কোয়ারেন্টিনে থেকে বাড়ছে বিয়ে-বিচ্ছেদ

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে লকডাউনের বন্দিদশা শেষ হলে আমেরিকায় অসংখ্য বিয়ে-বিচ্ছেদ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা। বিয়ে বিচ্ছেদের জন্য কাজ করা অ্যাটর্নিদের কাছে আসা ফোন কলের রিপোর্ট অনুসারে মার্কিন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

বিয়ে-বিচ্ছেদ সংক্রান্ত ওই প্রতিবেদনে করোনায় হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা এক দম্পতির জীবন কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, কোয়ারেন্টিনে থাকা অবস্থায় স্বামী স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও, স্ত্রী তা পাত্তা না দিয়ে বেশিরভাগ সময় ফেসবুক নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। এ কারণে স্বামী বাসা থেকে অফিসের কাজ করার পাশাপাশি স্ত্রীকে খেয়াল করছিলেন। এক সময় তিনি ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে স্ত্রীকে অ্যাড করে নেন। কৌশলে ফেসবুকে অন্য মানুষ সেজে স্ত্রীর সঙ্গে প্রেমালাপ শুরু করেন। একদিন ফেসবুকে স্ত্রীর কাছে তাঁর স্বামী সম্পর্কে জানতে চান। জবাবে স্ত্রী জানান, পাঁচ বছর আগেই তাঁর স্বামী মারা গেছেন।

নিউইয়র্কে বিয়ে-বিচ্ছেদের অ্যাটর্নি মার্সি কাটজ বলেন, এখন আদালতে প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধ রয়েছে। যখন এই প্রবেশাধিকারের সীমাবদ্ধতা উঠে যাবে, আমি নিশ্চিত যে তখন বিয়ে-বিচ্ছেদের জন্য অসংখ্য মামলা দায়ের হবে।

শিকাগোর পারিবারিক আইনবিষয়ক অ্যাটর্নি রবার্ট সেগাল বিয়ে-বিচ্ছেদ মামলার ‘প্লাবন’ হবে বলে আশঙ্কা করছেন।

আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব ম্যাট্রিমনিয়াল আইনজীবীর (এএএমএল) সভাপতি সুসান মায়ার্স বলেছেন, ‘আমরা এখনই সেই সব ব্যক্তির কাছ থেকে পাওয়া কল ফিল্ডিং করছি, যারা একে অপরের সঙ্গে একই বাড়িতে থাকতে থাকতে ক্লান্ত। আমরা কেবল শুনছি, তাঁরা সবাই ডিভোর্স চান। করোনার কারনে আইনগতভাবে আপাতত বিয়ে বিচ্ছেদের ফাইলিং সিস্টেম বন্ধ আছে। যখন আইনি কাজ আবার শুরু হবে তখন আদালতে বিয়ে-বিচ্ছেদ চাওয়া দম্পতির ভিড় হবে।’

গবেষকেরা বলছেন, বাধ্যতামূলক নৈকট্যের কারণে মানুষের মধ্যে মানসিক চাপ ও উত্তেজনা বেড়ে গিয়েছে। তাই কোভিড-১৯ সংকটের পরে বিয়ে-বিচ্ছেদ বৃদ্ধির একমাত্র কারণ হবে বাধ্যতামূলক ঘরবন্দী জীবন। আবার এমনও হতে পারে, মানুষ মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখছে বলেই একা থেকে তাঁদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চাইবে।

সমাজকর্মী সেগাল মনে করেন, বাড়িতে থেকে আমরা এখন আরও সহজে বুঝতে পারছি মানুষ আপস করতে কম ইচ্ছুক, কেউই খুঁজে সমাধান বের করতে ইচ্ছুক নই। সবার ধৈর্য ধরার ক্ষমতা কমে গেছে।

মায়ার্স অ্যাটর্নিদের কয়েকটি কলের পেছনে একটি সুস্পষ্ট চিত্র এঁকেছেন। তিনি বলছেন, এতদিন মানুষ আর্থিক চাপ নিয়ে কারাবাসের মতো থেকে কিছু বৈবাহিক সম্পর্ককে আইনি ও শারীরিক ব্রেকিং পয়েন্টেও নিয়ে যাচ্ছে। আপনি যদি সন্তানসহ একটি ছোট অ্যাপার্টমেন্টে চব্বিশ ঘণ্টা আটকে থাকেন এবং যদি আপনার সংসারে নিত্যকার ঝামেলা মোকাবিলায় দক্ষতা না থাকে, তবে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে ঘরোয়া সহিংসতা বাড়বে এবং এর পরিণতি হবে বিয়ে-বিচ্ছেদ।