করোনার চিকিৎসকেরা যা দেখছেন

ব্যস্ত সময় কাটাতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। ছবি: এএফপি
ব্যস্ত সময় কাটাতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের জনস হপকিনস হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এক সপ্তাহ ধরে ব্যস্ত সময় কাটাতে হচ্ছে চিকিৎসক ড্যানিয়েল ব্রেনারকে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শিকার ১২ থেকের ১৩ জন রোগী দেখেছেন তিনি। মেরিল্যান্ড, নিউইয়র্ক, লুইজিয়ানাসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলে করোনাভাইরাসের রোগী বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসকদের ব্যস্ততা বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে চিকিৎসকেরা যা দেখছেন, তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন ব্রেনার।

মেরিল্যান্ডে এ পর্যন্ত ২৪ জন মারা গেছে এবং প্রায় ২ হাজার সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। হাসপাতালের চিকিৎসা সক্ষমতা এখনো বাড়েনি। তবে তা শিগগিরই বাড়তে পারে। ব্রেনার বলেন, শত শত করোনা সংক্রমণের ঘটনা ঘটছে। এ পরিস্থিতিতে কার হাসপাতালে ভর্তি হওয়া উচিত আর কার বাড়িতে থাকা উচিত, তা নির্ণয় করা কঠিন। এ ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব জরুরি। তবে যৌক্তিক পছন্দে সহায়তা করার জন্য তথ্যের অভাব পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে। বয়স্ক লোককে রাখতে হবে, না যাদের শারীরিক অবস্থা খারাপ, তাদের নিতে হবে? চিকিৎসকেরা সর্বশেষ মেডিকেল তথ্য জেনে আরও এ ক্ষেত্রে নিজেকে হালনাগাদ রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।

ব্রেনার বলেন, একেক চিকিৎসকের দৃষ্টিভঙ্গি একেক রকম। রোগের ইতিহাস মাত্র দুই মাসের বলে সারা দেশে কোনো ঐকমত্য নেই বা সঠিক মেডিকেল কমিউনিটি প্রদত্ত পদ্ধতি নেই। চিকিৎসকেরা কাজ করতে করতে এসব শিখছেন।

করোনাভাইরাস রোগীদের জন্য সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য জটিলতা হলো অ্যাকিউট রেসপিটারি ডিসট্রেস সিনড্রোম (এআরডিএস), যা হলে ফুসফুস শক্ত হয়ে ফুলে যায় এবং শরীর অক্সিজেনের জন্য ক্ষুধার্ত হয়ে ওঠে।

চিকিৎসকেরা রোগীদের পেটের ওপর ‘শায়িত’ অবস্থানে রেখেছেন এবং যা ফুসফুসের পেছনে তুলনামূলকভাবে বেশি স্বাস্থ্যকর অঞ্চলে তরল তৈরি হতে বাধা দিতে সহায়তা করে বলে জানিয়েছেন ব্রেনার।

কৌশলটি সাধারণত অপরিণত শিশুদের ভেন্টিলেশনে ব্যবহৃত পদ্ধতির মতো। কিন্তু বয়স্কদের ক্ষেত্রে এটি শ্রমসাধ্য এবং শ্বাসনলটি যাতে স্থানচ্যুত না হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। কোভিড-১০ রোগীদের ভেন্টিলেটরে বায়ুর চাপ বেশি থাকতে হয়।

নিউইয়র্কের মতো অঞ্চলে হাসপাতালগুলোয় ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের ঘাটতি রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য অঙ্গরাজ্যগুলোয় এখনো ততটা ঘাটতি পড়েনি। তবে ভাইরাসটি চিকিৎসকদের কাজের ধরন বদলে দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে শ্বাস সহায়ক মেশিন কন্টিনিউয়াস পজিটিভ এয়ারওয়ে প্রেশার (সিপিএপিএস) ও বাইলেভেল পজিটিভ এয়ারওয়ে প্রেশার (বিআইপিএপিএস) ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কায় ব্যবহার করা হচ্ছে না। রোগীর মুখ বা নাক থেকে চাপে ভাইরাস ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে তাই ভেন্টিলেটর আদর্শ। এতে রোগীর মুখে টিউব ব্যবহার করা হয়। বিআইপিএপি মূলত হৃদ্‌রোগীদের ক্ষেত্রে ইমার্জেন্সি রুমে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এসব রোগীর ক্ষেত্রেও এখন ভেন্টিলেটর ব্যবহার করতে হচ্ছে। এটি আরও আক্রমণাত্মক প্রক্রিয়া যার জন্য তাদের অজ্ঞান করা এবং অস্থায়ীভাবে শরীরকে পঙ্গু করতে ওষুধ দেওয়া দরকার পড়ে।

ব্রেনার বলেন, করোনাভাইরাসের রোগী ছাড়াও আরও অনেক জটিল রোগী হাসপাতালে আসে। এর মধ্যে হৃদ্‌রোগী, অ্যাক্সিডেন্টের রোগীর মতো রোগীও থাকে। ভাইরাসের রোগী ছাড়াও এ ধরনের রোগীর চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে। যদি কোনো রোগী হার্ট অ্যাটাক করে এবং তার কাশি থাকে, তবে তাকে সন্দেহভাজন কোভিড-১৯ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদি অজ্ঞান থাকে, সে ক্ষেত্রেও করোনা সংক্রমিত হিসেবে ধরা হয়। এর অর্থ হলো একজন হৃদ্‌রোগীর যখন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়, তখন প্রতি সেকেন্ডে মূল্যবান। তাকে প্রতিরক্ষা গিয়ার দেওয়া না দেওয়ার বিষয়টি জীবন ও মৃত্যুর পার্থক্যের কারণ হতে পারে।

ব্রেনার বলেন, ‘আমরা মানুষকে সহায়তা করতে চাই। আমাদের প্রবৃত্তি থাকে রোগী সমস্যায় পড়েছে, আমাকে এখনই যেতে হবে। প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম নিয়ে কাজ করার মতো সময় আমার নেই। তবে আমরা সবাইকে বলি এবং নিজেকেও মনে করিয়ে দিই, আমরা সংক্রমণের শিকার হলে কাউকেই আর সাহায্য করতে পারব না।’

এ ক্ষেত্রে চিকিত্সাকর্মীদের মনোবল অনেক বেশি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে তারা অনেক মানুষের সাহায্য পাচ্ছেন। হাসপাতালের কিছু কর্মী সংক্রমণের শিকার হলেও তাদের কারও অবস্থা আশঙ্কাজনক নয়। স্থানীয়রা খাবারসহ নানাভাবে তাদের সাহায্য করছেন। অনেক সময় মনে হয়, কিছুটা মুহূর্ত ও একটা স্যান্ডউইচ একজন ভালো চিকিৎসক তৈরি করতে পারে।