করোনাকে নিয়েই সামনে চলার প্রস্তুতি নিচ্ছে নিউইয়র্ক

করোনাভাইরাস নির্মূল হয়নি, তারপরও ধাপে ধাপে খুলে দেওয়া হচ্ছে নিউইয়র্ক। নগরবাসীও প্রয়োজনে সতর্কতা নিয়ে বাইরে আসতে শুরু করেছে। ছবিটি ২৭ মে ম্যানহাটন থেকে তোলা। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাস নির্মূল হয়নি, তারপরও ধাপে ধাপে খুলে দেওয়া হচ্ছে নিউইয়র্ক। নগরবাসীও প্রয়োজনে সতর্কতা নিয়ে বাইরে আসতে শুরু করেছে। ছবিটি ২৭ মে ম্যানহাটন থেকে তোলা। ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাসের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিয়ে বসবাস করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে করোনায় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর নগরী নিউইয়র্ক। করোনাভাইরাস সহজে নির্মূল হবে না এমন ধারনা প্রকট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন স্বাভাবিকত্ব নিয়ে এগিয়ে চলার প্রস্তুতি চলছে। নিউইয়র্কে করোনায় সংক্রমিত হলে নিজ ঘরে আইসোলশন সুবিধা না থাকলে হোটেল দেওয়া হবে। খাবার, চিকিৎসা ও লন্ড্রিসহ সব ব্যয়ভার নগরী বহন করবে। হাজারো কন্ট্যাক্ট ট্রেসার নিয়োগ করা হচ্ছে। নগরীতে এর মধ্যেই দিনে ২৭ হাজার লোকের করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হচ্ছে। আসছে সপ্তাহের মধ্যেই দিনে ৫০ হাজার লোকের পরীক্ষা করার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

আমেরিকায় করোনায় সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে গেছে। রাজ্য নয়, শুধু নিউইয়র্ক নগরীতে ২৭ মে পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়ে নিশ্চিত মৃত্যু হয়েছে ১৬ হাজার ৫৬৫ জনের। করোনা সন্দেহে মৃত্যু হয়েছে আরও চার হাজার ৭৪৯ জনের। এর বাইরেও কিছু মৃত্যু তালিকায় আসেনি। গত আড়াই মাসে সারা বিশ্বের অন্য কোনো নগরীতে এত বেশি মৃত্যু ঘটেনি। নিউইয়র্কের অবস্থা অনেকটাই নাজুক। নগরীর মেয়র বিল ডি ব্লাজিও নয় বিলিয়ন ডলারের বাজেট ঘাটতির কথা জানিয়েছেন। মেয়র ফেডারেল ও রাজ্য সরকারের কাছে জরুরি সাহায্যের আবেদনও করেছেন। ২৭ মে মেয়র সাংবাদিকদের জানান, নগরীর কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য ফেডারেল সরকারের কাছে অনুদান চাওয়া হয়েছে। রাজ্যের আইনপ্রণেতাদের কাছে সাত বিলিয়ন ডলার ধার করার জন্যও আবেদন জানানো হয়েছে। বিপর্যস্ত এ সময়ে নাগরিকদের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য, জীবন রক্ষার জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

মেয়র জানিয়েছেন, নগরীতে শত শত রিসোর্স নেভিগেটর নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এসব লোকজন করোনা সংক্রমিত মানুষকে ঘরে বা হোটেলে কোয়ারেন্টিনে থাকার জন্য সহযোগিতা করবে। বিভিন্ন কমিউনিটি সংগঠন থেকে ২০০ জনকে নিয়োগ করা হচ্ছে, যারা করোনায় সংক্রমিত মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছে দেবে, ওষুধ সরবরাহ করবে এবং শারীরিক মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহযোগিতা করবে।
মেয়র বলেন, নিউইয়র্কের বেশ কিছু অনগ্রসর এলাকায় বসবাসরত লোকজন করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন আইসোলেশন সমস্যার কারণে। এক ঘরে অনেক লোকজনের বসবাস, একই বাথরুম বা রান্নাঘর ভাগ করে বসবাস করার কারণে অনেকে চেষ্টা করেও আইসোলেশনে যেতে পারেননি। নগরী থেকে নিয়োগ পাওয়া লোকজন এখন এসব অবস্থান বিবেচনা করে পরামর্শ দেবে। ঘরে আইসোলেশন সম্ভব না হলে তাঁদের হোটেলে পাঠানোর ব্যবস্থা নেবে। এর মধ্যেই নগরীতে এমন ১ হাজার ২০০ হোটেল বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই তিন হাজার হোটেল বেড করোনায় সংক্রমিতদের জন্য ব্যবস্থা করা হবে। এমন সুবিধা ১৪ দিনের জন্য দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

নিউইয়র্ক নগরীতে আসছে সপ্তাহের মধ্যে দিনে ৫০ হাজার লোকের ভাইরাস টেস্টিং সুবিধা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ১ জুনের মধ্যে নগরীর স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে ১ হাজার ৭০০ জন কন্ট্যাক্ট ট্রেসার সংযুক্ত হবেন, জুনের প্রথম দিকেই এ সংখ্যা ২৫ হাজার করা হবে এবং ক্রমান্বয়ে ১০ হাজার কন্ট্যাক্ট ট্রেসার নগরীতে কাজ করবেন বলে মেয়র জানিয়েছেন। জুন মাসের মধ্যেই নগরীর ১৮০টি স্থানে করোনা টেস্টিং করা যাবে বলে মেয়র আশা প্রকাশ করেন। নিউইয়র্ক নগরীতে প্রায় দুই লাখ করোনা সংক্রমণ সনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে নিউইয়র্কে সংক্রমণ ছড়িয়ে পরার পর থেকে এ পর্যন্ত ৫১ হাজার ২৫৭ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে বলে মেয়র জানান।

এদিকে নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো আরেক দফা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সভা করেছেন। ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের পর কুমো বলেছেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সব সময়েই গভর্নর কুমোর সমালোচনা করে আসছেন। কুমো নিজেও ট্রাম্পকে সমালোচনা করতে ছাড়েননি। ২৭ মের বৈঠকের পর কুমো বলেছেন, রাজনীতির বৈরীতাকে এক পাশে রেখেই তাঁরা আলোচনা করেছেন। করোনা বিপর্যয়ের পর নিউইয়র্ককে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। ধাপে ধাপে সব খুলে দেওয়া হচ্ছে। মধ্য জুনেই নিউইয়র্কের অধিকাংশ খুলে দেওয়ার কাজ চলছে সতর্কভাবে। যদিও রাজ্যের বিপর্যস্ত অর্থনীতি কতটা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে এবং ঘুরে দাঁড়াতে কতটা সময় নেবে, এ নিয়ে কেউই নিশ্চিত নয়।

গভর্ণর কুমো রাজ্যজুড়ে ব্যাপক অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পর বলেছেন, বাপ দাদাদের রেখে যাওয়া অবকাঠামো আমরা সন্তানদের জন্য রেখে যেতে পারি না। রাজ্যজুড়ে ব্যাপক অবকাঠামো নির্মাণ, নতুন নতুন স্থাপনা নির্মাণ নিয়ে কাজে নেমে পড়তে চান গভর্নর কুমো। এ নিয়ে অর্থ সাহায্য চেয়েছেন ফেডারেল সরকারের কাছে। যে রাজ্য সব সময় কেন্দ্রকে অর্থ দিয়ে আসছে অন্য রাজ্যের চেয়ে বেশি, সে রাজ্যের সংকটের সময় কেন্দ্র এগিয়ে আসবে-এমন দাবি করছেন কুমো। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সব শুনেছেন। তাঁর প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে পরের সপ্তাহে গভর্নরের সঙ্গে আবার কথা বলবেন বলে কুমো সভা শেষে জানিয়েছেন।