অদৃশ্য শত্রুর হামলায় জর্জরিত অর্থনীতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে: ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

শুধু এক দফাই নয়, করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে নাকাল আমেরিকার নাগরিকদের দ্বিতীয় দফা নগদ সাহায্যের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। চলমান সবচেয়ে বড় মানবিক সংকটে দাঁড়িয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতিহাসের বৃহত্তম নাগরিক সহযোগিতা বিলে সই করছেন। দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে নাগরিকেরা তাঁদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বা ডাকযোগে সহযোগিতার অর্থ পাবেন। সপ্তাহে ৬০০ ডলার পর্যন্ত টানা চার মাস বেকার ভাতা পাবেন তাঁরা।

স্পিকার ন্যান্সি পোলেসি বলেছেন, নাগরিকদের সহযোগিতার জন্য দ্বিতীয় দফা একটি আইন প্রস্তাব নিয়ে তাঁরা এর মধ্যেই কাজ শুরু করছেন। যদিও স্পিকার ন্যান্সি পোলেসিকে বিল সইয়ের আনুষ্ঠানিকতায় হোয়াইট হাউস থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

একাধিক মার্কিন সংবাদমাধ্যমের বলা হয়েছে, দেশের চরম সংকটের মুহূর্তেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং ডেমোক্র্যাট দলের নেতা স্পিকার ন্যান্সি পোলেসি ১৬ মার্চের পর সরাসরি কোনো কোথাই বলেননি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর মধ্যেই দেরি করে ফেলেছেন এবং এখনো তিনি নিউইয়র্কের মতো নাজুক নগরীর জন্য পর্যাপ্ত সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসছেন না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করা হচ্ছে। নিউইয়র্ক নগরীর গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো নিউইয়র্কের জন্য আরও বেশি ফেডারেল সাহায্যের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছেন।

নানা দর-কষাকষির পর গতকাল শুক্রবার বিকেলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করোনাভাইরাস রিলিফ প্যাকেজ আইন অনুমোদন করেছেন। আইনে সই করে ট্রাম্প বলেছেন, ‘অদৃশ্য শত্রুর আঘাতে আমরা জর্জরিত।’ তিনি আসা করেন, করোনা রিলিফের এ আইনের ফলে আমেরিকার অর্থনীতি চমৎকারভাবে ঘুরে দাঁড়াবে। এ আইনে কর্মহীন নাগরিকেরা সপ্তাহে ৬০০ ডলার পর্যন্ত টানা চার মাস বেকার ভাতা পাবেন।

২০১৮ সালের বা ২০১৯ সালের ট্যাক্স রিটার্নের সূত্র ধরে যাঁদের ডিরেক্ট ডিপোজিট করা আছে, তাঁদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যাবে, অন্যদের ডাকযোগে যাবে। তিন সপ্তাহের মধ্যে না পেলে আইআরএস নির্দিষ্ট ফোন নম্বর দেবে, কল করার জন্য।

আগেই জানানো হয়েছে, ৭৫ হাজার ডলারের নিচে বার্ষিক আয়ের মানুষ জনপ্রতি ১ হাজার ২০০ ডলারের এককালীন চেক পাবেন। চার মাসের জন্য বেকার ভাতা দেওয়া দেওয়া হবে। স্বামী-স্ত্রী বা দম্পতি মিলে পাবেন ২ হাজার ৪০০ ডলার। ১৭ বছর পর্যন্ত প্রতি সন্তান পাবে ৫০০ ডলার। বার্ষিক আয় ৭৫ হাজার ডলার থেকে ৯৯ হাজার ডলার পর্যন্ত কমতে থাকবে এবং বছরে এককভাবে যাঁরা ৯৯ হাজার ডলার আয় করেন, তাঁরা কোনো সহযোগিতার যোগ্য বলেই বিবেচিত হবেন না। আমেরিকার ৯০ শতাংশ মানুষই ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এই নাগরিক সুবিধাপ্রাপ্তির যোগ্য হবেন বলে মনে করা হচ্ছে। যাঁরা ২০১৯ সালের ট্যাক্স রিটার্ন করেননি, তাঁরা বর্ধিত সময়ের মধ্যে ট্যাক্স রিটার্ন করলে, আইআরএস তাদের সর্বশেষ অবস্থা জেনে ব্যবস্থা নিতে পারবে। অনেকেই আগের বছর এককভাবে বছরে ৯৯ হাজার ডলার আয় করেছেন, এ বছরে কাজ হারিয়েছেন। তাঁদের জন্য আইআরএস তাদের উয়ভ সাইটে করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা প্রদান করবে।

বাড়ির মালিকদের ফেডারেল মর্টগেজের বিলম্ব ফি দুই মাসের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে। এ জন্য বাড়ির মালিকদের ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। ভাড়াটেদেরও দুই মাসের জন্য উচ্ছেদ করা যাবে না। তাঁদের ওপর বাড়ির মালিকেরা বিলম্ব ফি আরোপ করতে পারবে না। চার মাসের মধ্যে বাড়ি ছেড়ে দিতে ভাড়াটেদের বলতে পারবে না। মর্টগেজ কোম্পানি বা ব্যাংকে বাড়ির মর্টগেজ গ্রহীতাদের অবশ্যই কল দিয়ে পেমেন্ট স্থগিত রাখার জন্য অনুরোধ করতে হবে।

অনেকেই জানতে চেয়েছেন, ভাড়াটেদের কী হবে? প্রাইভেট বাসাবাড়িতে ভাড়াটেরা বাড়িভাড়া শোধ করবেন বেকার ভাতার অর্থ থেকে। এসব ভাড়াটের জন্য এখন পর্যন্ত আলাদা কোনো প্রণোদনা নেই।

আমেরিকার নাগরিক ছাড়াও গ্রিন কার্ড হোল্ডার, কর্ম ভিসায় থাকা লোকজন এ অর্থ পাবেন। প্রাপ্ত এ অর্থ ফেরত দিতে হবে না বা করযোগ্য আয় হিসেবে দেখা হবে না। ট্যাক্স ক্রেডিট হিসেবে পরের বছরে তা সমন্বয় করা হবে। আইআরএসের কাছে করদাতার বকেয়া দেনা থাকলেও এবারের নগদ অর্থ প্রাপ্তিতে তা বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।

আমেরিকা চাইল্ড সাপোর্ট আইন বেশ কড়া। কারও চাইল্ড সাপোর্টের দেনা বকেয়া থাকলে তাদের বেলায় করোনা রিলিফের অর্থ সহযোগিতা পাওয়া জটিল হবে।

প্রতি ১৭ মিনিটে মৃত্যুর তালিকায় যোগ হচ্ছে একজন
নিউইয়র্ক নগরী করোনাভাইরাসের মৃত্যুপুরী হয়ে উঠেছে। গতকাল এক দিনে ৮৪ জন মারা গেছেন। মৃত মানুষের সংখ্যা দাঁড়াল ৪৫০। প্রতি ঘণ্টা নয়, প্রতি ১৭ মিনিটে মৃত্যুর তালিকায় একজনের নাম যোগ হচ্ছে। হাসপাতালগুলোয় ঠাঁই নেই। অ্যাম্বুলেন্সের ভীতিকর সাইরেন বাজিয়ে নতুন রোগীর আগমন ঘটছে হাসপাতালে। গত শুক্রবারে নিউইয়র্ক নগরীতে চারজন বাংলাদেশি মারা গেছেন। এ পর্যন্ত ১২ জন বাংলাদেশির মৃত্যুর সংবাদ এসেছে করোনাভাইরাসে। নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটির বেশ কিছু পরিচিত লোকজন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আছেন। এর মধ্যে একাধিক ডাক্তার, সংবাদমাধ্যমের লোক, পুলিশ এবং ব্যবসায়ী রয়েছেন। নিউইয়র্ক পুলিশের বিরাট অংশের শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে।

নিউইয়র্কের মেয়র ডি ব্লাজিও অভিযোগ করেছেন, বেশ কিছু ধর্মগোষ্ঠী প্রার্থনার জন্য সমাবেশ করতে গিয়ে সামাজিক দূরত্ব রক্ষার নির্দেশনা মানছে না। মেয়র বলেছেন, নির্দেশ অমান্যকারীদের ৫০০ ডলার করে জরিমানা করা হবে। নিউইয়র্কের নাজুক পরিস্থিতি মে মাস পর্যন্ত গড়াবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নগরীর কুইন্সে গতকাল রাত পর্যন্ত ৮ হাজার ৫২৯ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে, ব্রুকলিনে ৭ হাজার ৯১, ব্রঙ্গকসে ৪ হাজার ৮৮০ জন, ম্যানহাটনে ৪ হাজার ৬২৭ জন এবং স্টেটেন আইল্যান্ডে ১ হাজার ৫৩৪ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে।

নগরীর ম্যানহাটনের জ্যাকব জ্যাভিট সেন্টারে মার্কিন সেনাসদস্যরা দ্রুত এত হাজার বেডের হাসপাতাল নির্মাণ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। পেন্টাগন থেকে বলা হয়েছে, এমন মহামারিতে হাসপাতাল নির্মাণের অভিজ্ঞতাও তাদের নেই। ১০ ফুট বাই ১০ ফুট কোঠরি করে পর্দা ঝুলিয়ে এক হাজার বেডের হাসপাতাল নির্মাণ হচ্ছে। কাজ চলছে দিনরাত। এ হাসপাতালে নিউইয়র্ক নগরীর করোনাভাইরাস নয়—এমন রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হবে। অন্যান্য হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের জন্য জায়গা খালি করার জন্য এ হাসপাতালকে ব্যবহার করা হবে। এ ছাড়া নগরীর আরও তিনটি স্থানে হোটেল ও নার্সিং হোমকে অস্থায়ী হাসপাতালে রূপান্তরিত করে করোনা–প্রলয় মোকাবিলা করা প্রস্তুতি চলছে।