লকডাউনে সংস্কৃতিচর্চা: নিউইয়র্কের খণ্ডচিত্র

শিরোনামের খণ্ডচিত্র এ জন্য যে লেখাটি নিউইয়র্কের একটা সীমিত গণ্ডি থেকে নেওয়া। এখানে আমার পদচারণ আছে, নিয়মিত না হলেও। চিন্তা করলে আমি বিস্মিত হই, কীভাবে মানুষ এই বিপদের সময় চারদিকে মৃত্যুর বিভীষিকার চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়ার, বিনোদনের, তদুপরি সৃষ্টির এত সুন্দর ও অর্থবহ পরিকল্পনা করতে পারে। তাও আবার সামষ্টিকভাবে।

প্রস্তাবটি কবি কাজী জহিরুল ইসলামের মাথা থেকে আসে এবং অচিরেই তা কবি ড. মাহবুব হাসান, সাহিত্যিক আবদুল্লাহ জাহিদ, ড. আশরাফ আহমেদ, রওশন হক ও আরও কয়েকজনের সমর্থন ও অনুপ্রেরণায় বাস্তব রূপ নেয়। সম্ভবত মার্চ মাসের ২৪ বা ২৫ তারিখ থেকে এর কার্যক্রম শুরু হয়। ‘কবিতা পাঠ’ নামে কবি কাজী জহিরুল ইসলাম কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব নিয়ে এই একঘেয়ে করোনাকালের বন্দিজীবনে নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতার জন্য একটি মেসেঞ্জার গ্রুপ তৈরি করেন, যা অচিরেই প্রতিদিন নিয়মিত কবিতা পাঠ ও সাহিত্য আলোচনার আসরে পরিণত হয়।

শুরুতে কবি জাহিদুল হক, দিলারা হাফিজ, মাহবুব হাসান, ফেরদৌস সালাম, নুরুল হক, কামরুজ্জামান, মৌ মধুবন্তি, আশরাফ আহমেদ, আনিস আহমেদ, রেজাউদ্দিন স্টালিন, বদরুজজামান, এনাম রাজু, ফারুক আজম, মাহবুব সালেহ, মৃধা আলাউদ্দিন, আবদুল্লাহ জাহিদ প্রমুখ এতে যোগ দেন। আমার যদ্দুর মনে পড়ে, জনা ১৪ নিয়ে শুরু হওয়া এ যাত্রায় সপ্তাহখানেকের মধ্যে ঢাকা থেকে ফেরদৌস সালাম, নর্থ ক্যারোলাইনা থেকে ধনঞ্জয় সাহাও যোগ দেন। লিজি রহমানও কয়েকবার অংশগ্রহণ করেন। অনলাইনের এ আড্ডায় যোগদানের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়তেই থাকে। আলোচনা সভায় বিশিষ্টজনদের মধ্যে জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, পূরবী বসু, কবি ইকবাল হাসান, জয়ন্ত নাগ, কবি দিলারা হাশেম ও মেহেদি হাসান অংশ নেন।

‘কফি ও কবিতা’ নাম দিয়ে খুব সম্ভবত ২৩ এপ্রিল থেকে মৌ মধুবন্তি ও আবদুল্লা জাহিদ আরও ৪৫ জনকে নিয়ে বৃহত্তর কলেবরে কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকে কাজ শুরু করেন। এই গ্রুপ কাজ শুরু করে জুম লাইভ প্ল্যাটফর্ম থেকে। এতেও প্রাণপুরুষ হিসেবে কাজী জহিরই অবশ্য আছেন। গতানুগতিক কবিতা পাঠ ও আলোচনা ছাড়াও ‘যুগলবন্দী’ নামে ভিন্ন ধারার কবিতা পাঠ ও আলোচনা আয়োজনে প্রোগ্রামটিতে অন্য মাত্রা সংযোজিত হয়েছে। কিছু উদাহরণ দিলে বোঝা যাবে যুগলবন্দীর কাঠামো ও চরিত্র। এ ধারার কয়েকটির শিরোনাম ছিল : ‘সুবোধ সরকার ও কাজী জহিরুল ইসলামের কবিতা’, ‘জীবন বিশ্বাসের গান ও কাজী জহিরুল ইসলামের কবিতা’, ‘গান-কবিতার যুগলবন্দীতে কাজী জহিরুল ইসলাম ও সুজিত মুস্তফা’ প্রভৃতি। কফি ও কবিতা আরও যে কারণে বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে, তা এর বিস্তৃতি। বাংলাদেশ, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, ভারত প্রভৃতি অনেক দেশ থেকে কবি, সাহিত্যিকেরা উৎসাহের সঙ্গে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।

করোনার দুশ্চিন্তা থেকে সাময়িক মুক্তির সঙ্গে সঙ্গে সামাজিকীকরণও হচ্ছে, আবার বিনোদন এবং সৃজনশীল সাহিত্যকর্মও চলছে প্রতিদিন। জয়তু কফি ও কবিতা!