করোনাকালে ঈদ ও চাঁদরাতের কেনাকাটা

ঈদের আগের দিন চাঁদরাতে ব্রঙ্কসের একটি কাপড়ের দোকানে কেনাকাটা করতে এসেছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ছবি: সংগৃহীত
ঈদের আগের দিন চাঁদরাতে ব্রঙ্কসের একটি কাপড়ের দোকানে কেনাকাটা করতে এসেছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ছবি: সংগৃহীত

এমন বিবর্ণ ঈদ এর আগে কেউ দেখেনি। ৩০ রমজান পেরিয়ে গেলেও কোনো ইফতার পার্টি বা ইফতারি দেওয়া–নেওয়া হয়নি। আত্মীয়স্বজনের মুখ দেখাদেখিও নেই। এভাবে রমজানের দিনগুলো পেরিয়ে গেলেও সব শঙ্কা কাটিয়ে উঠে প্রবাসে হঠাৎ করে এখন সবার মধ্যে দেখা যাচ্ছে ঈদের আনন্দ।

কয়েক দিন ধরে আলোচনা চলছিল, আমেরিকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে প্রত্যেকের ঘরে ঘরে নামাজ পড়ার। কিন্তু হঠাৎ করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং পরে নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোর ঘোষণায় এখন প্রবাসীরা নড়েচড়ে বসেছেন। ১০ জনের গ্রুপে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সমবেত হওয়া যাবে—এই ঘোষণায় অন্ধকারেও আশার আলো দেখতে পেয়েছেন তারা।

নিউইয়র্কে বাংলাদেশি–অধ্যুষিত ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টারে গিয়ে দেখা গেল, কাপড়ের দোকানগুলোতে বেশ ভিড়। বাইরেও ক্রেতাদের লাইন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ৬ ফুট দূরত্বে সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন কেনাকাটার জন্য। প্রতিটি দোকানের গেটে একজন দাঁড়িয়ে লাইন নিয়ন্ত্রণ করছে।

পার্কচেস্টারের সবচেয়ে বড় কাপড়ের দোকান প্রতিদিন ফ্যাশনের মালিক আফজাল আহমেদ কয়েকজন কর্মচারী নিয়ে গ্রাহক সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। তিনি বলেন, শেষ মুহূর্তে হলেও ঈদের কেনাকাটা হবে সে ধারণা নিয়ে আগেই ভারত থেকে ডিজাইনের পোশাক অর্ডার দিয়ে নিয়ে এসেছিলাম। এক সপ্তাহ ধরে মোটামুটি বেচ কেনা হয়েছে। আজ সকাল থেকেই ভালো বেচাকেনা হচ্ছে। সন্ধ্যার পর আরও বেশি বেচাকেনা হবে বলে আশা করছি।

প্রতিদিন ফ্যাশনের পাশেই টাঙ্গাইল শাড়ি ঘর, রেমন্ড ফ্যাশন, নিশাত অ্যালিগ্যান্টসহ অন্যান্য বস্ত্র বিপণিগুলোতেও ঈদ কেনাকাটায় ক্রেতার ভিড় লক্ষ করা গেছে। গ্রোসারিগুলোতেও ছিল চোখে পড়ার মতো ভিড়। আল আকসা গ্রোসারির বাইরেও ছিল অনেক লম্বা লাইন। পাশের ইত্যাদি গ্রোসারি, প্রিমিয়াম গ্রোসারি, পসরা গ্রোসারিসহ সবগুলোতেই ছিল দীর্ঘ লাইন। এখানে ক্রেতাদের কেনাকাটার তালিকায় ছিল মাংস, পোলাওয়ের চাল, সেমাই, গরমমসলা ইত্যাদি।

রেস্টুরেন্টগুলোতে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে দই। খলিল বিরিয়ানির স্বত্বাধিকারী খলিলুর রহমান বলেন, অন্য দিনের চেয়ে গত রাতে একটু বেশি পরিমাণ দই তৈরি করা হয়েছিল। বিকেলেই সব ফুরিয়ে গেছে। এখন নতুন করে আবার দই তৈরি করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আগামীকাল ঈদের দিন বিরিয়ানি ক্যাটারিংয়ের অর্ডার পেয়েছি। পাশাপাশি চায়নিজ খাবারের অর্ডারও আছে। অনেকেই ঈদের দিনে গ্রুপ করে হলেও আত্মীয়স্বজনদের নিয়ে পুনর্মিলনী করতে চান।

আল আকসা রেস্টুরেন্টের রয়েছে নিজস্ব মিষ্টি তৈরির কারখানা। তাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ঢাকা সুইটসের মিষ্টি দোকানে রাখা হয়েছে। বেচাকেনাও হচ্ছে খুব। এই রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক আলী হায়দার বলেন, বেচাকেনা ভালোই হচ্ছে। গভর্নরের ঘোষণা আরও আগে এলে মানুষ আরও জমজমাট ঈদ করতে পারত। আমরাও লাভবান হতাম।