হিমায়িত পশুর মাংসের ট্রাকে মানুষের লাশ

ছবি: রয়টার্স
ছবি: রয়টার্স

১.

নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে পড়ে আছে এক তরুণের লাশ। কেউ নিতে আসছে না। নিয়ম অনুযায়ী লাশ বুঝে পেতে পরিবারগুলোকে চাইতে হয়। দুদিন অপেক্ষার পর লাশটিকে বেওয়ারিশ ঘোষণা করা হবে। এরপর পুড়িয়ে ফেলা হবে।

২.

একজন বাংলাদেশি তরুণের পরিচয়পত্র চারপাশে ঘুরছে। সঙ্গে একটি বার্তা। পরিবারের পক্ষ থেকে সেই তরুণের খোঁজ জানতে চাওয়া হয়েছে। সবশেষ উবারচালক সেই তরুণটি তাঁর রুমমেটকে ফোন করেছিলেন। তখন তিনি জানান, খুব অসুস্থ বোধ করছেন। গাড়িতে প্যাসেঞ্জার ছিলেন, তাঁকে নামিয়ে তিনি চলে যান একটি হাসপাতালে। এরপর থেকে কেউই সেই তরুণের কোনো খোঁজ জানেন না। ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না। পরিস্থিতি এমন, হঠাৎ করে যেন কোথায় হারিয়ে গেলেন সেই তরুণ!

ওপরের দুটি ঘটনাই অনেক হৃদয়বিদারক। প্রথম ঘটনায় এক তরুণের লাশ নিতে পরিবারের কেউ আসছেন না। দ্বিতীয় ঘটনায় পরিবার খুঁজছে এক যুবককে, পাওয়া যাচ্ছে না। কী নির্মম পরিহাস! আজকে বিশ্বব্যাপী দেখা দেওয়া করোনাভাইরাস কীভাবে মানুষকে অসহায় করে ফেলেছে। এখন আমরা কেউ কাউকে চিনি না। অথচ কয়েক দিন আগেও এই নিউইয়র্ক ছিল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম একটি শহর। কত মানুষের আনাগোনা। কত ভালোবাসা। যে শহর ঘুমায় না! একটি ভাইরাস ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে একটি সভ্যতাকে।

একের পর এক মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে। মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। অবস্থা এমন যে হাসপাতালগুলোর হিমাগারে লাশ রাখার জায়গা শেষ। এখন রেফ্রিজারেটর ট্রাক এনে রাখা হয়েছে হাসপাতালগুলোর সামনে। এসব ট্রাকে সাধারণত গ্রোসারির জন্য পশুর মাংস সরবরাহ করা হয়। ভাবতে পারবেন! সেই ট্রাকের ভেতরে একজনের ওপর আরেকজনের লাশ রাখা হচ্ছে। কোনো পরিবার যদি লাশ নিতে চায়, তাহলে নম্বর দেখে বের করা হচ্ছে।

ফিউনারেল হোমগুলোতে জায়গা নেই। একসঙ্গে তিন বা চারটি লাশ রাখা যায় এসব হোমে। অথচ এখন তারা সারা দিনে ৫০-৬০টি মরদেহ দাফনের প্রক্রিয়া করছে। জানাজা করার কোনো ব্যবস্থা নেই। তার মধ্যেও মুসলমানেরা বিভিন্ন উপায়ে জানাজার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। মাটি দেওয়ার সময় পরিবার থেকে কেবল একজনকে সেখানে উপস্থিত থাকার সুযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। কী নিষ্ঠুর পৃথিবী! এমনটিই কি হওয়ার কথা ছিল!

পরিস্থিতি এমন যে কেউ মারা গেলে এখন চাইলেও তার এই মরদেহ শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী নিজের জন্মভূমিতে পাঠানো যাচ্ছে না। চাইলেও আত্মীয়স্বজন শেষবার তাকে দেখতে পাবে না। মাটি দিতে পারবে না তার কবরে। অথচ কী অপরাধ ছিল তার? এমনটাই কি প্রাপ্য ছিল? বিধাতা এ কোন খেলা তুমি খেলছো? এমন তো আমরা চাইনি। এই লাশের মিছিলের শেষ কোথায়? হে মহান সৃষ্টিকর্তা, আমরা যদি কোনো ভুল করে থাকি, তাহলে তুমি আমাদের ক্ষমা করে দাও।