অনিবন্ধিত অভিবাসীদের বের করে দিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন

মেক্সিকোর সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে আমেরিকা: ছবি: এএফপি
মেক্সিকোর সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে আমেরিকা: ছবি: এএফপি

করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়ার আশঙ্কায় মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে ৬ হাজার ৩০০ জনের বেশি অনিবন্ধিত অভিবাসীকে বের করে দিয়েছে আমেরিকা। দেশটির কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ১০ এপ্রিল বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাভাইরাসের এই সময়ে এভাবে অভিবাসীদের দেশ থেকে বের করে দিচ্ছে আমেরিকা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে আমেরিকায় অভিবাসন আইনসহ সবকিছুতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এ কারণে এই অঞ্চলে অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে আসা হাজারো মানুষ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় পড়েছে। এ ছাড়া ভয়ংকর এই ভাইরাস যাতে না ছড়ায়, সে কারণে অন্য দেশের নাগরিকদের আমেরিকায় ঢোকার ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে কঠোর নির্দেশ জারি করেছে সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)। সেই নির্দেশ মোতাবেক বিদেশি নাগরিকদের আমেরিকায় আপাতত ঢোকা বন্ধ হয়ে গেছে।

সিডিসির পরিচালক রবার্ট আর রেডফিল্ড বলেছেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রাথমিকভাবে ৩০ দিনের জন্য এই নির্দেশ জারি করা হয়েছে। এতে বর্ডার প্যাট্রোল স্টেশন ও বন্দরগুলোতে ভিড় এড়িয়ে ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো যেতে পারে। কারণ, এই মুহূর্তে করোনাভাইরাসের আক্রান্তের দিক দিয়ে বিশ্বে এক নম্বরে রয়েছে আমেরিকা।

ভারপ্রাপ্ত সিবিপি কমিশনার মার্ক মর্গান বলেন, এই নির্দেশনা জারির ফলে বর্ডার অতিক্রম করা মানুষের সংখ্যা অর্ধেক কমে গেছে। এর মধ্যে ১০০ জনের মতো এজেন্সির হেফাজতে আটক আছে। অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে আসা প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এদের অধিকাংশকে মেক্সিকোতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। আর অল্পসংখ্যক মানুষকে তাঁদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দারিদ্র্য ও সহিংসতার কারণে গুয়েতেমালা, হন্ডুরাস ও এল সালভাদরের নাগরিকেরা নিজ দেশ থেকে পালিয়ে আমেরিকায় ঢোকার চেষ্টা চালাচ্ছেন। জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, এই দেশগুলোতে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৭০০। আর এতে মৃত্যু হয়েছে ৩২ জনের। আর মেক্সিকোতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার ৪০০ জন, মৃত্যু হয়েছে ১৯৪ জনের।

মার্ক মর্গান বলেন, এ কারণেই সীমান্ত থেকে মানুষকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। আর আগে তাঁদের ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেসে পাঠানো হয়। কারণ এই রোগ তো আর বয়স দেখছে না।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সমালোচনা হচ্ছে, সারা বিশ্ব যখন করোনাভাইরাসের ভয়ে আতঙ্কিত, ঠিক সেই মুহূর্তে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন কৌশলে অভিবাসীদের দেশ থেকে বের করে দিচ্ছে। অভিবাসন নীতি আরও কঠোর করে ফেলছে। তবে এই সমালোচনা একদম নাকচ করে দিয়েছেন মার্ক মর্গান। তিনি বলেন, এটা অভিবাসনসংক্রান্ত কোনো ব্যাপার নয়। এটা মূলত জনস্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিষয়।

এদিকে এ নিয়ে ৭ এপ্রিল হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি চাদ উলফের কাছে চিঠি লিখেছে ডেমোক্র্যাটস সিনেট জুডিশিয়ারি কমিটি। চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকার যে ইমারজেন্সি পাবলিক হেলথ নির্দেশনা দিয়েছে, তা বৈধ নয়।

সিবিপির বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত মার্চ মাসেই ৩৩ হাজার ৯৩৭ জন অবৈধভাবে সীমান্ত পেরোনোর সময় আটক হয়েছে। এর আগের মাসে আটক হয় ২ হাজার ৫৭৭ জন। লাতিন আমেরিকার অনেক দেশই এখন করোনার ভয়ে তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। আর গত মাসে আমেরিকা তাদের কানাডা ও মেক্সিকো সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করে।