রোজা উপলক্ষে ব্রঙ্কসে খুলছে দোকান, কর্মী সংকট

ব্রঙ্কসের স্টার্লিং অ্যাভিনিউয়ে খুলতে শুরু করেছে দোকান। ছবি: প্রথম আলো
ব্রঙ্কসের স্টার্লিং অ্যাভিনিউয়ে খুলতে শুরু করেছে দোকান। ছবি: প্রথম আলো

করোনাভাইরাসের এই প্রাদুর্ভাবের সময়ে দরজায় কড়া নাড়ছে রমজান। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২৪ বা ২৫ এপ্রিল নিউইয়র্কে শুরু হবে পবিত্র মাহে রমজান। এবারই প্রথমবারের মতো আসছে রমজান মাসকে স্বাগত জানানো হয়নি ঘটা করে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কারণে অনেকের ঘরেই চলছে মাতম। তারপরও রমজান উপলক্ষে নিউইয়র্কের অন্য এলাকার মতো বাঙালি অধ্যুষিত ব্রঙ্কসেও খুলতে শুরু করেছে দোকানপাট। তবে দোকানগুলোতে রয়েছে কর্মী সংকট।

ব্রঙ্কসের দোকানে দোকানে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর পাশাপাশি শোভা পাচ্ছে ইফতারের ছোলা, সেমাই, জুস, চিড়া, মুড়ি, খেজুরসহ নানা সামগ্রী। রেস্তোরাঁগুলোও প্রস্তুতি নিচ্ছে মজাদার ইফতার সামগ্রী তৈরির। রেস্তোরাঁ ও মুদি দোকানের পণ্য বিক্রেতারা রোজাদারদের সেবা দিতে প্রস্তুত হলেও নতুন সংকটে পড়েছেন তাঁরা। লকডাউনে দোকান বন্ধ হওয়ার পর এখন খোলার প্রস্তুতি চললেও কর্মচারীরা কেউ কাজে যোগ দিতে চাইছেন না। এ কারণে রমজানে ব্যবসায় মন্দার আশঙ্কা করছেন প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা।

সরেজমিনে কথা হয় ব্রঙ্কসের খলিল গ্রুপ অব বিজনেসের মালিক খলিলুর রহমানের সঙ্গে। তাঁর চারটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে খলিল বিরিয়ানি হাউস খুলেছেন। খলিল চায়নিজ খোলার প্রস্তুতি থাকলেও কর্মী সংকটের জন্য পারছেন না। কারিগর আসছেন না। শেফের অভাবে তিনি নিজেই রান্নার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, কর্মচারীরা ঘরে বসে বেকার ভাতার সুবিধা পাচ্ছেন। সঙ্গে যোগ হয়েছে মাথাপিছু আরও ৬০০ ডলারের ফেডারেল সহায়তা। আগে কাজ করে তাঁরা যা আয় করতেন, এখন কাজ না করেও ঘরে বসে পাচ্ছে তার দ্বিগুণ।তাই তাঁরা কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
খলিলুর রহমান বলেন, তবে যাই হোক, নতুন লোক নিয়ে ব্যবসা পুরোদমে চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। সংকট মোকাবিলা করেই সামনে এগিয়ে যেতে হবে। থেমে থাকলে চলবে না।

প্রিমিয়াম গ্রোসারির একটি শাখা পার্কচেস্টারে। কর্মী সংকটের কারণে দরজার সামনে বড় করে সাঁটানো ‌‌'হেল্প ওয়ান্টেড' পোস্টার। ব্রঙ্কসের অনেক পুরোনো গ্রোসারি পশরা। সেখানে মিট কাটার কাজে আসছেন না। মালিকদের দুজন নিজেরাই কাজ করছেন মিট কাটার কাজ। রোজা উপলক্ষে অনেক ভীড় দোকানে। দোকানের মালিক সালামত উল্লাহ আপস্টেট থেকে ছুটে এসে ক্যাশ সামলাচ্ছেন। ইত্যাদি গ্রোসারিতে ক্যাশ কাউন্টারে কয়েকজন ক্যাশিয়ার ইতিপূর্বে কাজ করলেও এখন মাত্র দুজন কর্মী হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতা সামলাতে। দোকানের সামনে বড় ট্রাক থেকে নামানো হচ্ছে নানা রকম ইফতার সামগ্রী।
প্রিমিয়াম রেস্টুরেন্ট খুলেছে ২১ এপ্রিল। এক মাস আগের ক্রেতাবহুল দোকানটিতে এখন সুনসান নীরবতা। সিটির আইন মেনে রেস্তোরাঁয় কারও বসার সুযোগ নেই। চেয়ার ওল্টানো। শুধুই টেক আউট চলবে। বিক্রিবাট্টা তেমন নেই। চাহিদা কম থাকায় খাবার দাবারও কম। ম্যানেজার জাকির নিজেই ক্যাশ কাউন্টারে কাজ করছেন। তিনি বলেন, অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। লোক সমাগম হলে রমজানে উপাদেয় ইফতারিসহ মুখরোচক খাবারের ব্যবস্থা করা হবে।
স্টার্লিংয়ের আরেকটি জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট আল আকসা এখনো খোলেনি। গ্রোসারির প্রধান দরজা বন্ধ। পাশের অন্য একটি দরজা খুলে ফোনে অর্ডার নিয়ে গ্রাহকদের পণ্য সামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে। নিরাপত্তার খাতিরেই তারা এখনো পুরোদমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করেনি। ম্যানেজার আলী হায়দার বলেন, রোজার আগেই দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই পুরোদমে চালু হবে।
এত দিন ফ্রেন্ডস গ্রোসারি বন্ধ থাকার পর ২১ এপ্রিল খুলেছে। মালিক সৈয়দ আল ওয়াহিদ নাজিম অসুস্থ থাকায় গ্রোসারি এত দিন বন্ধ ছিল। এখন তিনি সুস্থ্য হয়ে নিজেই দোকান খুলেছেন। দোকানের সামনে টাটকা শাকসবজিতে পরিপূর্ণ। নাজিম বলেন, বিপদ আছে-বিপদ থাকবে। এর মাঝেই ঘুরে দাঁড়াতে হবে। আর সে চেষ্টাই করছি।