নিউইয়র্কে করোনায় আরও ৫ প্রবাসীর মৃত্যু

নিউইয়র্কে মারা যাওয়া প্রবাসী মোস্তাফিজুর রহমান ও আরিফ তালুকদার।
নিউইয়র্কে মারা যাওয়া প্রবাসী মোস্তাফিজুর রহমান ও আরিফ তালুকদার।

নিউইয়র্কে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। ২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার করোনায় মৃত্যু হয়েছে আরও ৫ জন প্রবাসীর। এর মধ্যে দুজনের নাম জানা গেছে। এরা হলেন মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ও আরিফ তালুকদার।

এ নিয়ে আমেরিকায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৫৬ জন বাংলাদেশি। প্রতিদিনই মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। আগামী দুই সপ্তাহ পরিস্থিতি আরও নাজুক হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ এখন কর্মহীন। এক সপ্তাহে আমেরিকায় ৬৬ লাখ মানুষ কর্মহীন ভাতার জন্য আবেদন করেছে। শুধু নিউইয়র্কে বেকার ভাতার জন্য আবেদন করেছেন প্রায় চার লাখ লোক। নিউইয়র্ক ও নিউজার্সির বাসিন্দারা বলছেন, রাজ্য সরকারের ওয়েবসাইটে আবেদন করার কথা বলা হলেও, বিষয়টি খুব সহজ নয়। এত আবেদনের চাপ নিতে পারছে না সাইটগুলো। বারবার চেষ্টা করে অনেকেই বিফল হচ্ছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোন করেও কোনো জবাব পাচ্ছেন না। বারবার চেষ্টা করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে নানা মহল থেকে। এসব আবেদন সামাল কীভাবে দেওয়া হবে, কেউ জানেন না।

বৃহস্পতিবার জানানো হয়েছে, নাগরিক সুবিধার অর্থ দুই সপ্তাহের মধ্যেই ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হবে। যাদের ২০১৯ বা ২০১৮ সালের ট্যাক্স রিটার্নের সঙ্গে ব্যাংকের তথ্য দেওয়া নেই, তাদের ব্যাংকের তথ্য দেওয়ার জন্য আইআরএস তাদের ওয়েবসাইটে নির্দেশনা দিচ্ছে। যারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বা স্বেচ্ছাকর্মী, তারা করোনা দুর্যোগের জন্য ‘এসবিএ’ অনুদান বা ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। নিজে বা কারও সহযোগিতা নিয়ে এসব অনলাইন আবেদন দ্রুত করে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, কবে আবার লোকজন কাজে ফিরবে-কেউ কিছু বলতে পারছে না।

এর মধ্যে নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো বৃহস্পতিবার বলেছেন, তাঁদের হাতে আর মাত্র ছয় দিনের ভেন্টিলেশন দেওয়ার সরঞ্জাম মজুদ আছে। ফেডারেল সরকার থেকে দ্রুত চিকিৎসা সরঞ্জামের ব্যবস্থা না করলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে।

এর মধ্যে নিউইয়র্ক নগরীতে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের জন্য রোগীকে প্যারামেডিকরা ‘অন দা স্পট’ ফেরাতে না পারলে হাসপাতালে না আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনো হাসপাতালেই নিয়মিত রোগীদের জন্য কোনো ঠাঁই নেই। আগে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা হার্ট অ্যাটাকের রোগীদের হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনার পর ডাক্তাররা শেষ চেষ্টা করতেন রোগীকে বাঁচানোর জন্য। বর্তমান পরিস্থিতিতে হাসপাতালে স্থান না থাকার জন্য এ পদক্ষেপ নেওয়ায় নাগরিকদের মধ্যে আরও উৎকণ্ঠা বেড়েছে।

এদিকে সাংবাদিক ফরিদ আলম ও ইলিয়াস খসরুসহ বেশ কয়েকজনের সুস্থ হয়ে ওঠার সংবাদে কমিউনিটির লোকজন আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। এনওয়াইপিডিতে কর্মরত একাধিক বাংলাদেশি করোনা মুক্ত হয়েছেন বা হচ্ছেন।

এর মধ্যে নিউইয়র্ক থেকে মিশিগানে করোনাভাইরাস ঠেকাতে লকডাউনে কড়াকড়ি করা হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধি ফারজানা চৌধুরী জানিয়েছেন, হ্যামটামিক ও ডেট্রয়েট নগরীতে প্রবাসীরা উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। রাজ্যের গভর্নর ঘোষণা দিয়েছেন, লকডাউনের নীতিমালা ভাঙলে এক হাজার ডলার জরিমানা গুনতে হবে।

করোনায় নিউইয়র্কে আক্রান্ত ব্যক্তি ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। ছবি: রয়টার্স
করোনায় নিউইয়র্কে আক্রান্ত ব্যক্তি ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। ছবি: রয়টার্স

নিউইয়র্কে ২৪ ঘণ্টায় ৪৩২ জনের মৃত্যু ঘটেছে। নগরীর ঘনবসতি এলাকাগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। বাংলাদেশি আমেরিকান চিকিৎসক রায়হান ফারুকী বলেছেন, ‘আমাদের পরিবারগুলো এখনো পুরো কোরেন্টাইন ব্যবস্থা মেনে চলছেন না। অনেকে নিজেই জানেন না, তিনি ভাইরাস বহন করছেন। অনেকের শরীরে এ ভাইরাসের লক্ষণ তীব্র নয়। কিন্তু তাঁর মাধ্যমে অন্যদের শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশিদের মধ্যে বেশি ডায়াবেটিক রোগী। ডায়াবেটিক ও অ্যাজমা রোগীদের বেশি করে কাবু করছে ভাইরাসটি।’

অপর বাংলাদেশি চিকিৎসক নাহিদ খান জানিয়েছেন, সর্বশেষ পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে করোনাভাইরাসের নানা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে গেলেও রোগীদের মধ্যে ৩০ শতাংশের ফলাফল নেগেটিভ আসছে। ফলে নেগেটিভ আসলেই করোনামুক্ত বলা যাবে না। এ বাহকের কাছ থেকে অন্যদের শরীরে তা ছড়িয়ে পড়ছে অজান্তে। ফলে এ সময়ে সর্বক্ষেত্রে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখার জন্য তিনি পরামর্শ দিয়েছেন।

ডাক্তার রায়হান সম্ভব হলে প্রত্যেকের ঘরে থার্মোমিটার রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। এতে শরীরের জ্বর মাপা সম্ভব হবে। এ ছাড়া 'পালস অক্সিমিটার নামের একটি ছোট যন্ত্র রাখতে হবে, যা সহজলভ্য। অক্সিমিটার দিয়ে সহজেই রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা পরীক্ষা করা যাবে। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ৯৪, ৯৩ বা তার নিচে নামলেই রোগীকে হাসপাতালে দ্রুত যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। পরীক্ষিত না হলেও অক্সিমিটারের 'অ্যাপস'ও প্রয়োজনে ব্যবহার করা যেতে পারে বেল তিনি পরামর্শ দিয়েছেন।

এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে মারা গেছে ৬ হাজার ৮৮ জন। আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৪৫ হাজার ১৮৪ জন।