নিউইয়র্কে দ্রুত সেনাবাহিনী মোতায়েনের আহ্বান

করোনাভাইরাসের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু রাজ্যে পার্কগুলো ইতিমধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাসের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু রাজ্যে পার্কগুলো ইতিমধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা স্থানীয় সময় ২২ মার্চ রোববার সকালেই ১৫ হাজার ছড়িয়ে গেছে। মৃতের সংখ্যা ১১৪ জন। এসব সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। প্রতি ঘণ্টায় একজনের মৃত্যু ঘটছে। এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন নিউইয়র্কের মেয়র বিল ডি ব্লাজিও। প্রথমবারের মতো নগরীর মেয়র ও রাজ্য গভর্নর রন্ড্রু কুমো সরাসরি ফেডারেল সরকারের তৎপরতা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন। রাজ্য গভর্নর দ্রুত সেনাবাহিনী মোতায়েনের জন্য প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে নিউইয়র্কে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটবে। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এসব জীবন রক্ষা করা সম্ভব হতো।

গভর্নর কুমো বলেন, নিউইয়র্কে ৫৩ হাজার হাসপাতাল বেড আছে। দ্রুতই ১ লাখ ১০ হাজার বেডের দরকার হবে। নগরীর হোটেল, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ খালি থাকা যেকোনো স্থাপনায় দ্রুত হাসপাতাল নির্মাণের জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। গভর্নর বলেন, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে একা পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, রাজ্য সরকার কেবল ২৫ শতাংশ কাজ করতে পারবে। বাকি ৭৫ শতাংশ কাজের জন্য ফেডারেল সরকারের জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন।

নগরীর মেয়র ডি ব্লাজিও রোববার সকালে বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি না, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখনো কেন সেনা মোতায়েন করে যুদ্ধকালীন কাজের নির্দেশ দিচ্ছেন না।’ এই প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সামাল দিতে ফেডারেল উদ্যোগ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেন নগরীর মেয়র।

পুরো আমেরিকার মেডিকেল সাপ্লাই নির্মাতাদের যুদ্ধকালীন উৎপাদন নিশ্চিত করার জন্য প্রেসিডেন্টকে নির্দেশ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মেয়র। সেনাবাহিনী এখনো কেন ব্যারাকে? তাদের কেন সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে না? মেয়র প্রশ্ন রাখেন।

কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নিউইয়র্ক, নিউ জার্সিসহ পুরো এলাকা লকডাউনে যাচ্ছে। আতঙ্কিত নাগরিকেরা একে অন্যের খোঁজ নিচ্ছেন। নিউইয়র্কে বাংলাদেশিবহুল এলাকায় বেশ কয়েকজনের করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অন্তত অর্ধশতাধিক বাংলাদেশিকে পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এসব শনাক্তকরণ ফলাফল পাওয়া সময়ের ব্যাপার। এখানে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার কারণে নাম পরিচয় প্রকাশ করা হচ্ছে না। জ্যামাইকা, ওজন পার্ক, জ্যাকসন হাইটসে বাংলাদেশিদের মধ্যে ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যাওয়ার সংবাদ ঘুরে বেড়াচ্ছে। জ্যামাইকার একটি আবাসন ভবনে একজনের করোনা ভাইরাস ধরা পড়ার পর অন্যদের পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। সব মিলিয়ে উৎকণ্ঠার মধ্যে আছেন প্রবাসীরা। রাজ্য গভর্নর ও মেয়র সার্বক্ষণিক রাজ্য ও নগরীর পরিস্থিতি আপডেট দিচ্ছেন। স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশসহ নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য খ্যাত রাইকার্স আইল্যান্ড কারাগারে ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। কোলাহলের নগরী এখন আতঙ্কের নগরী। এই নগরীর আশাবাদী নাগরিকেরা নিজেদের দায়িত্ব পালন করছেন। নিজেদের বিচ্ছিন্ন রাখছেন।
জনশূন্য নিউইয়র্ক আর কতটা ভীতিকর হতে পারে? এ সমস্যার অবসান কবে, কিভাবে হবে-এমন প্রশ্ন সবার।