে একের পর এক বাংলাদেশির ওপর হামলায় তাঁরা চুপ করে থাকতে পারতেন না।
বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালন, বনভোজন, বাংলাদেশ থেকে আসা অতিথিদের সংবর্ধনায় বাংলাদেশি সংগঠনগুলোকে যতটা ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়, তেমন দেখা যায় না সামষ্টিক স্বার্থে কাজ করতে। এত দিন বিষয়টি নিয়ে দু-একজন ব্যক্তি প্রশ্ন তুললেও এখন বাংলাদেশি কমিউনিটির অনেকেই জোরালোভাবে প্রশ্নটি সামনে এনেছেন। এত এত সংগঠন, এত প্রচার আকাঙ্ক্ষা, নেতৃত্ব নিয়ে জোর লড়াই, অনুষ্ঠান—এত কিছুর কী মানে থাকে, যদি বাংলাদেশিরাই এই প্রবাসে আক্রান্ত হতে থাকে।
একটি দুটি ঘটনা নয়। এখন পর্যন্ত বহু বাংলাদেশি দুর্বৃত্তের হামলার শিকার হয়েছেন। অনেকে আহত-নিহত পর্যন্ত হয়েছেন। দু-একটি ঘটনায় হামলাকারী গ্রেপ্তার হলেও এ ধরনের হামলা রোধে প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নেয়নি। বিস্ময়ের বিষয় হলো, এ ক্ষেত্রে জোরালো পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের কাছে বিচ্ছিন্ন দাবি উঠলেও সবগুলো সংগঠন এক জোট হয়ে এখন পর্যন্ত কোনো দাবি তোলেনি। অথচ নিউইয়র্ক শহরে বাংলাদেশিদের সংখ্যা অনেক। এত মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে সম্মিলিতভাবে বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা যদি কঠোর ব্যবস্থার দাবি তুলতেন, তবে তা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হতো প্রশাসনকে। কিন্তু তার কিছুই এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। তাঁরা এখনো নিজ নিজ বৃত্তে বসে নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত আছেন, যা নেতৃত্ব গুণের ন্যূনতম দাবির সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।
বড় সংকট মোকাবিলায় সবাইকে সংঘবদ্ধভাবে কাজ করতে হয়। আর এই কাজটি করার পথেই মানুষ তার নেতাকে বেছে নেয়। আমেরিকায় বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতাদের সামনে এখন এই সুযোগ এসে উপস্থিত। পুরো কমিউনিটির এই সংকটকালে তাঁদের সোচ্চার হয়ে বুঝিয়ে দিতে হবে যে, কেন তাঁরা নেতৃত্বের দাবিদার।