যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আরও ছয়জনসহ ৮৯ প্রবাসীর মৃত্যু

যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে ৮ এপ্রিল বুধবার আরও পাঁচজন প্রবাসী বাংলাদেশির নাম যুক্ত হলো। তাঁরা হলেন আমেনা বেগম, শাহানা, আবদুস সামাদ, হারুনর রশিদ, কাজী আবু রাশেদ ও আলী আরশদ। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ৮৯ বাংলাদেশির করোনায় মৃত্যু হয়েছে। নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের কোথাও সরকারিভাবে এই তথ্য প্রকাশ হয়নি। কমিউনিটি যোগাযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশিদের মৃত্যুর সংখ্যা পাওয়া যাচ্ছে। এ সংখ্যা এদিক-সেদিক হতে পারে।

করোনায় চারজন ট্যাক্সিচালকসহ ১১ ভারতীয়র মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আরও ১৬ জনের শরীরে করোনার উপস্থিতি ধরা পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ১১ ভারতীয়র মধ্যে ১০ জনই পুরুষ। বাকি একজন নারী। এ ছাড়া যারা মারা গেছে, তাদের মধ্যে ১০ জন নিউইয়র্ক এবং নিউ জার্সির। তাদের মধ্যে চারজন নিউইয়র্ক শহরের ট্যাক্সিচালক। একজন ফ্লোরিডার নাগরিক।

করোনায় এত প্রবাসীর আক্রান্ত ও মারা যাওয়ার ঘটনা বাংলাদেশি মানুষের ব্যাপকভাবে আতঙ্কগ্রস্ত করে ফেলেছে। এই ভাইরাসের কারণে কেন এত বাংলাদেশির মৃত্যু, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা। এত আক্রান্ত হওয়া ও মৃত্যুর পেছনে অভিবাসী হিসেবে বাংলাদেশিদের কর্মজীবন, সচেতনতার অভাব, এমনকি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনাচরণ দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। জীবিকার তাগিদে বাইরে যাওয়া বা একসঙ্গে জমায়েত হয়ে বাজার, আড্ডা ও রাজনীতির কথাবার্তা নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম বাংলাদেশি কমিউনিটিতে অন্যদের চেয়ে বেশি লক্ষ করা গেছে।

লকডাউন জারির আগে নিউইয়র্কে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবরে সবাই যখন আতঙ্কিত, তখনো প্রবাসীরা কোনো ধরনের সচেতনতা, প্রচার বা প্রস্তুতিতে যোগ দেননি। নিউইয়র্কে বাংলাদেশি সংগঠন আছে কয়েক শ। সংগঠনগুলোর অনেকে করোনার প্রাদুর্ভাবের সময়ও একসঙ্গে নির্বাচনী প্রচার থেকে শুরু করে চায়ের আড্ডায়, রেস্তোরাঁয় বসে সভা-সমাবেশ করেছেন। ফলে এখন অনেকেই ভুলের মাশুল দিচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে। অনেকে নিজের জীবন ঝুঁকিতে ফেলেছেন। অনেকে স্বজন হারিয়েছেন।

লকডাউন শুরুর পর নিউইয়র্কে প্রধান প্রধান বাংলাদেশি মসজিদগুলো কার্যত বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপরও বেশ কিছু এলাকায় জামাতে নামাজ হয়েছে। তাবলিগসহ অন্যান্য ধর্মীয় সমাবেশ হয়েছে। এসব থেকে বাংলাদেশিদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। আক্রান্ত লোকজনের মাধ্যমে নানাভাবে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় স্বদেশীদের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে।

বুধবার রাত পর্যন্ত নিউইয়র্ক নগরীতে মোট মৃত্যু ৪ হাজার ২৬০ রেকর্ড করা হয়েছে। মৃতের এ সংখ্যাটি প্রকৃত সংখ্যা নয় বলে মেয়র ডি ব্লাজিও নিজেই বলেছেন। নগরীর ফায়ার সার্ভিস বলেছে, তারা যেখানে দিনে ২০ থেকে ২৫টি মৃত্যুর রেকর্ড করেছে স্বাভাবিক সময়ে, সেখানে করোনা–তাণ্ডবের সময়ে তাদের কাছে প্রতিদিন গড়ে ২০০ লোকের মৃত্যুর তথ্য রয়েছে। সিটি কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে। হাসপাতালে যাওয়ার আগে বা ঘরবাড়িতে যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের গণনায় আনার পর সংখ্যাটি আরও ভীতিকর হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।