লকডাউন আগে হলে ৩৬ হাজার কম মৃত্যু হত

আমেরিকায় যে সময়ে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে, তার এক সপ্তাহ আগে যদি লকডাউন ঘোষণা করা হতো, তবে ৩৬ হাজার জীবন বাঁচানো যেত। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজিজ মডেলারদের করা এক নতুন গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

এ সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনের উল্লেখ করে নিউইয়র্ক টাইমস ২১ মে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানায়, কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঠেকাতে আমেরিকায় মার্চের যে সময় থেকে লকডাউন জারি করা হয়েছিল, যদি তা তারও এক সপ্তাহ আগে থেকে জারি করা হতো, তাহলে ৩৬ হাজার আমেরিকান মৃত্যুর কবল থেকে বেঁচে যেত। গবেষকেরা আরও বলছেন, যদি আমেরিকার লোকেরা গৃহবন্দী ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পদক্ষেপটি লকডাউন শুরুর দুই সপ্তাহ আগে, অর্থাৎ ১ মার্চ থেকে শুরু করত, তবে সারা দেশে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৮৩ শতাংশ এড়ানো যেত।

আমেরিকা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি করোনা-আক্রান্ত দেশ। ২১ মে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া সর্বশেষ তথ্যমতে, সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ৫০ লাখ ২৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে শুধু আমেরিকাতেই আক্রান্ত রয়েছে ১৫ লাখ ৫০ হাজারের বেশি। আমেরিকায় মৃত্যুর সংখ্যা এরই মধ্যে ৯৩ হাজার ছাড়িয়েছে।

গবেষকেরা বলছেন, মার্চের শুরুতে ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব হওয়ার কারণে অভাবনীয় মূল্য গুনতে হয়েছে। মার্চের শুরুতেই যদি লকডাউনের মতো পদক্ষেপ নেওয়া যেত, তবে প্রাণহানি অনেক কম হতো। এ ক্ষেত্রে অতি অল্প সময়ের পার্থক্যই অনেক বড় ব্যবধান গড়ে দেয়। কারণ, ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে অনেকটা জ্যামিতিক হারে ছড়ায়।

গবেষক দলের প্রধান ও কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিডেমিওলজিস্ট জেফ্রি শ্যামান নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, ‘এটি অনেক বড় পার্থক্য গড়ে দেয়। ওই অতি ক্ষুদ্র মুহূর্তটি রোগের বিস্তার ঠেকাতে ও মৃত্যুর সংখ্যা অভাবনীয়ভাবে কমিয়ে আনতে এক অবিশ্বাস্যরকম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।’

ইনফেকশাস ডিজিজ মডেলিংয়ের ওপর ভিত্তি করে গবেষণাটি করা হয়েছে। এতে মানুষের চলাচলকে সীমাবদ্ধ করলে রোগটি মধ্য মার্চেই কত কম বিস্তার পেত, সে বিষয়টি নিরূপণ করা হয়েছে।

গত ১৬ মার্চ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম আমেরিকানদের প্রতি সীমিত ভ্রমণ, জনসমাগম এড়িয়ে চলা ও স্কুল বন্ধ রাখার আহ্বান জানান। একই দিনে নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো স্টে-হোম আদেশ দেন, যা কার্যকর হয় ২২ মার্চ থেকে। কিন্তু নিউইয়র্কের মতো শহরের ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপ ছিল অনেক বিলম্বিত।

গবেষকেরা বলছেন, ২০ মে পর্যন্ত পাওয়া খবরে দেখা গেছে, প্রায় সব অঙ্গরাজ্যই খুলে দেওয়ার কথা বলছে। কিন্তু এই অঙ্গরাজ্যগুলোতে যদি কোনো তদারকি ছাড়াই সব খুলে দেওয়া হয়, তবে বড় বিপদ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অঙ্গরাজ্যগুলো খোলার সঙ্গে সঙ্গে কর্মকর্তারা যদি সংক্রমণ পরিস্থিতির নিবিড় নজরদারি না করেন, তবে সহজেই কোভিড-১৯–এর এই প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।