আটকে পড়া স্বদেশিদের পাশে বাংলাদেশি-আমেরিকান চিকিৎসকেরা

করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনে আমেরিকায় আটকে পড়া ২৪২ জন বাংলাদেশি বিশেষ ফ্লাইটে দেশে পৌঁছেছেন। ১৫ মে রাত ১১টায় ওয়াশিংটনের ডুলেস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কাতার এয়ারলাইনসের ভাড়া করা বিশেষ ফ্লাইটে তাঁরা দেশের উদ্দেশে রওনা হন। পরদিন ১৬ মে তাঁরা বাংলাদেশে পৌঁছেছেন। দেশে ফেরার জন্য তাঁদের মেডিকেল সনদের প্রয়োজন ছিল। আর এ ক্ষেত্রে তাঁদের সহযোগিতা করতে তাৎক্ষণিকভাবে এগিয়ে আসেন বাংলাদেশি-আমেরিকান চিকিৎসকেরা।

জানা গেছে, দেশে ফেরার জন্য যাত্রীদের করোনার উপসর্গ নেই বলে সনদ দরকার হয়ে পড়ে। সদন ছাড়া কাতার এয়ারওয়েজ যাত্রী নিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ কারণে টেলিফোনে তথ্য নিয়ে দুই দিনের মধ্যে করোনার উপসর্গ নেই বলে ই–মেইলে সনদ দিয়েছেন বাংলাদেশি-আমেরিকান চিকিৎসকেরা। বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা যাত্রীরা এলাকার চিকিৎসকদের চেম্বার বন্ধ থাকায় উৎকণ্ঠায় ছিলেন। কেউ কেউ ঝুঁকি নিয়ে এমন সনদ দিতে অস্বীকারও করেছেন। এই পরিস্থিতিতে নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট ও ওয়াশিংটনস্থ দূতাবাস চিকিৎসক জিয়াউদদীন আহমেদ (ফিলাডেলফিয়া) এবং প্রতাপ দাসের (নিউইয়র্ক) সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর ওয়েবসাইটে দিলে সবাই সনদের জন্য ফোন করতে থাকেন। জিয়াউদদীনকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন ফ্লোরিডা থেকে বি এম আতিকুজজামান ও বশির আহমেদ, নিউইয়র্ক থেকে চিকিৎসক প্রতাপ দাস, মোহাম্মদ আলম, মো. ইউসুফ আল মামুন, ফেরদৌসী শিল্পী, কেনটাকি থেকে চিকিৎসক আয়েশা শিকদার, বাল্টিমোর থেকে চিকিৎসক রফিক আহমেদ ও বোস্টন থেকে চিকিৎসক ইসমত হাকিম। তাঁরা ৭২ ঘণ্টা মধ্যে বিভিন্ন রাজ্যের ৯৫ জন যাত্রীকে সনদ প্রদান করেন।

করোনার সময়ে হাসপাতালে ব্যস্ততম কর্ম পরিবেশে থেকেও চিকিৎসকেরা এ সেবা দেওয়ায় যাত্রীরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। বিনা অর্থে স্বদেশিদের একান্ত প্রয়োজনে মানবিক সহায়তা ও প্রকৃত সাহায্য দেওয়ায় চিকিৎসকদের প্রতি আটকে পড়া বাংলাদেশিরা কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট বন্ধ হওয়ায় আমেরিকায় বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি আটকা পড়েন। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন তাঁদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে উদ্যোগ নিতে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস ও নিউইয়র্ক কনস্যুলেটকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

বিশেষ ফ্লাইটে বাংলাদেশে ফেরত যাওয়া যাত্রীদের পাশে ভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে নিউইয়র্ক থেকে সহযোগিতা করেছেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ফেরদৌস খন্দকার। তিনি নিউইয়র্ক থেকে গাড়ি চালিয়ে তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে যান। সেখানে যাত্রীদের সুরক্ষার জন্যে তিনি মাস্ক ও গ্লাভস সরবরাহ করেন। এ ছাড়া যাত্রীদের মাধ্যমে বাংলাদেশের সম্মুখ যোদ্ধাদের জন্যে এক হাজার এন৯৫ মাস্ক, এক হাজার কে৯৫ মাস্ক, পাঁচ হাজার গ্লাভস ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার পাঠিয়েছেন তিনি।

ফেরদৌস খন্দকার বলেন, ‘বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে নেওয়ার এই ব্যবস্থা দারুণ একটি উদ্যোগ। অনেকেই করোনার এই সময়ে আটকে পড়েছিলেন। যেহেতু আমি নানাভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি, তাই কিছু সুরক্ষা সামগ্রী পাঠালাম। বাংলাদেশের যেকোনো প্রয়োজনে আমি আছি।’