কানাডায় তিক্ত বসন্ত

প্রতীক্ষিত বসন্ত দিনে গোটা কানাডা যেন স্বেচ্ছা গৃহবন্দী। ছবি: রয়টার্স
প্রতীক্ষিত বসন্ত দিনে গোটা কানাডা যেন স্বেচ্ছা গৃহবন্দী। ছবি: রয়টার্স

ভর দুপুরে পেছনের উঠোনে কি দারুণ রোদ! একটা পাখি ডেকেই যাচ্ছে বিরতিহীন। এক পশলা হাওয়া বইল। হিম শীতল বাতাস নয়। বসন্ত বাতাস। মুহূর্তে মন ভালো করে দেয়। শীত চলে গেছে নিয়ম মেনে। এসেছে বহু প্রতীক্ষিত বসন্ত। কিন্তু সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে বশংবদ করোনা। বছরজুড়ে এই সময়ের অপেক্ষাতেই থাকে গোটা কানাডা। কষ্টকর শীতের শেষে এটাইতো যেদিক খুশি বেরিয়ে পড়ার মোক্ষম সময়। কিন্তু কপালের ফের। এমন দারুণ বসন্ত দিনেও গোটা কানাডা যেন স্বেচ্ছা গৃহবন্দী।

গোটা কানাডা না বলে অবশ্য কানাডার বড় অংশ বলাই ভালো। বাংলাদেশে দেখছি, সামাজিক দূরত্ব কাকে বলে সেটা হাতে কলমে শেখাতে লাঠিসোঁটা হাতে নেমেছে পুলিশ। কিছু কানাডীয়দের জন্যও মনে হচ্ছে, এই লাঠির বাড়ি জরুরত।

জাস্টিন ট্রুডো স্বয়ং প্রতিদিন নিয়ম করে বোঝাচ্ছেন। বাছারা তোমরা ঘরেই থাক। ঘরে থাকা মানেই দেশের জন্য কাজ করা। তোমাদের বাড়িভাড়া, খানাপিনা সবকিছুর ভার আমাদের। কিন্তু ট্রুডোর মিষ্টি কথায় সবার বেলায় চিড়ে ভিজছে না।

বাধ্য হয়ে তাই আঙুল বাঁকা করার পথে ট্রুডোও। এবার, সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আর মিষ্টি কথা নয়। কেউ সামাজিক দূরত্ব না মানলে তাকে গুনতে হতে পারে বড় অঙ্কের জরিমানা। যেতে হতে পারে জেলেও। ইতিমধ্যেই বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে শহরের সমস্ত পার্ক।

ভিনদেশিদের জন্য কানাডার দুয়ার রুদ্ধ হলেও দেশের বাইরে কানাডীয় নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দাদের দেশে ফিরতে বাধা নেই। তারাও এবার পিলপিল করে ফিরছে। কিন্তু এখন তাঁদের জন্যও শর্ত কড়া। আগের মতো কেবল অনুরোধ নয়। ১৪ দিনের সঙ্গনিরোধ বা কোয়ারেন্টিন সবার জন্য বাধ্যতামূলক। বিমানবন্দর ত্যাগের আগে দিতে হবে ঠিকানা। সেখানেই শেষ নয়। পরে খোঁজ নেওয়া হবে তারা ১৪ দিনের এই গৃহবন্দীত্ব ঠিকঠাক পালন করছেন কি না।

প্রতিদিন হাজারো মানুষের করোনা পরীক্ষা হচ্ছে কানাডায়। বাড়ছে নিশ্চিতভাবে আক্রান্তের সংখ্যাও। স্বাভাবিকভাবেই পাশের প্রতিবেশী শহর নিউইয়র্কের ভয়াবহ পরিস্থিতি চোখ রাঙাচ্ছে টরন্টোর মানুষদের। টরন্টোর পরিস্থিতি নিউইয়র্কের মতো ভীতিকর না হলেও খুব ভালো সেটাও বলা যাচ্ছে না।

২৬ মার্চ পর্যন্ত, গোটা কানাডায় করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি মানুষের। এর মধ্যে আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন ৪০১৮ জন। মারা গেছেন ৩৯ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ৮৫৮ জন অন্টারিও রাজ্যের। এর একটি বড় অংশ অন্টারিওর রাজধানী টরন্টোর। গত কদিনের মতো, ২৬ মার্চেও আক্রান্তের সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কুইবেক ও এবং ব্রিটিশ কলাম্বিয়া রাজ্যেও।

বিজ্ঞান যেহেতু করোনাভাইরাসের প্রতিকার খুঁজে হয়রান, মানুষ তাই আপাতত সমাধান খুঁজতে চাইছে প্রকৃতির কাছ থেকেই। ঋতু পরিবর্তনের এই মৌসুমে এমনিতেই কানাডার লোকজনের সর্দিগর্মি নাকি লেগেই থাকে। হয়তো এই গ্রীষ্মে গরমটা জেঁকে বসলেই নিরস্ত হবে করোনাভাইরাস। হয়তো, প্রকৃতির খেয়ালেই করোনাভাইরাস হানা দিয়েছে পৃথিবী জুড়ে। এই মুহূর্তে কেবল প্রকৃতিই পারে এই ঘাতককে নিকেশ করতে।