করোনায় বাংলা পত্রিকাগুলোর ভূমিকা

পৃথিবীর দেশে দেশে সত্য, বস্তুনিষ্ঠ, তথ্যপূর্ণ সংবাদ সংগ্রহ ও প্রকাশ আজ সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের জন্য বড়ই ঝুঁকিপূর্ণ। যুদ্ধক্ষেত্রে, দুর্যোগ মুহূর্তে, রাষ্ট্রবিপ্লবে সংবাদপত্র, সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের জীবনবাজি ভূমিকা দীর্ঘদিনের। সংবাদ প্রকাশের প্রতি দায়িত্বশীল সাংবাদিক সংবাদ ও তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত প্রতিক্রিয়াশীল সরকার ও রাষ্ট্রের ক্রীড়নক হতে হয়। নিরাপত্তার ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে সাংবাদিকদের জীবন দিতে হচ্ছে। সংবাদপত্র, সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের নিগৃহীত করতে, তাদের টুঁটি চেপে ধরতে প্রতিটি দেশে রয়েছে নানা অমানবিক ডিজিটাল আইন ও কালাকানুন। সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করা যাবে না। সাংবাদিকের গণতান্ত্রিক মত প্রকাশ চলবে না। সাংবাদিকদের ওপর দমননীতি বা দমনপীড়ন আজ স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে।

করোনাভাইরাসের প্রকোপে সমগ্র বিশ্ব আজ টালমাটাল অবস্থা। বিশ্বের দেশে দেশে মানবজাতি এই প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্ত। উদারনৈতিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় মানুষের জীবন রক্ষায় প্রতিটি দেশের স্বাস্থ্য খাত কাজ করছে, যাদের অবস্থা দীর্ঘ দিনের অবহেলার কারণে ভঙ্গুর। তাদের স্বাস্থ্য খাত যে নিতান্ত অপ্রতুল ও অপর্যাপ্ত এটা আজ দিনের আলোর মতো সত্য। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার দেশগুলোতেই আজ আক্রান্তের হার এবং মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তাদের ভঙ্গুর ও অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্য খাতের দরুন অবস্থা সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অথচ অনেক ছোট ছোট গণতান্ত্রিক জনপ্রতিনিধিত্বশীল রাষ্ট্র অতি সহজেই করোনা আক্রান্তের প্রকোপ সামাল দিতে পেরেছে। পুঁজিবাদি রাষ্ট্র ব্যবস্থার এই ব্যর্থতা তুলে ধরতে এবং প্রকৃত তথ্য ও সংবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে বিভিন্ন দেশে আজ সাংবাদিকেরা রাষ্ট্রযন্ত্রের দমনপীড়নের শিকার হচ্ছে। সাংবাদিকদের জেলে যেতে হচ্ছে। তাদের নানা মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।

তথাপি পৃথিবীব্যাপী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানবজাতির এই বিপন্ন দিনে সাংবাদিক ও সংবাদপত্র বসে নেই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা মানবজাতির বিপন্ন অবস্থায় সরব ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসছেন। নিউইয়র্কের এই প্রবাসে কমপক্ষে ১৫/১৬টি বাংলা সাপ্তাহিক প্রকাশিত হয়ে থাকে। তাদের সবাই বলে থাকেন সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে সমাজের কল্যাণে তাদের এই পত্রিকা প্রকাশ। আসলে পেটের দায়ে যে তাদের বেশির ভাগের এই ব্যবসা, করোনা র প্রকোপে তা প্রমাণ হয়ে গেছে। অস্বীকার করার উপায় নেই লোকজন ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। পত্রিকা প্রিন্ট, বিলি ইত্যাদি এই মুহূর্তে কঠিন। কিন্তু প্রযুক্তির বদৌলতে এখন পত্রিকা শুধু প্রিন্ট হয় না, ইন্টারনেটেও তা প্রকাশিত হয়। এবং এখানকার প্রায় সব পত্রিকারই অনলাইন সংস্করণ প্রকাশিত হতে দেখা গেছে। প্রশ্ন হচ্ছে তাদের সেই অনলাইন সংস্করণ এখন  প্রকাশ হচ্ছে না কেন। কারণ, তারা মানুষের পকেটের টাকা দিয়ে তথা বিজ্ঞাপন ইত্যাদি দ্বারা সমাজের কল্যাণের নামে পত্রিকা বের করে থাকেন। এখন তাদের সমাজের প্রতি দায়িত্ব শিকেয় উঠেছে। একই সঙ্গে কমিউনিটির প্রতি কথিত কল্যাণকামিতা ও দায়িত্ববোধও হাওয়া।

তবে এই বিপন্ন সময়ে চরম প্রতিকূল পরিবেশে এই প্রবাসে সাপ্তাহিক প্রথম আলোসহ আরও তিনটি পত্রিকা তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা শুরু থেকেই করোনা-আক্রান্ত বাঙালি কমিউনিটি, স্থানীয় কমিউনিটি, দেশ ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির দৈনন্দিন আপডেট খুবই সুন্দরভাবে তুলে ধরছে। করোনা পরিস্থিতিতে কমিউনিটির ঘরবন্দী মানুষের করণীয় এবং সরকারের সাহায্য-সহযোগিতা প্রদানের বিষয়বস্তুর  বিশদ বিবরণ তুলে ধরছে। বাঙালি কমিউনিটির কারা মারা যাচ্ছেন, ছবিসহ তাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিবরণ তুলে ধরছে। প্রথম আলোর এই তথ্য-বিবরণ পরিবেশন ও নানাবিধ আবেদন প্রশংসার দাবি রাখে নিঃসন্দেহে। করোনাকালেও তাদের প্রিন্ট সংখ্যা নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। বিলি ব্যবস্থায় শুরুতে সমস্যা থাকলেও পরে যথারীতি সব এলাকার গ্রোসারিগুলোতে বিলি হচ্ছে। মানুষের কাছে প্রশংসিতও হচ্ছে।

প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার ন্যায় সাপ্তাহিক নবযুগেরও অনলাইন সংস্করণের পাশাপাশি প্রিন্ট সংস্করণ প্রকাশিত হচ্ছে। পাশাপাশি প্রকাশক ও সম্পাদক স্বামী-স্ত্রী দুজন ফেসবুকে পত্রিকার সংবাদ নিয়ে যে লাইভ ধারাবর্ণনা ও বিশ্লেষণ করছেন, তা বেশ আকর্ষণীয় এবং প্রশংসার দাবি রাখে। 

সাপ্তাহিক বাঙালি ও সাপ্তাহিক বর্ণমালা কমিউনিটির বিভিন্ন লেখকের লেখনী নিয়ে কেবল অনলাইন সংস্করণ প্রকাশ করে চলেছে। এই দুর্যোগ মুহূর্তে প্রতিকূল অবস্থা উপেক্ষা ও মোকাবিলা করে প্রথম আলোসহ অন্যদের ভূমিকা ও অবদান নিশ্চয়ই কমিউনিটি ভুলবে না। অবশ্যই আগামী দিনে কমিউনিটি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে তাদের এ অবদানকে স্মরণ রাখবে।