করোনায় আমেরিকায় ৩০ বাংলাদেশির মৃত্যু

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হওয়া প্রবাসী বাংলাদেশি মো. ইব্রাহীম, আনোয়ারুল আলম চৌধুরী, খালেদ হাসমত ও স্বপন হাই
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হওয়া প্রবাসী বাংলাদেশি মো. ইব্রাহীম, আনোয়ারুল আলম চৌধুরী, খালেদ হাসমত ও স্বপন হাই

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৩০ মার্চ আমেরিকায় আরও সাতজন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে আমেরিকায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ৩০ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হলো।

৩০ মার্চ নিউইয়র্কে ৫ জন, নিউজার্সিতে একজন ও মিশিগানে একজন প্রবাসী বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

নিউইয়র্কে ব্যাপকভাবে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। নগরের বিভিন্ন এলাকায় বসবাসরত প্রায় প্রতিটি পরিবারের কোনো স্বজন বা পরিচিত মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। আক্রান্ত ও মৃত্যু সংখ্যা নিয়ে সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রচারে অনেকেই অজানা আতঙ্কে ভুগছেন। অনেকেই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঘরে ফিরছেন বা ঘরে কোনো চিকিৎসা ছাড়াই সুস্থ হয়ে উঠেছেন।


৩০ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কুইন্সে ওজনপার্কের বাসিন্দা আনোয়ারুল আলম চৌধুরী (৭৫), জ্যামাইকার হিলসাইডে বসবাসরত নিশাত চৌধুরী (৩০), ব্রুকলিনের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা মো. ইব্রাহীম, জ্যামাইকার বাসিন্দা খালেদ হাসমত (৬০) ও আলোকচিত্রী সাংবাদিক স্বপন হাই নিউইয়র্কে মারা গেছেন। নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যে বসবাসরত আলী আকবর নামের এক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে।

এ ছাড়া মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ড্রেটয়েট সিটির বাসিন্দা, গোলাপগঞ্জ সমিতির সহসভাপতি শেরুজ্জামান কোরেশী জাহানের বাবা শামসুল হুদা চৌধুরীর (৮০) হেনরি ফ্রড হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে। তাঁর বাড়ি সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ী পূর্বপাড়া গ্রামে। মিশিগান থেকে প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা প্রতিনিধি ফারজানা চৌধুরী এ মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে ২৯ মার্চ রাত পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নিউইয়র্কে আটজন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়। ২৮ মার্চ মৃত্যু হয় কায়কোবাদ, শফিকুর রহমান মজুমদার, আজিজুর রহমান, মির্জা হুদা, বিজিত কুমার সাহা, মো. শিপন হোসাইন, জায়েদ আলম ও মুতাব্বির চৌধুরী ইসমত।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একের পর এক প্রবাসী বাংলাদেশির মৃত্যুর ঘটনায় কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শোকে স্তব্ধ কমিউনিটিতে অনেক প্রবাসীর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বাংলা সংবাদমাধ্যমের ইলিয়াস খসরু, ফরিদ আলম ছাড়াও চিকিৎসক আতাউল ওসমানী, সাবেক ছাত্রনেতা শাহাব উদ্দিন, কমিউনিটি নেতা ফরহাদ আহমেদ চৌধুরীসহ অনেকের জন্য স্বজনেরা দোয়া প্রার্থনা করেছেন।

হাসপাতালে নেওয়ার পর অনেকেই করোনায় আক্রান্ত কি না, তা জানতেও পারছেন না। বাংলাদেশ সোসাইটির দুবারের সভাপতি কামাল আহমদ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। তাঁর করোনাভাইরাস নেগেটিভ ধরা পড়েছে বলে জানিয়েছেন ওই সংগঠনের সেক্রেটারি রুহুল আমিন।

সাংবাদিক ফরিদ আলমের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ৩০ মার্চ তাঁর অবস্থা কিছুটা ভালোর দিকে। অক্সিজেনের মাধ্যমে নিশ্বাস নিলেও কথা বলতে পারছেন এবং আগের অবস্থা থেকে ভালো বোধ করছেন বলে জানানো হয়েছে।

বাসদ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহাব উদ্দিনের অবস্থাও স্থিতিশীল। তাঁর কৃত্রিম অক্সিজেন লাগানো আছে বলে স্বজনেরা জানিয়েছেন। তিনি রোগমুক্তির জন্য সবাইকে দোয়া করার আবেদন জানিয়েছেন।

আলোকচিত্রী সাংবাদিক স্বপন হাইয়ের জানাজা ১ এপ্রিল হবে। পরিবারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সোসাইটির সহসভাপতি আবদুর রহিম হাওলাদার বিষয়টি তদারক করছেন। জানা গেছে, হাসপাতাল থেকে মরদেহ নিউজার্সিতে সোসাইটির কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানেই তাঁকে জানাজা শেষে দাফন করা হবে।

সাংবাদিক স্বপন হাইয়ের পরিবার বাংলাদেশে। তিনি কিডনি রোগের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ছিলেন।

আমেরিকায় এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৩ হাজার ১৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৬৪ হাজার ২৫৩ জন। নিউইয়র্ক রাজ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত করোনায় নিউইয়র্কে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৬৭ হাজার ৩২৫। এতে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৩৪২ জনের।