করোনা সব শূন্য করে নিয়ে গেল তাঁকে

কনরাড বুচানান। ছবি: কনরাডের ফেসবুক থেকে নেওয়া
কনরাড বুচানান। ছবি: কনরাডের ফেসবুক থেকে নেওয়া

কিছু বুঝে ওঠার আগেই সব শেষ। এমনই করাল ছোবল করোনার। স্বামীর মৃত্যুর সময় শেষ বিদায়টুকু পর্যন্ত জানাতে পারেননি নিকোল বুচানান। সাজানো-গোছানো ছিমছাম সংসার ছিল নিকোলের। স্বামী কনরাড বুচানান একজন ডিস্ক জকি (ডিজে)। কোনো শারীরিক সমস্যা ছিল না ৩৯ বছরের কনরাডের। অবসরে মেয়ের সঙ্গে ব্যালে নাচতেন। স্ত্রীর সঙ্গে গল্প করে কাটাতেন। আলগোছে করোনা এসে হানা দিল এই মার্কিন পরিবারে। তিন সপ্তাহের মধ্যে ঘরটাকে শূন্য করে নিয়ে গেল কনরাডকে।

প্রিয় এই মানুষ আর ফিরে আসবেন না—এ যেন ভাবতেই পারছেন না নিকোল।

গত ১৪ মার্চ কনরাড একটু অসুস্থ হন। নিকোল করোনা টেস্টের জন্য তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা করতে রাজি হয়নি। বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে ঝগড়াও করেন নিকোল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, যেহেতু কনরাডের অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা নেই, বয়স কম, তাই তাঁর কোনো ভয় নেই।

গত ২২ মার্চ কনরাডের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেল। তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান নিকোল। জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। নিকোলকে বাইরে থাকতে বলা হয়। পার্কিংয়ে গাড়ি নিয়ে বসে থাকেন নিকোল। অপেক্ষা করতে থাকেন, কখন আবার দেখতে পাবেন কনরাডকে। তবে আর তাঁকে দেখতে পাননি নিকোল।

সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিকোল বলেন, ‘পার্কিং থেকে একসময় আমি হাসপাতালের দরজার কাছে যাই। হাসপাতালটি লকডাউন করা। আমাকে ঢুকতে দেয়নি। কাউকেই ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। আমি শেষবারের মতো তাঁকে ভালোবাসি বলার সুযোগটুকু পাইনি।’

নিকোল বলেন, ‘আমি সবাইকে বলতে চাই এটি কতটা ভয়াবহ। সবার ধারণা, করোনায় কেবল অসুস্থ বা বয়স্ক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁরা মারা যাচ্ছেন। আমি জানি, এটি ঠিক নয়। আমার স্বামীর ক্ষেত্রে যা হয়েছে, তা ভয়ংকর এবং আমাদের জীবন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।’

নিকোলেরও করোনা পজিটিভ এসেছে। তাঁর লক্ষণগুলো তেমন গুরুতর কিছু নয়। তবে স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি চলে গেছে তাঁর।

নিকোল ও কনরাডের মেয়ে স্কাইয়েরও পরীক্ষা হয়েছে। এখনো ফলাফল আসেনি। বাবাকে হারিয়ে বিপর্যস্ত সে। স্কাই জানায়, বাবার সঙ্গে সব গল্প করত সে। বাবাই তাকে স্কুলে, নাচের ক্লাসে নিয়ে যেতেন। বাবা ছিলেন তার সবকিছু। বাবার স্মৃতি আঁকড়ে কেঁদেই যাচ্ছে স্কাই।

নিজেদের জীবনে এই ঘটনা প্রকাশ্যে এনেছেন নিকোল শুধু একটি কারণে। তিনি চান, মানুষ সতর্ক হোক। কেবল বয়স্ক ও আক্রান্ত মানুষ মারা যাচ্ছে, এমনটা যেন না ভাবে। সবাই যেন বাসায় থাকে, যাতে আর কাউকে প্রিয় মানুষকে হারাতে না হয়।