পঞ্চকবির গানালাপে ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়

সদ্যপ্রয়াত অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সঙ্গে শিল্পী ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়
সদ্যপ্রয়াত অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সঙ্গে শিল্পী ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়

এই লকডাউন সময়ে অনলাইন ভিত্তিক প্রোগ্রাম বেড়ে গেছে। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে এখন লকডাউনের মধ্যে থেকেও মহাব্যস্ত ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজ শহর কলকাতায় ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও করোনা মহামারির সংক্রমণের কারণে মন খারাপ থাকলেও নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন সৃষ্টিশীল কাজে। ২৪ মে প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা ঈদের আড্ডায় গান করেছেন। ১ জুন প্যারিসে বসবাসকারী রবিশঙ্কর মৈত্রীর সঙ্গে পঞ্চকবির গানালাপে অংশ নিচ্ছেন। সহজ মানুষ পর্যায়ে এটি ঋদ্ধির দ্বিতীয় অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান শুরু হবে নিউইয়র্ক স্থানীয় সময় সকাল ১১টায়। এর আগে ২৩ মে সহজ মানুষ পর্যায়ে অংশ নিয়েছিলেন ঋদ্ধি। পঞ্চকবির প্রতি ভালোবাসা ও নিবেদন সহজ মানুষের বিষয়বস্তু।
বলা যেতে পারে এই লকডাউনে নিজের লাইব্রেরি রুমে সমস্ত পৃথিবী এসে ধরা দিয়েছে ঋদ্ধির। যেখানে আছে যেমন অনলাইন ক্লাস, তেমনি অনলাইন গানালাপ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রজনীকান্ত, অতুলপ্রসাদ, নজরুল ও পুরোনো গান শেখানো চলছে পুরোদমে। বিশ্বের বাংলা ভাষী যে কেউ এখানে শিক্ষার্থী হতে পারে। তেমনি আজ অস্ট্রেলিয়া, কাল আমেরিকা ও পরশু ইউরোপ-এভাবে তিনি গান শেখাচ্ছেন। হারানো দিনের গানের আর্কাইভ করছেন। আর শেখানোর মাধ্যমে চেষ্টা করছেন যাতে করে এসব গান আরও ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে।
প্যারিসের অনুষ্ঠানের সম্পূর্ণটাই হলো কবিতা ও গানের মেলবন্ধন। বাংলাদেশের কিছু গান সেখানে গাইবেন ঋদ্ধি। এই নিয়ে শিল্পী বলেন, ‘দেশে দেশে মোর ঘর আছে। শিল্পের সেই শেকড়কে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য। গৃহবন্দী, তাতে কী হয়েছে। উদ্যম থাকলে তার উপায় হয়! আর আমি ভারতে বাস করলেও আমার শিকড় বাংলাদেশে, যেখানে মানুষদের কেউ দমিয়ে রাখতে পারে না। বাংলাদেশ থেকে কোনো ডাক এলে কখনো না করতে পারি না।’
ঋদ্ধি কলকাতা থেকে শেষে বিষাদময় কণ্ঠে বলেন, ‘খুব খারাপ লাগে ভাবতে যে, আমাকে পঞ্চকবির কন্যা খেতাব যিনি দিয়েছেন, তিনি কিছুদিন আগে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি হলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। বাংলাদেশে এক অনুষ্ঠানে তিনি আমাকে এই নামটা দেন। আমার আগামী অনুষ্ঠানটি আমি তাঁকে নিবেদন করব।
ঋদ্ধিকে বলা যায়—রূপে লক্ষী, আর গুণে সরস্বতী। সৃষ্টিকর্তা যেন সবকিছু উপুড় করে দিয়েছেন তাঁকে। ক্যারিয়ারের শুরু হয়েছিল নাটকের গান দিয়ে। এখন পঞ্চকবির গান ও সেই গবেষণা নিয়ে ব্যস্ত এ শিল্পী। বাবা অধ্যাপক সত্যপ্রকাশ চট্টোপাধ্যায় আর মা স্কুলের প্রধান শিক্ষক রমা চট্টোপাধ্যায়ের একমাত্র সন্তান ঋদ্ধি লেখাপড়াতেও ছিলেন অসম্ভব মেধাবী। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় মানবিক বিভাগে মেয়েদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন। ইতিহাস নিয়ে ভর্তি হন লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করেন এর পর। ঋদ্ধির বাবা ফরিদপুরের, আর মা রংপুরের মানুষ। সেই হিসেবে নিজেকে তিনি বাংলাদেশের মানুষ মনে করেন।