এখানে অসহায়ের পাশে দাঁড়ান

আমি একটা রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক কমিউনিটির নেতা। টিভি কিংবা প্রিন্ট মিডিয়ায় কীভাবে আমার প্রচার করা যায়—সেটাই আমার বড় কাজ। মাঝে মাঝে নিজের পকেটের টাকা খরচ করে মিটিং করে থাকি। সহজ-সরল ভাষা ও যুক্তিপূর্ণভাবে মানুষের চাওয়া-পাওয়া, প্রত্যাশার কথা বলে থাকি কারণ, আমি ভালো নেতা হতে চাই।
আমার বক্তৃতার মূল বিষয় থাকে, আমি এটা করেছি, ওটা করেছি, এটা করব। সবাই আমার কথা শুনছে কিংবা শুনছে না, তা নিয়ে আমার মাথা ব্যথা নাই। টিভি কিংবা প্রিন্ট মিডিয়ার ভাই-বোনেরা শুনলেই ব্যাস।
মিটিং শেষ, বক্তৃতা দেওয়া শেষ। এখন আমার চিন্তা কোন কোন টিভি কিংবা প্রিন্ট মিডিয়ায় আমার খবর প্রচার হলো।
আমাকে সবাই জেনে গেছে। এখন আমি আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ব। বক্তৃতায় কী বলেছি, তা কি এখন আমার মনে আছে? যা বলেছিলাম একমাত্র নেতা হওয়ার জন্য বলেছিলাম।
আমার বসবাস বিদেশের মাটিতে। এ দেশে কোন ধরনের বিষয় নিয়ে আমি চিন্তা করি না। কারণ বড় নেতা হতে হলে আমাকে যে বাংলাদেশের চিন্তা করতে হবে। এখানের বাংলাদেশিরা কেমন আছে, আমি তাদের খোঁজ করি না, আমি অনেক ব্যস্ত মানুষ। তা ছাড়া বিপদে সাহায্য করলেও খবরের কাগজে তা আসবে না। আমি যে নেতা হতে চাই।
বাংলাদেশের কাউকে সাহায্য করলে বড় করে খবরের কাগজে আমার নাম আসবে। এখানে কেউ আমাকে নিয়ে লিখতে চায় না, কারণ সবাই বুঝে গেছে আমি মিথ্যুক। বক্তৃতায় যা বলি বাস্তবে ভিন্ন।
আমরা অনেকেই বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কিন্তু আমরা কি একবার নজর রাখছি, আমাদের আশপাশে কি ঘটে যাচ্ছে? কে বলেছে বিদেশে গরিব নেই। আমি বলব, বিদেশেও অনেক অসহায় ও গরিব আছে। হ্যাঁ, আমি বলছি আমাদের বাংলাদেশি গরিব ও অসহায় মানুষের কথা।
অনেকের প্রশ্ন জাগবে, বিদেশে আবার গরিব আছে নাকি? উত্তরে বলব, অবশ্যই আছে। দেশ থেকে বিদেশে যারা আসছেন, তারা কিন্তু নতুন দেশের জন্য গরিব ও অসহায়।
আমরা অনেকেই বড় বড় কোম্পানিতে কাজ করছি, কিন্তু বাংলাদেশ থেকে নতুন আসা মানুষকে সাহায্য করতে হিমশিম খাই। টাকা দিয়ে নয়, একটা কাজের ব্যবস্থা করে দিলেও একটা পরিবার বেঁচে যায়।
সামাজিক কিংবা রাজনৈতিক সভায় শুধু নিজের জয়গান কিংবা বাংলাদেশের গরিবদের জন্য টাকা জোগাড় করতে নেতারা ব্যস্ত। রমজান মাস আসার আগেই আমরা ইফতার পার্টির জন্য দিন তারিখ নির্ধারণ করে ফেলেছি, বাংলাদেশের গরিবদের জন্য চিন্তা করছি। কিন্তু আমরা যে দেশে আছি সে দেশের অসহায় মানুষের কথা কি একটিবার মনে করছি?
আমাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থে পরিষ্কারভাবে লেখা আছে, ‘প্রতিবেশীর হক সবচেয়ে বেশি’। অথচ আমরা যে দেশে বাস করছি, সে দেশের মানুষকে অবহেলা করে অন্য দেশকে নিয়ে চিন্তা করছি।