নিউইয়র্কে এবার অন্য রকম রমজান

নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসে প্রথম রোজায় ইফতারের দৃশ্য। ছবি: এম বি তুষার
নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসে প্রথম রোজায় ইফতারের দৃশ্য। ছবি: এম বি তুষার

করোনাভাইরাস বদলে দিয়েছে জীবনযাত্রা। পরিবর্তন হয়েছে প্রাত্যহিক জীবনের চালচিত্র। এরই মধ্যে এসেছে রমজান মাস। কিন্তু রমজানের সেই আনন্দোৎসব নেই প্রবাস কমিউনিটিতে।স্বজন হারানো কমিউনিটির সর্বত্র যেন একটা বিষণ্ণতার ছোঁয়া। এখনো অনেকের ঘরে ঘরে করোনায় আক্রান্ত রোগী। সমগ্র সিটি লকডাউন। ঘরবন্দী সবাই। সামনে এখনো অনিশ্চয়তার ছোঁয়া, অজানা ভবিষ্যত।

মসজিদগুলো বন্ধ থাকায় তারাবির নামাজ অনুষ্ঠিত হয়নি কোথাও। দুই এক জায়গায় অনলাইনে তারাবি নামাজের ঘোষণা দেওয়া হলেও জনগনের মাঝে তেমন সাড়া মেলেনি।

রোজার প্রথম দিন থেকেই কমিউনিটির হলগুলোতে আয়োজিত হতো বিভিন্ন সংগঠনের ইফতার পার্টি। বিধি নিষেধের কারণে এবার তা নেই। দীর্ঘদিন পর রেস্টুরেন্ট খুলতে শুরু করলেও কর্মী সংকটের কারণে ইফতারের জমজমাট আয়োজন করতে পারছে না। সীমিত কিছু আইটেম তৈরি করে ইফতার ডিসপ্লে করছে রেস্টুরেন্টগুলো। সীমিত সংখ্যক রোজাদার সামাজিক দূরত্ব মেনে একজন একজন করে ঢুকে দ্রুত ইফতার সংগ্রহ করে অন্যকে সুযোগ করে দিচ্ছেন।

মসজিদ ও কমিউনিটি হল বন্ধ থাকায় অনেকে রাস্তায় ইফতার বিলি করছেন। অনেক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিজ উদ্যোগে বাসায় বাসায় দরজার সামনে রেখে আসছেন ইফতার বক্স।গাজীপুরের মতিন থাকেন পার্কচেস্টারের একটি অ্যাপার্টমেন্ট হাউসে। তিনি বলেন, আসরের একটু আগে বাসার দরজার সামনে একটা বড় বক্স দেখতে পাই। ওপরে লেখা ইফতার বক্স।কেউ দরজায় নক করেনি। আমার অ্যাপার্টমেন্টের প্রায় সবাই পেয়েছেন অজানা বন্ধুদের দেওয়া এই ইফতার উপহার। সম্ভবত গেটের লিস্ট থেকে মুসলিম নাম দেখে দেখে বাসার সামনে এই বক্স রেখে যাওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশি অধ্যুষিত ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টার বিপণীকেন্দ্রে ভীড় নেই মানুষের। বাংলাবাজার মসজিদ বন্ধ। মসজিদের ইমাম মাওলানা আবুল কালাম ইয়াহহিয়াকে দেখা গেলো ইফতার বক্স নিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে রোজাদারদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। তিনি জানান, অন্য সময় রমজানের ১৫ দিন আগে থেকেই সামর্থ্যবান প্রবাসীরা রোজাদারদের ইফতার খাওয়ানোর জন্য নাম লেখাতে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। ইফতার খাওয়ানোর লোকের অভাব না হলেও মসজিদ বন্ধ থাকায় ইফতার নেওয়ার লোক নেই। তাই আজ রোজার প্রথম দিনে আমাদের সম্মিলিত আয়োজনে কিছু ইফতার বক্স নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েছি রোজাদারদের মাঝে বিলি করার জন্য। এই উদ্যোগের সঙ্গে আছেন মো. সালেহ উদ্দীন, খলিলুর রহমান, বখতিয়ার রহমান, সাইদুর রহমান, মোতাসিম বিল্লাহ তুষার, এ ইসলাম মামুন, বেলাল আহমদ প্রমুখ। লোক সমাগম বেশি হলে পরবর্তীতে আরও বেশি বক্সের ব্যবস্থা করা হবে। এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

প্রতি বছর দেশীয় ও চায়নিজ উভয় আইটেম দিয়ে ইফতার বক্স সাজায় খলিল বিরিয়ানি অ্যান্ড হালাল চায়নিজ। তাদের কয়েকটি রেস্টুরেন্ট। আছে নিজস্ব পার্টি হাউসও। কর্মী সংকটের কারণে চায়নিজ রেস্টুরেন্টটি খোলা হয়নি। লোক সমাগমের নিষেধাজ্ঞা থাকায় বন্ধ রয়েছে পার্টি হলও। একটা রেস্টুরেন্ট খুলে দুজন সহকর্মী নিয়ে ইফতার বিক্রি করছেন প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, গত বছরের মতো এবার জনসমাগম নেই। তাই প্রথম দিন অল্প আইটেম দিয়ে ইফতারের পসরা সাজিয়েছি। তবে ইফতারে বৈচিত্র্য রেখেছি আগের বছরের মতোই। বেচাকেনা বেশি হলে আস্তে আস্তে আরও বেশি আইটেম তৈরি করব।

আরেকটি ব্যস্ত রেস্টুরেন্ট আল আকসা। রোজা ছাড়াও সারা বছর ক্রেতার ভিড় থাকে প্রতিষ্ঠানটিতে। লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ। ২৪ এপ্রিল খুলেছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক শেখ আলী হায়দার জানান, আমরা আজ শুরু করলেও আগের মতোই বৈচিত্র্য থাকবে ইফতারিতে। সিটির আইন মানতে হচ্ছে বিধায় বসার ব্যবস্থা নেই রেস্টুরেন্টে। ক্রেতারা টেক আউটের মধ্য দিয়ে আকর্ষনীয় ইফতারির স্বাদ নিতে পারবেন।
প্রিমিয়াম রেস্টুরেন্টে দেখা গেল লোকজন একজন একজন করে লাইন দিয়ে রেস্টুরেন্টে ঢুকে ইফতার সামগ্রী সংগ্রহ করছেন। ম্যানেজার জাকির জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও আকর্ষণীয় ইফতার আয়োজন করেছি।
প্রবাসে এবারের রমজানে ভার্চুয়াল ইফতার পার্টি ও আলোচনা অনুষ্ঠান হবে। বেশ কয়েকটি সংগঠন এ ধরনের পার্টির আয়োজন করেছে। ধর্মীয় আলোচনা, হামদ-নাত সবই উপভোগ করতে পারবেন ফেসবুকের মাধ্যমে। রমজান এভাবে পার হলেও সবাই আশায় আছেন ঈদটা যেন ভার্চুয়ালি না হয়, সবাই যেন নামাজ এক সঙ্গে মাঠে আদায় করতে পারে।