টরন্টো ইউনিভার্সিটি ছাত্র সংসদের প্রেসিডেন্ট মুনতাকা

মুনতাকা আহমেদ
মুনতাকা আহমেদ

কানাডার ইউনিভার্সিটি অব টরন্টো ছাত্র সংসদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মুনতাকা আহমেদ। বিশ্বজুড়ে চলমান করোনাভাইরাসে আতঙ্কগ্রস্ত বাংলাদেশিদের জন্য এই বৈরী সময়ে আনন্দের বার্তা নিয়ে এল মুনতাকা আহমেদের এই জয়।

টরন্টো ইউনিভার্সিটিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বদানকারী এই ছাত্র সংসদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাংলাদেশি কন্যার এই বিজয়কে আশা জাগানিয়া প্রাপ্তি হিসেবেই দেখছেন দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশিরা।

টরন্টো ইউনিভার্সিটির প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর প্রতিনিধিত্বকারী এই ছাত্র সংসদটির নেতৃত্ব নির্বাচন ছিল খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। গত ২১ থেকে ২৫ মার্চ অনলাইনে শিক্ষার্থীরা এই ভোট দিয়েছেন। আর ২৫ মার্চ বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা করা হয়। আগামী ২০২০-২১ মেয়াদে ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বদানের এই লড়াইয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ১৫৬ ভোট বেশি পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন মুনতাকা আহমেদ। তিনি পেয়েছেন ১ হাজার ৭১৭ ভোট।

মুনতাকা আহমেদ টরন্টো ইউনিভার্সিটির ইমিউনোলোজি ও হেলথ অ্যান্ড ডিজিজে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। আগে থেকেই নানা সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে শিক্ষার্থী ও মানুষের কল্যাণমুখী নানা উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর বাংলাদেশ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মার্কেটিং কো-ডিরেক্টর, মুসলিম স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (এমএসএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ইউনিভার্সিটি অব টরন্টো স্টুডেন্ট ইউনিয়নের এক্সিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করার সুযোগ হয়েছে তাঁর।

ঢাকার বনানীর ‘প্লে-পেন’ স্কুল থেকে মুনতাকার পড়াশোনার হাতেখড়ি; ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন উত্তরা দিল্লি পাবলিক স্কুলে। বাবার চাকরির সুবাদে পরিবারের সঙ্গে নানা দেশে ছুটতে হয়েছে তাঁকে। জেনেভা, আঙ্কারা, ওয়াশিংটন ডিসি আর অটোয়ার পর টরন্টোতে থিতু হয়েছেন ২০১৭ সালে।

কানাডায় বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বদানকারী এই বৃহৎ ছাত্রসংগঠনের নেতা নির্বাচিত হওয়ার অনুভূতি কেমন? এমন প্রশ্নে মুনতাকা প্রথম আলোকে বলেন, ‘খুবই খুশি। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি সব শিক্ষার্থী এবং বাংলাদেশিকে, যাঁরা এই বিজয়কে আন্তরিকভাবে উপভোগ করেছেন করোনাভাইরাসের এই ভয়াল সময়ে। আমি প্রেসিডেন্ট হতে চেয়েছি, নেতৃত্ব দেওয়ার মানসিকতা নিয়েই লড়েছি। ২০১৭ সালে পরিবার ছেড়ে প্রথম পড়তে আসি টরন্টোতে। শুরু থেকেই আমি পড়াশোনার পাশাপাশি চেয়েছি ইউনিভার্সিটি ও কমিউনিটির সেবামূলক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে। ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি, কোনো আয়োজনে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লেগে থাকতে অলসতা আসে না। ধীরে ধীরে সাহস পেয়েছি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার। প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশিরা আমাকে উৎসাহ জুগিয়েছেন, প্রেরণা পেয়েছি অনেক। একজন বাংলাদেশি হিসেবে এই সুযোগ পেয়ে আমি গর্বিত এবং নিষ্ঠার সঙ্গে আমার দায়িত্ব পালন করতে চাই।’

মুনতাকা আহমেদ টরন্টোয় বাংলাদেশ কনসাল জেনারেল নাঈম উদ্দিন আহমেদের বড় মেয়ে। মেয়ের এই সাফল্যে অভিব্যক্তি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই পৃথিবীতে সম্ভবত মা-বাবাই চান যে সন্তানের সাফল্য তার মা-বাবাকে ছাড়িয়ে যাক। অবশ্যই সন্তানের এই সাফল্য আমাদের জন্য ভীষণ আনন্দের। তবে মুনতাকার এই সাফল্যে তাঁর মা ডালিয়া পারভিনের নিবিড় তত্ত্বাবধান ও সাহায্যের বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই। মুনতাকার নেতৃত্ব দেওয়ার মানসিকতা ছোটবেলা থেকেই লক্ষ করেছি। উচ্চ মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে অর্পিত দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’