করোনায় রন জেরেমির বৃক্ষ প্রেম

জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা গাছটি জড়িয়ে ধরে আছেন অভিনেতা রন জেরিমি। ছবি: টুইটারের সৌজন্যে
জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা গাছটি জড়িয়ে ধরে আছেন অভিনেতা রন জেরিমি। ছবি: টুইটারের সৌজন্যে

শৈশবের পুরোনো স্মৃতি আঁকড়ে থাকা মানুষের অভ্যাস। বারবার মানুষ শৈশবে ফিরে যেতে চায়। গাড়ি নিয়ে বেসাইড গিয়েছিলাম। ছোট জটলা দেখে গাড়ির গতি ধীর করে দেখার চেষ্টা করলাম। এ সময়ে ভিড় দেখলে স্বাভাবিকভাবেই মানুষ বিচলিত হবে। আমি ধরেই নিয়েছিলাম হয়তো কোনো বাসা থেকে করোনা রোগী বের করে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে। বাঙালি মানেই ভিড় বা জটলা পছন্দ করে। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। এখন সংবাদের খোঁজে আমি এমন দৃশ্যর খোঁজেই থাকি। সামান্য এগিয়ে যেতেই চোখে পড়ল কন এডিসনের গাড়িবহর। সঙ্গে পুলিশের গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্সও রয়েছে। আশপাশের বাসা-বাড়ি থেকে মানুষ বেরিয়ে সোশ্যাল ডিসটেনস মেনেই রাস্তায় দাঁড়ানো। আমিও আমার বরের ধমক উপেক্ষা করে তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। দেখে তো চোখ কপালে উঠে গেল!
এ কী! এক বয়স্ক লোক একটা বিশাল আকৃতির ম্যাপল গাছের গোড়া জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বৃক্ষপ্রেমিক লোকটির নাম রন জেরেমি। গাছটি তাঁর বাবা তাঁর জন্মের সময়ে লাগিয়েছিলেন। তাঁর বাসার নম্বর ৬১-২৪ বেল ব্লুবাড, বেসাইড, কুইন্স।
জেরেমি চিঠি, ই-মেইল ও টুইটার করে তাঁর ছোটবেলার স্মৃতি ম্যাপল গাছটিকে বাঁচাতে সিটি বরাবর অনুরোধ করেছেন। সিটি তাঁর অনুরোধ উপেক্ষা করে গাছটিতে হলুদ ফিতায় কর্ডন করে দেয়। প্রতিবেশীদের ফোন পেয়ে তিনি লকডাউন না মেনে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে গাছ বাঁচাতে চলে আসেন।
আমাকে কিছু নোট করতে দেখে পুলিশ কর্মকর্তা এসে সরে যেতে অনুরোধ করলেন। আমি আমার প্রেস আইডি দেখালে কিছু না বলে পুলিশ সরে গেলে সাহস পেয়ে আমি ভিড়ের আরও কাছে গেলাম। অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম বুড়ো লোকটা গাছটিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন আর বলছেন, ‘প্লিজ সেভ মাই ট্রি।’ ছবি তুলতে গেলে পুলিশ আমাকে বাধা দিল। আমি ছবি তোলা থেকে বিরত থাকলাম।
কন এডিসন আমেরিকার বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্ব পালন করে। বিভিন্ন এলাকায় তারা টহল দেয়। মানুষের ঘরবাড়ি বা বিদ্যুতের তারের সমস্যা হবে দেখলেই সে সব গাছ ট্রিম করে কখনো বা কেটে নিয়ে যায়। ঝড়ের পূর্বাভাস থাকলেও গাছ কাটা দলের গাড়ি হাজির হয়। তাদের বিরুদ্ধে কোথাও কোনো অভিযোগ নেই। ছোটখাটো যেকোনো সমস্যায় কল করলেই অনায়াসে তাদের সাহায্য পাওয়া যায়। তাদেরই একজন কন এডিসন কর্মকর্তা মার্ক জানালেন, গাছটি এখন কন এডিসনের পার্ক ডিপার্টমেন্টের। গাছটি বেশি বড় হয়ে যাওয়ায় তাদের এই গাছটি কেটে ফেলতে হবে। গাছটি এখন সিটির সম্পত্তি এবং এর ডালপালা আশপাশের মানুষের বৈদ্যুতিক তারের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এলাকাবাসী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানলাম, জেরেমি নাকি অ্যাডাল্ট ফিল্মে অভিনয় করেন। এ দেশে নগ্ন দৃশ্য ছাড়াও অস্ত্র বা ড্রাগ নিয়ে করা ছবিকেও অ্যাডাল্ট বা ১৮ প্লাস মুভি বোঝায়। তাঁকে দেখে আমার খুব সাধারণ একজন বৃক্ষপ্রেমিক ছাড়া তেমন কিছু মনে হলো না। তাঁকে আমি না চিনলেও তিনি যে একজন স্টার বুঝতে পারি তাঁর বাড়ির আশপাশে মানুষের কৌতূহলী ভিড় দেখে। তাঁর নাম রন জেরেমি। কুইন্সে তাঁর শৈশব স্মৃতি বিজড়িত গাছ বাঁচানোর জন্য লড়াই করছেন। জানা যায়, চলচ্চিত্র তারকা রন জেরেমি যেদিন জন্মগ্রহণ করেছিলেন সেদিন তাঁর বাবা তাঁদের নিউইয়র্কের বাড়ির বাইরে যে গাছটি লাগিয়েছিলেন, তাকে তিনি নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসেন।
গাছটি বড় হয়ে যাওয়াতে সিটির সম্পত্তির তালিকায় স্থান পেয়েছে। তাই কন এডিসনের অনুরোধে পার্ক ডিপার্টমেন্ট এটি কাটতে এসেছে। জেরেমি ২৩ মে টুইটারে গাছটি জড়িয়ে ধরে ছবি পোস্ট করেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘আমার জন্মের দিন আমার বাবা এই গাছটি রোপণ করেছিলেন। দয়া করে কন এডিসনকে বাধা দিন। তারা এই গাছটিকে আমার কাছ থেকে ছিন্ন করতে পারে না। আমি সারা জীবন এই গাছের দেখাশোনা করেছি। তারা বছর কয়েক আগেও এই গাছ কেটে ফেলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আমি তাদের কাটতে দিইনি। এবারও দেব না।’
গাছটি বর্তমানে শহরের সম্পত্তি। জেরেমির টুইটের জবাবে কন এডিসন বলছে, পার্ক ডিপার্টমেন্ট এটি অপসারণ করতে পারে। আশপাশের বিদ্যুতের লাইনের সম্ভাব্য ক্ষতি বিবেচনায় নিয়ে তা এড়াতে গাছটি সরিয়ে ফেলা হবে কি না, তা স্থির করার বিষয়টি সিটির ওপর নির্ভর করে।
এনওয়াইসি পার্কস ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে যে তারা জেরেমির শৈশবের বাড়ির সামনে গাছের সঙ্গে ব্যক্তিগত মানসিক বন্ধন ও সংযুক্তিটির প্রশংসা করে। বার্তায় বলা হয়েছে, আমাদের শহরের রাস্তার গাছগুলো কেবল পরিবেশের সম্পদ নয়। তারা আমাদের মনের শেকড়ের সঙ্গেও যুক্ত। আমরাও গাছ কাটতে পছন্দ করি না।
পার্ক বিভাগ আরও বলেছে, তারা মাসের শুরুর দিকে গাছটি পরিদর্শন করে। তারা বুড়িয়ে যাওয়া ম্যাপল গাছটিকে খারাপ অবস্থায় দেখতে পান এবং এর ডালপালা মানুষের জন্য হুমকির কারণ বলে তারা মনে করে। তা ছাড়া গাছটির গোড়া বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। যেকোনো সময় গাছটি রাস্তায় উপড়ে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর শাখাগুলো বিদ্যুতের লাইনের কাছাকাছি থাকায় কন এডিসন গাছটি সরিয়ে দেওয়ার আগে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে ছাড়পত্র সরবরাহ করবে বলে জেরেমিকে জানিয়েছে।