'প্রতিটি জীবন রক্ষার জন্য আমরা লড়ে যাব'

সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় রাস্তায় সাইকেলে দাঁড়িয়েই ভেতরের বাসিন্দাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন একজন। ছবি: রয়টার্স
সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় রাস্তায় সাইকেলে দাঁড়িয়েই ভেতরের বাসিন্দাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন একজন। ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাসের কারণে নিউইয়র্ক কার্যত অচল থাকবে আগামী মাস পর্যন্ত। শুক্রবার সকালে নগরীর মেয়র বিল ডি ব্লাজিও বলেছেন, নগরী মে মাস পর্যন্ত বন্ধ রাখার প্রস্তুতি আছে। নগরীর অর্ধেক মানুষ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন মেয়র। বলেছেন ৮০ শতাংশের ওপর এর নানা প্রভাব পড়বে।

নিউইয়র্ক নগরীর ২০ শতাংশ মানুষই করোনাভাইরাসে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হলে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়বে। নাজুক পরিস্থিতির জন্য ফেডারেল সরকারের আরও জরুরি সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন মেয়র ব্লাজিও। নিউইয়র্ক রাজ্যে ৩০ হাজার ভেন্টিলেটর ও নগরীর জন্য ১৫ হাজার ভেন্টিলেটর জরুরি প্রয়োজন বলে মেয়র জানান। রাজ্যের গভর্নর এন্ড্রু কুমো শুক্রবার সকালে বলেন, নতুন সাত হাজার ৩৭৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। রাজ্যে মৃতের সংখ্যা বৃহস্পতিবার রাতেই ৫১৯ বলে জানানো হয়েছিল। নিউইয়র্কের স্কুল ১ এপ্রিল থেকে আরও দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ থাকবে। গভর্নর বলেছেন, আমরা পরিস্থিতির আরও অবনতি আশঙ্কা করছি। গভর্নর বলেন, আমরা লড়ে যাব। প্রতিটি জীবন রক্ষার জন্য আমরা লড়ে যাব। নগরীর হোটেল ও নার্সিং হোমকে অস্থায়ী হাসপাতালে রূপান্তরিত করার প্রয়াস নেওয়া হচ্ছে।

গভর্নর কুমো সার্বক্ষণিক নাগরিকদের পাশে আছেন। ম্যানহাটনের জ্যাভিট সেন্টারে সেনাবাহিনীর নির্মিত হাসপাতালে দাঁড়িয়ে কুমো বলেন, এখন সময় সপ্তাহ থেকে সপ্তাহ গণনা করার। তিনি বলেন, ‘আমরা দিন গণনা করে সময় পার করছি। আমরা ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। ইতিহাসের এ সন্ধিক্ষণ নিয়ে আগামীদিনে লোকজন লিখবে। ইতিহাসের এ সময়টি অনেক কিছুই বদলে দেবে। কেউ দুর্বল হবে, কেউ শক্তিশালী হয়ে দাঁড়াবে। ইতিহাসে এ সময়টির বিবরণ দিতে গিয়ে আমাদের সন্তান, তাদের সন্তানেরা অশ্রু বিসর্জন দেবে। আমদের বহু মুখ, বহু কাজের কথা মনে পড়বে এ সময়ের কথা স্মরণ করতে গিয়ে।’

করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে আমেরিকার অন্যান্য রাজ্যে। শিকাগো, মিশিগান, নিউ ওরল্যানডসসহ উত্তর ও মধ্যের রাজ্যগুলোতে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাস আগামী দিনে আরও বাড়বে হবে বলে আমেরিকার সার্জন জেনারেল সতর্ক করে দিয়েছেন। ব্যক্তিগত সুরক্ষা করাকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে সবক্ষেত্রে। নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখার সমস্ত প্রয়াস নেওয়ার জন্য নাগরিকদের কাছে আবেদন জানানো হচ্ছে।

কংগ্রেস দ্রুততার সঙ্গে নাগরিক সহযোগিতার বিল পাশ করেছে। প্রেসিডেন্ট দ্রুতই স্বাক্ষর করছেন এ বিলটিতে। সোমবার থেকে আই আর এস ফেডারেল এ নাগরিক সহযোগিতা দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সমস্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। নিউইয়র্কসহ প্রতিটি নগর ও শহর কেন্দ্রে নাগরিক সহযোগিতার জন্য হটলাইন খোলা হয়েছে। সরকারের বাইরে চ্যারিটি সংগঠন, চার্চ, মসজিদ, মন্দির ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকেও লোকজনকে সাহায্য দেওয়া হচ্ছে। লোকজন ঘরে থাকলেও প্রতিবেশীর খোঁজ নিচ্ছেন। রাস্তাঘাট ফাঁকা। সদা চাঞ্চল্যের নিউইয়র্কসহ পুরো আমেরিকাই ইতিহাসের এক করুন বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আজ।