করোনা চরমে পৌঁছাতে পৌঁছাতে আমরা ভালো অবস্থায় থাকব: ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব যখন চরমে পৌঁছাবে, যুক্তরাষ্ট্র তখন খুব ভালো অবস্থায় থাকবে। এমন মন্তব্য করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ওই করোনার চিকিৎসায় ভেন্টিলেটরের মতো দরকারি জিনিস নাগালে থাকবে। চিকিৎসার সরঞ্জামে যুক্তরাষ্ট্র এমন ভরপুর হবে যে কিছু সামগ্রী রপ্তানিও করা যাবে। খবর বিবিসি অনলাইনের।

আজ মঙ্গলবার বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের কমপক্ষে ১০টি প্রতিষ্ঠান এখন চিকিৎসার সরঞ্জাম তৈরি করছে। এ থেকে কিছু বিদেশেও রপ্তানিও হবে।

ভাইরাসটি শ্বাসযন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ফুসফুসে আঘাত করে। ভেন্টিলেটর রোগীদের শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে সহায়তা করে থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৩ হাজার মানুষ। সবচেয়ে বিপর্যস্ত শহর নিউইয়র্ক সিটি। জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্যমতে, শুধু সেখানেই মারা গেছেন ৮০০ জন।

আক্রান্ত মানুষের সংখ্যার দিকে থেকে গত সপ্তাহে ইতালি ও চীনকে পেছনে ফেলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

ট্রাম্প যা বললেন
হোয়াইট হাউসে করোনাভাইরাস টাস্কফোর্সের ব্রিফিংয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘এখন আমাদের দেশের অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠান ভেন্টিলেটর বানাচ্ছে এবং আমরা এভাবে এগিয়ে যেতে বলেছি। কারণ, সত্যিকার অর্থে অন্য কোনো দেশ আর এটা পারবে না।

যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত মানুষের হার চরমে পৌঁছাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তা–ই যদি হয়, আক্রান্ত ব্যক্তিদের সবাই ভেন্টিলেটর পাবেন কি না, এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমি ধারণা করি, সে সময় আমরা খুবই ভালো অবস্থানে থাকব।’ সপ্তাহ দুয়েকের মাথায় সংক্রমণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১০ লাখেরও বেশি মানুষকে পরীক্ষা করা হয়েছে, যেকোনো দেশের চেয়ে এই সংখ্যা বেশি। অন্য কোনো দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধারেকাছেও নেই।

এ সময় ট্রাম্প একজন সাংবাদিকের ওপর খেপে যান। ওই সাংবাদিক বলেন, জনসংখ্যা বিবেচনায় দক্ষিণ কোরিয়ায় এই হার আরও বেশি। ট্রাম্প বলেন, ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তাঁর প্রশাসনের যে অগ্রগতি, এ জন্য তিনি অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য।

ব্রিফিংয়ে কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের গভর্নরদের বিষোদ্‌গার করেন ট্রাম্প। তাঁর অভিযোগ, এসব গভর্নর সংকটকালীন চিকিৎসাসামগ্রী মজুত করে রেখেছেন। এর মধ্যে হাসপাতাল থেকে চুরি যাওয়া মাস্ক রয়েছে। যদিও এই দাবির পক্ষে তিনি কোনো তথ্যপ্রমাণ দেখাতে পারেননি।

ট্রাম্প বলেন, ‘আগামী ৩০ দিন আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি বলেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলে এ সময় ১০ লাখেরও বেশি মার্কিন নাগরিক বেঁচে যাবেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ভাইরাসের বিরুদ্ধে বড় জয় পাব।’

সিএনএনের একজন প্রতিনিধির প্রশ্ন ছিল, সংক্রমণের ঝুঁকিকে পাত্তা না দিয়ে যে মন্তব্য তিনি করেছিলেন, তা ভুল ছিল কি না। জবাবে প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি যা বলেছেন, সবই সত্য। তিনি ওই সাংবাদিককে বলেন, ‘আমি আপনার চেয়ে অনেক বেশি আতঙ্ক ছড়াতে পারতাম, কিন্তু দেশের ভেতর আমি আতঙ্ক চাই না।’

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে যথাসময়ে উদ্যোগ নেননি। এ বছরের পরের দিকে যে নির্বাচন হওয়ার কথা। ট্রাম্প এতে অংশ নেবেন।

ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেন, ‘অর্থনীতি আমার কাছে এখন দুই নম্বরে, আমরা বহু জীবন বাঁচাব।’

যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা কী
দেশজুড়ে বেশির ভাগ অঙ্গরাজ্য নির্দেশনা বাস্তবায়ন করছেন। রাজ্যগুলো নাগরিকদের অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ, কাজে যাওয়া, রেস্তোরাঁ বা বারে যাওয়া বন্ধ রাখা এবং ১০ জনের বেশি মানুষের সমাগম বন্ধ রাখার যে নির্দেশনা, তা অবশ্যই মেনে চলতে হবে বলে জানিয়েছে।

তবে আরও বিপর্যস্ত অঙ্গরাজ্যগুলোয় নিষেধাজ্ঞার তালিকা দীর্ঘ।

শনিবার নিউইয়র্ক, নিউ জার্সি ও কানেটিকাটের বাসিন্দাদের ওপর আগামী ১৪ দিন ভ্রমণ–নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। নিউইয়র্কের অপ্রয়োজনীয় জনসমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। শুধু এই শহরেই ৩৩ হাজার আক্রান্ত মানুষ পাওয়া গেছে। এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে পুলিশ ২৫০ থেকে ৫০০ ডলার পর্যন্ত জরিমানা করছে।

ক্যালিফোর্নিয়ায় এখনো ‘বাড়িতে থাকুন’ নির্দেশ বহাল আছে।

চিকিৎসাসামগ্রীর সংকট
গত রোববার ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, কোনো কোনো অঙ্গরাজ্যের হাসপাতাল ভেন্টিলেটর, মাস্ক ও জরুরি চিকিৎসাসামগ্রী মজুত করছে। তিনি বলেন, ‘মজুতদারির সমস্যা আছে আমাদের—মজুতের মধ্যে ভেন্টিলেটরও রয়েছে। হাসপাতালগুলোর এগুলো ছেড়ে দেওয়া উচিত। কোথাও কোথাও কারও অনেক আছে। তাদের চিকিৎসাসামগ্রী ছাড়তে হবে।’ ট্রাম্প বলেন, সপ্তাহখানেক বা দুয়েক পরে সমস্যায় পড়বে—এই আশঙ্কা থেকে মজুত করলেও ছেড়ে দেওয়া উচিত।

চাহিদা বাড়ায় এখন স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে ভেন্টিলেটরের সংকট বড় হয়ে উঠেছে। বেশ কটি অঙ্গরাজ্য সতর্ক করে বলেছে, তাদের হাতে কোভিড-১৯–এ ভোগা রোগীদের জন্য যথেষ্ট ভেন্টিলেটর থাকবে না।