বাগদত্তা

নীলা শুধু চমকেই গেল না, হতবাক হয়ে রইল কিছুক্ষণ। এ কি করে সম্ভব? যার সঙ্গে সম্পর্কটা ঢাকায় ইতি টেনে এসেছে, সে এখন তারই সামনে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত হয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে এসেছে মৃদুল। রোগীর মুখের দিকে তাকিয়ে প্রথমে চিনতে পারেনি ও। ২৪ বছর পর দেখা। এত বছর পর দেখেই চিনে ফেলা কম সহজ? মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো ছিল। ওর খুব শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। খুব দ্রুত অক্সিজেন মাস্ক লাগাতে হবে। প্রয়োজন হলে ভেন্টিলেটরে সংযুক্ত করতে হতে পারে। কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের শ্বাসকষ্ট হলে বিপদ বেশি। ফুসফুসে ভাইরাসটি প্রবল যন্ত্রণার সৃষ্টি করে চলে। দম নেওয়া সে কি কষ্ট!
রোগীর স্ট্রেচার ধরে আইসিইউ কক্ষের দিকে টেনে নেওয়ার সময় মৃদুল রায়হান নামটা আবারও দেখে নিল নীলা। নামটি দেখার পর থেকে ওর বুকের ভেতর ভূমিকম্প হচ্ছে। মৃদু কষ্টের একটা নদী পাথর চাপা ছিল অনেক দিন। ওই নদীটা এই মুহূর্তে খরস্রোতে নেমে এসেছে বুকের পাঁজর ভেঙে। চোখের সামনে মৃত্যুর প্রলয় নাচন চলছে, এর মধ্যে বুকের ভেতর অব্যক্ত যন্ত্রণার সুনামি! পৃথিবীব্যাপী করোনাভাইরাস দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। হাসপাতালগুলোতে মানুষের অসহায় মৃত্যুর বিভীষিকা! রোদনভরা অকল্পনীয় দিনলিপিতে সবাই ‘বেঁচে থাকা যাবে কিনা’—এই প্রশ্নে ভীষণ উদ্বিগ্ন। এমন ক্রান্তিকালে কে, কখন, কাকে ভালোবেসে আঘাত পেয়েছে এবং প্রত্যাখ্যানের নেপথ্য কারণ কম ছিল—এ নিয়ে তথ্য-তালাশের বিন্দুমাত্র আগ্রহ কারও থাকার কথা নয়। কিন্তু মৃদুল রায়হানের নামটা দেখেই এক লহমায় ঝোড়ো গতিতে নিজের জীবনের একটি আখ্যান নীলার চোখের সামনে ভেসে উঠল।
নিউইয়র্ক শহরের কুইন্স হাসপাতালের জরুরি বিভাগে সহকারী স্বাস্থ্যকর্মী নিলুফার ইয়াসমিন নীলা এই মুহূর্তে দায়িত্ব-কর্তব্য ভুলে ব্যক্তিগত এক আখ্যানের দরজায় কড়া নাড়ছে ও। মানুষের মন বড্ড রহস্যময়। যুক্তি নির্ভর জীবন কখনো কখনো আবেগের কাছে নতমুখে দাঁড়িয়ে যায়। যে আবেগ মথিত হয়ে মৃত আগ্নেয়গিরির মতো চাপা থাকে, সেটা আকস্মিকভাবে অগ্নি-উৎপাত ঘটিয়ে নেমে আসে। পুড়িয়ে তো দেয়, পুড়িয়ে দিতে চায় আরও অনেক কিছু। মন পুড়ে খাঁক হতে চাইলে দায়িত্ববোধের কথা কিছু সময়ের জন্য ভুলে যাওয়া অবান্তর বলা যাবে কম? নীলার চোখের সামনে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বেশ কিছু ঘটনা ভেসে উঠল।
মৃদুলের সঙ্গে নীলার যখন পরিচয় হয়, সে সময় ও আরেকজনের বাগদত্তা। ঢাকার ইস্কাটন এলাকায় নীলুদের বাড়ি। ওর বান্ধবী রিপার মাধ্যমে এক অনুষ্ঠানে পরিচয় হয়েছিল মৃদুলের সঙ্গে। নীলার কবিতার প্রতি গভীর টান ছিল। মৃদুল রায়হান সে সময় তরুণ কবিদের মধ্যে ধ্রুবতারার মতো উজ্জ্বল। মৃদুলের সঙ্গে নীলার পরিচয়টা বন্ধুত্ব ছাপিয়ে প্রেমের দিকে গড়িয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, শাহবাগ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, শেরে বাংলা নগর, বইমেলা, বাণিজ্য মেলায় ওরা বিভিন্ন সময়ে ঘুরে বেরিয়েছে। মৃদুল নতুন কবিতা লিখলেই ফোন করে নীলাকে শোনাতো আগে। টিএসসিতে ওদের কত আড্ডার স্মৃতি।
ওদের মধ্যে ভালোবাসা যখন প্রকাশ করাটা জরুরি হয়ে গেল, সে সময় নীলা মৃদুলকে জানাল যে, ও একজনের বাগদত্তা। মৃদুলের সঙ্গে নীলার পরিচয়ের তিন মাস আগে ওর বিয়ের আলোচনা চূড়ান্ত হয়েছিল। হবু বর বাস করেন নিউইয়র্কে। নীলার কোনো আপত্তি ছিল না এই বিয়েতে। বাবা-মা, ভাই-বোনের সম্মতিতে পারিবারিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নীলুকে আংটি পরিয়ে গিয়েছিল হবু বরের পরিবার। এ কারণেই সংকোচ বোধ করত নীলা। মৃদুলকে ভালোবাসলেও বলতে পারছিল না। মৃদুল যে ওকে ভালোবেসে ফেলেছে, এটাও বুঝতে পারছিল ও। একদিন নিজেকে প্রকাশ করেছিল নীলা। মৃদুলকে নিজের ভালোবাসার কথা জানিয়ে বলেছিল—
–‘আমি একজনের বাগদত্তা। তোমার সঙ্গে পরিচয়ের তিন মাস আগে আমাকে আংটি পরিয়ে গিয়েছে ওদের পরিবারের সদস্যরা। কে জানত, আমার জীবনে তুমি আসবে!’
কথা শুনে অনেকক্ষণ থ’ হয়ে গিয়েছিল মৃদুল। নীলা আরও বলেছিল—
–‘যার সঙ্গে আমার বিয়ে হবে, তিনি এখনো নিউইয়র্কে। কয়েক মাস পর দেশে আসবেন। এরপর আমাদের বিয়ে হবে। যদি তোমার এ ব্যাপারে সংকোচ না থাকে, তবে আমরা বিয়ে করতে পারি। তুমি কি বলো?’
মৃদুল মৃদু হেসেছিল। আরও কিছুক্ষণ চুপ থেকে পাল্টা প্রশ্ন করেছিল—
–‘তোমার কি সংকোচ হচ্ছে?’
–‘হবে না কেন? আমি তো হবু বরের সঙ্গে কয়েক দিন টেলিফোনে কথাও বলেছি। এখন কথা বলি না। নানা অজুহাতে এড়িয়ে যাই’
–‘হুম’
–‘হুম, মানে? এখন তাকে ‘না’ বলে দিতে পারি। তাকে বলে দেব, কিছু মনে করবেন না, আমি একজনকে ভালোবেসে ফেলেছি।’
এ কথা শুনে আকস্মিক ‘হো হো হো’ করে হেসেছিল মৃদুল। হাসি থামার পর ও বলেছিল—
–‘আমি ভাবছি অন্যভাবে। ভাবছি, ওই ভদ্রলোকের কথা। তিনি স্বপ্ন দেখছেন তোমাকে নিয়ে সংসার করবেন। তুমি তার কল্পনায় প্রবেশ করে ফেলেছ, নীলা!’
–১তো? কল্পনায় প্রবেশ করেছি। জীবনে প্রবেশ করেনি তো! তিনি এ কথা জানার পর নতুন কাউকে নিয়ে ভাববেন। আমার দোষ কোথায়? আমি একজনকে ভালোবেসে ফেলতে পারি না?’
–‘পারো। মানুষের জীবনে অনেক কিছুই ঘটতে পারে। তারপরও আমি কেন জানি, ওই ভদ্রলোকের কথা ভাবছি। তিনি কষ্ট পাবেন। আর এর জন্য আমরা দায়ী-এখন এটা ভাবছি। ঠিক হবে কিনা, সেটা আরও ভেবে তোমাকে জানাব।’
নীলা হতাশ ও আহত হয়েছিল। ও আশা করেছিল, ও কারও ‘বাগদত্তা’—এ নিয়ে মৃদুল ভাববে না। নিজের ভালোবাসাকে কে হারাতে চায়? যাকে চেনে না তাকে জিতিয়ে দেওয়ার মধ্যে কী আনন্দ আছে? এ ধরনের কাজে কম মহত্ত্ব আছে? কে জানে, কবিদের মনের রহস্য হয়তো জটিল-ভেবেছিল নীলা।
মৃদুল নিজের ভালোবাসার কথা জানালেও নীলাকে জয় করার চেষ্টা করেনি। বরং নীলা এগিয়ে এলে মৃদুল সরে গেছে বারবার। এর কারণ নীলা জানতে পারেনি। নীলার সঙ্গে মৃদুল যোগাযোগ রাখতে চাইতো না। নিজ থেকে ওকে ফোন করত না। নীলা ফোন করলে কথা বলত। নীলা নিজের সঙ্গে অনেক লড়াই করেছিল। মনকে বোঝাতে চেয়েছিল, মৃদুল ওর জীবনে আকাশের মতো, ছায়া দেবে, অস্তিত্বে জড়াবে না। বা মৃদুল দমকা হাওয়ার মতো। স্পর্শ দিয়ে আপ্লুত করবে, কিন্তু আলিঙ্গনে রাখবে না। অথবা সমুদ্রের অভিমানী ঢেউয়ের মতো, কাছে এসে ভিজিয়ে দিয়ে চলে যাবে সমুদ্রের কাছে। কখনো সমর্পিত হবে না। নীলা অনেক রাত চোখের জলে ভেসেছে, মৃদুলকে নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। আশা করত, মৃদুলে একদিন ওকে বলবে—
‘চলো, আমরা বিয়ে করি। তোমাকে নিয়ে কারও কল্পনা বা কামনায় আমাদের কী যায়-আসে?’
মৃদুল এসে এ কথা বলেনি। নীলা বুঝে নিয়েছিল জীবন রহস্য করে আর ভালোবাসা কখনো কখনো প্রহসনও করে। নিজের ভালোবাসা নিয়ে নীলার কোনো গ্লানি ছিল না। কারণ, বিয়ের দিন অবধি ও চেষ্টা করেছিল, মৃদুলের সঙ্গে পালিয়ে যেতে। মৃদুল সাড়া দেয়নি। ওর বর ঢাকায় ফেরার সময় থেকে বিভিন্ন সময়ে মৃদুলকে ফোন করে নীলা জানিয়েছিল, তিনি আসছেন। ফোনের ও প্রান্তে মৃদুলের হাসি শুনত। যেদিন নীলার বিয়ে হয়, সেদিন ও ফোন করে বলেছিল—
‘তুমি এখনো যদি বলো, আমি এই মুহূর্তে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসব। শুধু একবার বলে দেখো। আমি তোমার সঙ্গে জীবন কাটাতে চাই, মৃদুল!’
–‘নীলা তুমি আমার ভালোবাসায় আছ। আমার কবিতায় আছ। আমার অস্তিত্বে আছ। হয়তো সংসার করতে পারছি না। তুমি সুখে থেকো!
–‘মৃদুল, এটাই তোমার শেষ কথা?’
–‘আরেকটা কথা বলছি। তোমার কোনো দোষ নেই। তোমার ভালোবাসায় কোনো খাঁদ নেই। তোমার কাছে আমি আজীবন ঋণী। আমাকে আমার অপারগতার জন্য ক্ষমা করে দিয়ো।’
এ কথা বলেই মৃদুল ফোন লাইন কেটে দিয়েছিল। নীলা আরও কয়েকবার ফোন করেছিল। মৃদুল ফোন ধরেনি। নীলা ভীষণ আঘাত পেয়েছিল। আর কোন দিন মৃদুলের সঙ্গে নীলার দেখা হয়নি। কথা হয়নি। বিয়ের ছয় মাসের মধ্যে স্বামীর সঙ্গে নীলা নিউইয়র্ক চলে আসে। এখানে ওর সুখের সংসার। দুই মেয়ে, এক ছেলের জননী ও। আজ প্রায় ২৪ বছর পর মৃদুলকে দেখতে পেল হাসপাতালে। হাসপাতালে মৃদুল এসেছে মৃত্যু পথযাত্রী রোগী হয়ে। এ কেমন ভাগ্যের পরিহাস!
স্ট্রেচার টানতে টানতে নীলার চোখের জলের ধারা নেমে আসে। অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা এ দৃশ্য দেখে অবাক হচ্ছে না। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী গিজগিজ করছে হাসপাতাল। প্রতিদিন টপ টপ করে মারা যাচ্ছে মানুষ। এ সময় চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা কেঁদে নিজেদের হালকা করে নেন। নীলার কান্নার অর্থদ্যোতনা অবশ্য ভিন্ন। ওর বুকের ভেতরের জমাট কান্না চুরমার করে বেরিয়ে আসতে চাইছে।
আইসিইউ কক্ষের সামনে এলে মৃদুল হাতের ইশারা করল নীলাকে। নীলার চোখ উজ্জ্বল হলো। স্ট্রেচার থামিয়ে নীলা নিজের মুখেরে মাস্কটা সরিয়ে নিল। মৃদুলের মুখের ওপর ঝুঁকে জিজ্ঞেস করল—
–‘আমাকে চিনতে পারছ, মৃদুল!’
মৃদুলের চোখে কি অশ্রুজল চিকচিক করছে? ভাবল নীলা।
মৃদুল মৃদু কণ্ঠে বলল, ‘তুমি এখানে?’
কথাটা যেন সাত আসমান কাঁপিয়ে, সমুদ্রের ভয়াল ঝড়কে ছাপিয়ে ম্রিয়মাণ এক ফল্গুধারার মতো ওর ভেতরটায় ভেসে গেল। যে মানুষ ওকে ভালোবেসে দূরে ঠেলে দিতে একটুও কাঁপেনি, তার একটি প্রশ্নে ও কেমন মোমের মতো গলে গেল। কোথায় পাথুরে অভিমান? কোথায় রাগের উত্তাপ? একটি বাক্যের কাছে নীলা হয়ে গেল বরফ গলা নদী! ও নিজের ভেতরের ঝড় সামলে নিতে নিতে বলল—
–‘আমি এই হাসপাতালে চাকরি করি। কিন্তু তুমি নিউইয়র্কে? কবে এসেছ? অসুস্থ হলে কীভাবে?
–‘নিউইয়র্কে এসেছিলাম বেড়াতে। এখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। কে জানে, বাঁচব কিনা!’
হু হু কান্না সামলানো দায়। ফুঁপিয়ে কাঁদল নীলা। হাসপাতালে হাউমাউ করে কাঁদা যায় না। মৃদুলের কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল। তারপরও ক্ষীণ কণ্ঠে বলল—
–‘মৃত্যুর মুখোমুখি আমি। আমাকে ক্ষমা করতে পেরেছে?’
কী অদ্ভুত প্রশ্ন! মৃদুল কি জানে না, তার প্রতি অসীম ভালোবাসা ছাড়া আর কিছু নেই নীলার। মৃদুলকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পায়নি বলে ভালোবাসা ফুরিয়ে যাবে নাকি? মৃদুল তো ওকে ঠকায়নি। ফিরিয়ে দিয়েছে স্পষ্ট করে। ভণিতা করেনি। প্রতারিত করেনি। ভালোবাসে, সেটাও জানাতে কুণ্ঠিত ছিল না। শুধু জীবনসঙ্গী করেনি। কেন করেনি, এই প্রশ্নটা করতে নীলার খুব ইচ্ছে হলো। ও বলল—
–‘একটা প্রশ্নের জবাব দেবে?’
–‘বলো। আজ দেব’
–‘আমাকে ফিরেয়ে দিয়েছিলে কেন?’
মৃদুল ওর রোদনভরা মুখের দিকে কয়েক মুহূর্ত চেয়ে থেকে নিচু গলায় বলল—
–‘তোমাকে আমি ফিরিয়ে দিতে চাইনি। কিন্তু ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলাম।’
জবাব নয়, যেন একটা লন্ডভন্ড তাণ্ডব। আজ ২৪ বছর পর এ কী কথা বলছে মৃদুল! কেন ও বাধ্য হয়েছিল? কে ওকে বাধ্য করেছিল? প্রশ্নের ছোবল নীলার মনে। নিজের মুখে মাস্ক লাগিয়ে মৃদুলের স্ট্রেচার টেনে নিয়ে আইসিইউ কক্ষে প্রবেশ করল নীলা। এই কক্ষে মৃদুলকে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো হবে। প্রয়োজনে ভেন্টিলেটরও দেওয়া হতে পারে। এখানে ও বেঁচে থাকবে, নাকি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে, তা কেউ বলতে পারে না। করোনাভাইরাসের করাল গ্রাসে মৃত্যুর মিছিল শুধু দীর্ঘ হচ্ছে। আর কী বলা যায়? জিজ্ঞাসার তৃষ্ণা ওর চোখেমুখে। ও নিচু গলায় বলল—
–‘বলবে কি, আমাকে কেন ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলে?’
মৃদুলের শ্বাসকষ্ট বাড়ছে। ও কথা বলতে চেষ্টা করছে, কিন্তু পারছে না। তারপরও ক্ষীণকণ্ঠে বলল—
‘যদি বেঁচে থাকতে পারি, বলব ও কথা। আচ্ছা, আমি কি বাঁচব?’
নীলা এর জবাবে কী বলবে? কী বলা যায়? এখন তো অধিকাংশ রোগী মারা যাচ্ছে। ওদের চোখের সামনেই মরছে। ভেন্টিলেটরের সেবাগ্রহণকারী ৯৭ ভাগ রোগী ইতিমধ্যে মারা গেছে নিউইয়র্কের বিভিন্ন হাসপাতালে। ও মৃদুলের প্রশ্নের কী জবাব দেবে এখন? নীলা লক্ষ্য করল মৃদুল দুচোখ বন্ধ করে নিয়েছে। ও চিৎকার করে ডাকল—
‘ডাক্তার, ডাক্তার, প্লিজ!’