নিউইয়র্ক পুলিশ যা পারেনি, তাই করল করোনা

করোনাভাইরাসের কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নীতি চালু হওয়ায় নিউইয়র্কে মাফিয়াদের কার্যক্রম অভাবনীয়ভাবে কমে গেছে। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাসের কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নীতি চালু হওয়ায় নিউইয়র্কে মাফিয়াদের কার্যক্রম অভাবনীয়ভাবে কমে গেছে। ছবি: রয়টার্স

নিউইয়র্কের মাফিয়া নিয়ন্ত্রণে পুলিশ প্রশাসন ব্যর্থ হলেও ব্যাপক সাফল্য দেখাচ্ছে নতুন করোনাভাইরাস। দশকের পর দশক ধরে নিউইয়র্ক নগর ও অঙ্গরাজ্যে অবৈধ জুয়ার আসর, মাদকদ্রব্য বেচাকেনা এবং এগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, অপহরণকারী ও চাঁদাবাজ গোষ্ঠীগুলো নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেয়েছে প্রশাসন। কিন্তু এখন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে মাফিয়াদের এই কর্মকাণ্ড যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে হরেদরে সব খেলা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে, বন্ধ হয়ে গেছে কোটি ডলারের অবৈধ জুয়াও। এটি সংশ্লিষ্ট মাফিয়াদের ওপর এক ‘ঐতিহাসিক’ আঘাত।

অবৈধ জুয়া ও নিউইয়র্কের মাফিয়া সাম্রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউইয়র্ক পোস্টকে বলেন, ‘এমন কোনো সময় যায়নি, যখন এই মাফিয়ারা জুয়ার মাধ্যমে পয়সা হাতিয়ে নেয়নি। এটা ঐতিহাসিক এক ঘটনা।’

সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নীতি চালু হওয়ায় জুয়ার ক্ষেত্রগুলো বিনা ঘোষণাতেই ফাঁকা হয়ে গেছে। ভাইরাসের প্রকোপের শুরুর ধাপে যাও কিছুটা ভিড় ছিল, এখন সেই স্থানগুলো একেবারে খাঁ খাঁ করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এনবিএ, এমএলবি, মার্চ ম্যাডনেস, এনএইচএল, এমএলএস, ঘোড়দৌড়, গলফসহ সব ধরনের খেলার ইভেন্ট বন্ধ হওয়ার বিষয়টি। ভাইরাসের প্রকোপ শেষ হওয়ার আগে এসব ইভেন্ট চালুর কোনো সম্ভাবনা নেই। এরপরও কিছু গোষ্ঠী আফ্রিকান ক্রিকেট ও অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় ফুটবল ইভেন্টকে কেন্দ্র করে জুয়ার বোর্ডকে সচল রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু সে চেষ্টাও ব্যর্থ হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক পোস্ট জানায়, বহু মানুষের জীবিকা অবৈধ এ জুয়ার ওপর নির্ভরশীল। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তারা ভীষণ শঙ্কায় পড়েছে। মহামারি থেকে মুক্ত হওয়ার আগে এ শঙ্কা কাটবার নয়।

শুধু জুয়া কেন, রেস্তোরাঁ, বার, স্ট্রিপ ক্লাব, হোটেল ও নির্মাণ প্রকল্পগুলো ঘিরে গড়ে ওঠা মাফিয়ারাও একেবারে শান্ত। রেস্তোরাঁগুলোয় বসে খাবার খাওয়া নিষেধ। এই রেস্তোরাঁগুলোই মাদকদ্রব্য বিকিকিনির এক বড় ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শুধু অনলাইনে খাবারের অর্ডার ও তার ডেলিভারি দেওয়ার অনুমোদন রয়েছে অধিকাংশ রেস্তোরাঁর। ফলে এগুলোকে কেন্দ্র করে চলা বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ড এই সময়ে চালু থাকার উপায় নেই। একইভাবে অপ্রয়োজনীয় সব নির্মাণ প্রকল্প সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো। এতে এই খাত-সংশ্লিষ্ট মাফিয়া গোষ্ঠীরও নিজেদের গুটিয়ে নেওয়া ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই।

নির্মাণ খাতের সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত। নির্মাণসামগ্রীর সরবরাহ, শ্রমিক নিয়োগ, নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানসহ বহু শাখা রয়েছে এর। অধিকাংশ নির্মাণ প্রকল্প স্থগিত হওয়ায় এ থেকে অবৈধ আয় করা অনেক গোষ্ঠী এখন আক্ষরিক অর্থেই নিষ্ক্রিয়।

নিউইয়র্কে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সংযোগের বিষয়টি ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত। এই দুর্যোগে এই অংশটিও উল্লেখযোগ্যভাবে সংকুচিত হয়েছে। ফলে, একে কেন্দ্র করে চলা বিভিন্ন অবৈধ কার্যক্রমেরও রাশ টেনে ধরা গেছে।

না, মাফিয়াদের সব কর্মকাণ্ড যে বন্ধ হয়ে গেছে, এমন নয়। মাদকদ্রব্যের বেচাকেনা এখনো চলছে। তবে আগের মতো নয়। মাদকের ব্যবসার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে নিত্যসংঘর্ষের বিষয়টি তো রীতিমতো উধাও।

নিউইয়র্কে মাফিয়াদের কর্মকাণ্ড ও তাদের মধ্যকার সংঘর্ষ সামাল দিতেই নিউইয়র্ক পুলিশকে ছুটে বেড়াতে হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যেই নানা হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। কিন্তু দশকের পর দশক ধরে মাফিয়া নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনিক কোনো উদ্যোগই সাফল্য পায়নি। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এক অভাবনীয় কাজই করেছে।