চীন সারা বিশ্বের এ ক্ষয়ক্ষতির জন্য দায়ী: গ্রাহাম

মার্কিন সিনেটের বিচার বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান লিন্ডসে গ্রাহাম। ছবি: এএফপি
মার্কিন সিনেটের বিচার বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান লিন্ডসে গ্রাহাম। ছবি: এএফপি

মার্কিন সিনেটের প্রভাবশালী সদস্য, বিচার বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান লিন্ডসে গ্রাহাম করোনাভাইরাস প্রার্দুভাবের জন্য চীনের কাঁচাবাজারে বাদুর আর বানর বিক্রিকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, চীন সারা বিশ্বের এ ক্ষয়ক্ষতির জন্য দায়ী। 

এদিকে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর ওপর হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের কার্যকারিতা নিয়ে খোদ হোয়াইট হাউসে উত্তপ্ত বিতর্ক হয়েছে বলে জানা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে সাড়ে তিন লাখের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। এর মধ্যে মারা গেছেন ১০ হাজারের বেশি। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলছেন, 'সব নিয়ন্ত্রণে আছে।' যদিও তাঁর প্রশাসনের লোকজনই বলছেন, 'আসছে সপ্তাহে আরও বহু লোক মারা যাবে।'
ট্রাম্পের দলের অন্যতম নেতা লিন্ডসে গ্রাহাম এই অবস্থায় করোনাভাইরাসের বিস্তারের জন্য চীনকে দায়ী করে বলেছেন, এই প্রাদুর্ভাবের জন্য চীনের কাঁচাবাজারে বাদুর ও বানর বিক্রি দায়ী।

এদিকে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর ওপর হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে ডাক্তারদের মধ্যেও নানা মতবিরোধ রয়েছে। নিউইয়র্কের বেশ কিছু হাসপাতালে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন রোগীদের ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে। ক্লিনিক্যালি প্রমাণিত হওয়ার আগেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন দিয়ে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন।

এদিকে নিউইয়র্ক নগরীর মেয়র ডি ব্লাজিও জানিয়েছেন, সেখানে ভেন্টিলেটরের চরম সংকট। দুই দিনের মজুত আছে। ফেডারেল ও রাজ্যের মজুত থেকে দ্রুত সাহায্য না আসলে বহু মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব হবে না। তিনি আরও জানান, নিউইয়র্কের হাসপাতালগুলোতে চিকিসা সরঞ্জামের চরম সংকট চলছে। নগরীতে ৪৫ হাজার চিকিৎসক প্রয়োজন। অপ্রতুল চিকিৎসকেরা রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

মেয়র বলেন, বয়স্ক রোগীদের ভেন্টিলেশন মেশিন থেকে বঞ্চিত করার সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে হাসপাতালগুলোকে। আমেরিকার কোনো চিকিৎসককে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তা তাঁদের পেশাগত জীবনে চিন্তাও করেননি। স্বাস্থসেবীদের অনেকেই হাসপাতালে দিন–রাত কাটাচ্ছেন। কয়েক ঘণ্টা ঘুমিয়ে নিচ্ছেন। নিজের ও পরিবারের জীবনকে বিপন্ন করে এসব স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন।

নিউইয়র্ক নগরীতে গতকাল সোমবার ২১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে নগরীতে মোট মৃত্যু দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৪৭২ জনে। হাসপাতাল ও মর্গে মরদেহের স্থান সংকুলান হচ্ছে না। ফিউনারেল হোমগুলো মৃতদেহ সৎকারের সব আনুষ্ঠানিকতা সামলে উঠতে পারছে না। নিউইয়র্কের কোনো কোনো পার্কে মারা যাওয়া রোগীদের গণকবর দেওয়ার কথাও বলা হচ্ছে। এ নিয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা আসেনি এখনো। নগর কতৃপক্ষ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে।

নগরীর জনাকীর্ণ হাসপাতাল থেকে বহু রোগীকে নেভেল হাসপাতাল ও জেভিট সেন্টারের অস্থায়ী হাসপাতালে স্থানান্তর করা হচ্ছে। সংকটাপন্ন অবস্থায় এসব রোগীদের স্থানান্তরে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে।

নিউইয়র্কের রাজ্য গর্ভনর এন্ড্রু কুমো জানিয়েছেন, টানা দুই দিন মুত্যুর সংখ্যা তুলনামূলক কমে এসেছে। হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যাও আগের সপ্তাহ থেকে কমছে। গভর্নর সতর্কতার সঙ্গে বলেছেন, 'আমরা অনুমান করতে পারি, পরিস্থিতি স্থিরতার দিকে যাচ্ছে। যদিও এমন আশাবাদের জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে।'

নিউইয়র্কে পুলিশের বিশাল অংশ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। মেয়র জানিয়েছেন, আশার কথা। পুলিশের ২০০ সদস্য সুস্থ হয়ে কাজে ফিরতে পেরেছেন। ম্যানহাটনের কেথেড্রাল চার্চ সংলগ্ন মাঠে অস্থায়ী হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। কর্মহীন লোকজন বেকার ভাতার আবেদন পূর্ণ করতে পারছেন না। ওয়েবসাইট এবং ফোন সিস্টেম আবেদনের বিশাল বোঝা নিতে পারছে না। লোকজনকে ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে , দু–একদিনের মধ্যেই নতুন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সাহায্যের আবেদন তখন অনেকটা সহজ হয়ে উঠবে।

পাশের রাজ্য নিউজার্সিতেও মৃত্যুর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে। সামনের দুই সপ্তাহ সতর্ক থাকা এবং নিজেকে বিচ্ছিন্ন রেখে নিরাপদ থাকার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। নিউইয়র্কের স্কুল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এপ্রিল মাস জুড়ে বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।