করোনা দুর্যোগ: পরিবারকে নিয়ে ভাবুন

ছবি: রয়টার্স
ছবি: রয়টার্স

‘পথের শেষ কোথায়,
শেষ কোথায়,
কী আছে শেষে!’

কেউ জানে না কি আছে শেষে! কেউ না! যত দিন যাচ্ছে পরিস্থিতি খারাপ থেকে খারাপের দিকে যাচ্ছে। মনে হচ্ছিল, এই বুঝি আরেক সপ্তাহ, অথবা দুই সপ্তাহ, তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু, দিন দিন সবকিছু আরও ভয়াবহ হচ্ছে।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষে প্রথম করোনাভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে। এর প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করেছে। বর্তমানে বিশ্বে করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১২ লাখের বেশি। বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ মানুষ এখন লকডাউনে আছে। দিনের পর দিন গৃহবন্দী। কেউ বাইরে যাচ্ছে না। কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান নেই। অলিম্পিক গেমসের মতো বড় ইভেন্ট বাতিল হয়ে গেল। এখন সবার মনে একটাই প্রশ্ন, কবে এর শেষ হবে?

অল্প কথায় এই প্রশ্নের উত্তর হলো, কেউ নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছে না। এটা সম্পূর্ণ নতুন একটি ভাইরাস, যার চরিত্র সম্পর্কে কারও কোনো ধারণা নেই। অতীতে যেকোনো মহামারি ১২ থেকে ৩৬ মাস স্থায়ী হয়েছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি কত দিন স্থায়ী হতে পারে, সেটা অনেকখানি নির্ভর করছে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার ওপর।

২০০৯ সালে সোয়াইন ফ্লু সংক্রমণের কথা মনে আছে? ওই বছর জুনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মহামারি হিসেবে ঘোষণা করেছিল। মধ্য সেপ্টেম্বরে চারটি ভ্যাকসিন এল বাজারে। ডিসেম্বরে সবার জন্য সহজলভ্য হয়ে গেল ভ্যাকসিনগুলি। পরের বছর অর্থাৎ ২০১০ সালে সোয়াইন ফ্লুর প্রকোপ হ্রাস পেল।

নতুন এই পরিস্থিতির সঙ্গের অতীতের কোনো মহামারির তুলনা করা যাবে না। কারণ এই ভাইরাস সংক্রমণের ধরন সম্পূর্ণ আলাদা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাসটির ধরন সম্পর্কে ধারণা লাভ করবেন বিজ্ঞানিরা। ২০২০ সালের পুরো সময় জুড়ে আমাদের লড়তে হতে পারে এই ভাইরাসের সঙ্গে। ২০২১ সালের দিকে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পরে হয়তো পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে। সুখবর হলো, বিশ্বজুড়ে নতুন ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, চীন কেউ বসে নেই।

কেউ কেউ মনে করছেন আগামী সামারের মধ্যে কোভিড ১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ বন্ধ হবে। তাদের ধারণা গরম ও উষ্ণ আবহাওয়ায় এই ভাইরাসটি টিকতে পারবে না। তবে এ বিষয়ে গবেষণায় কোনো উল্লেখযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি। সামারে অবস্থার উন্নতি হলেও আবার ফলে কিংবা উইন্টারে ফিরে আসতে পারে করোনা বা কোভিড ১৯। আবার এই ভাইরাস যেহেতু বৈশ্বিক সেহেতু পৃথিবীর কোথাও না কোথাও এর অস্তিত্ব থাকবে। কারণ সামার বা গ্রীষ্মকাল বিশ্বের সর্বত্র এক সময় হয় না।

সবাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে বলে মনে করছেন আমেরিকার চিকিৎসকেরা। যার ইমিউনিটি শক্তিশালী সে এই ভাইরাসের মোকাবিলা করবে। বাকিরা পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে। যেহেতু সব মানুষ এক সঙ্গে অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব না, তাই সোশ্যাল আইসোলেশনের ব্যবস্থা। কারণ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে স্কুল খুলবে, অফিস আদালতে কাজ শুরু হবে, শপিং মলে মানুষ যাবে—তখন আবার তাদের মধ্যে ভাইরাস ছড়াবে। এইভাবে সবাই আক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত ভাইরাসটি টিকে থাকবে। তবে বাড়িতে থাকা ও বেশি মানুষের সঙ্গে না মেশা ভাইরাসটির সংক্রমণ মন্থর করে দেয়। আবার অন্য দিকেও কথা আছে। ভাইরাসটি যত সংক্রমিত হবে, বেশি মানুষ আক্রান্ত হবে এবং তাদের শরীরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। যেটা স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ সুইডেন করছে।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্যকর জীবন ব্যবস্থা এখন সবচেয়ে জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যেটা দীর্ঘ মেয়াদে কাজে দেবে। পর্যাপ্ত ঘুম, সুষম খাবার, গরম পানি পান, হাত পরিষ্কার রাখা, ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খাওয়া, ব্যায়াম করা ইত্যাদি বাড়িয়ে দিতে হবে। নাম-যশ-খ্যাতির মতো অযথা আলেয়ার পেছনে না ছুটে নিজের ও পরিবারের উন্নতি করা যায় সেটা ভাবতে হবে।