বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে ট্রাম্পের মুখ ফেরানোর কারণ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশ কিছুদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা নিয়ে চীনের পক্ষে কথা বলে । ডব্লিউএইচওকে চীনের ‘পুতুল’ বলেও তিরস্কার করেন ট্রাম্প। এই সংস্থার বিরুদ্ধে এর আগে বিষোদগার করে অর্থায়ন বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এবার তিনি সরাসরি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক না রাখার কথা বলে দিলেন।

শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রে রোজ গার্ডেনে এক বক্তব্যে ট্রাম্প সংস্থাটি থেকে সরে আসতে পারেন বলে জানান। ‘নিউইয়র্ক টাইমস’–এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

চীনের সরকারকে দোষারোপ করে ট্রাম্প বলেন, ‘চীন সরকারের কুকর্মে বিশ্ব এখন ভুগছে। অগণিত জীবন চলে গেছে এবং বিশ্বজুড়ে গভীর অর্থনৈতিক কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।’

‘নিউইয়র্ক টাইমস’ জানিয়েছে, ট্রাম্প তাঁর ১০ মিনিটের ভাষণে ভাইরাসে এক লাখের বেশি মার্কিন নাগরিকের মৃত্যুর জন্য কোনো দায় নেননি। তবে চীন বিশ্বব্যাপী মহামারি ছড়িয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা বেইজিং মহামারিসংক্রান্ত কোনো তথ্য লুকিয়েছে, এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বেইজিংয়ের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, করোনা পরিস্থিতিতে নিজের প্রশাসনের ব্যর্থতা ঢাকার উপায় হিসেবে মনোযোগ অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা করছেন ট্রাম্প।

ট্রাম্পের ঘোষণার জবাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে শনিবার নাগাদ প্রতিক্রিয়া জানানোর কথা বলা হয়েছে।

গত এপ্রিলে ট্রাম্প বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ‘চীনকেন্দ্রিক’ সংস্থা বলে অভিযোগ তোলার পর সংস্থাটির পরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেন, ‘কোনো দেশকেন্দ্রিক বলা ভুল। আমরা নিশ্চিত যে আমরা চীনকেন্দ্রিক নই। সত্যটা হলো, আমাদের যদি দোষারোপ করতে হয় তবে আমাদের যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক বলে দোষারোপ করা যায়।’

মার্কিন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ট্রাম্পের ঘোষণাকে সতর্কসংকেত হিসেবে দেখছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) সাবেক পরিচালক থমাস ফ্রাইডেন বলেন, ‘আমরা সংস্থাটিকে গড়তে সাহায্য করেছিলাম। ১৯৪৮ সালে এটি গড়ার পর থেকে এর অবিচ্ছেদ্য অংশ আমরা। এটা বিশ্বের অংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া মানে বিশ্বকে আরও অনিরাপদ করে তোলা।’

কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়াই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে ট্রাম্প বেরিয়ে আসবেন কি না, তা এখনো জানা যায়নি। এ ঘটনায় ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের পক্ষে নেই। তারা দ্রুত নেতিবাচক প্রতক্রিয়া দেখিয়েছে। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই এমন হুমকি দিয়ে আসছিলেন ট্রাম্প।

ট্রাম্প বলেন, ‘জরুরিভাবে নিজেদের সংস্কারে তারা আমাদের অনুরোধ রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা আজ থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ইতি টানছি। সেখানে করা অর্থায়নের টাকা ফেরত এনে বিশ্বের যেসব জায়গায় মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নয়নের দরকার, সেখানে খরচ করা হবে।’

করোনাভাইরাস ইস্যুতে চীনের কাছে জবাব চেয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘ভাইরাসের ব্যাপারে বিশ্বের কাছে চীনকে জবাব দিতে হবে। আমাদের স্বচ্ছতা থাকা উচিত।’

ট্রাম্প অভিযোগ করেন, করোনার বিষয়ে চীনের কাছে যেসব তথ্য ছিল, তা তারা ঠিকমতো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে জানায়নি। তিনি বলেন, বিশ্বকে ‘বিভ্রান্ত’ করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওপর চাপ প্রয়োগ করেছিল চীন।

ট্রাম্প বারবার অভিযোগ করছেন, বিশ্বব্যাপী মহামারি সৃষ্টিকারী ভাইরাসটি চীনের পরীক্ষাগার (ল্যাব) থেকে এসেছে। তাঁর পুনর্নির্বাচিত কর্মসূচি ভন্ডুল করতেই চীন আগেভাগে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেনি। ট্রাম্প মার্কিন গোয়েন্দাদের ভাইরাসটির উৎপত্তি সম্পর্কে আরও সুনিশ্চিত করতে নির্দেশ দেন।

এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কঠোর সমালোচনা করে ট্রাম্প বলেছিলেন, সংস্থাটির লজ্জা হওয়া উচিত। তারা যেন চীনের জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান বা পিআর এজেন্সির ভূমিকা পালন করছে।

১৮ মে ট্রাম্প হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, আগামী এক মাসের মধ্যে যদি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখাতে না পারে, তবে সংস্থাটিতে অর্থায়ন স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ‘চীনের পুতুল’ বলেও তিরস্কার করেন তিনি।

এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে ডব্লিউএইচওকে অর্থায়ন স্থগিত করার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, সংস্থাটি বেইজিংঘেঁষা ও তাদের হয়ে কথা বলছে। করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ে অব্যবস্থাপনার অভিযোগও তোলেন তিনি।

হুমকির ১২ দিনের মাথায়ই সরাসরি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে সম্পর্ক ছেঁটে ফেলার ঘোষণা দিয়ে দিলেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের সমালোচকেরা বলছেন, ট্রাম্প উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। যিনি এর আগে চীনের প্রতিক্রিয়ার প্রশংসা করেছিলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মহামারি পরিচালনার ব্যর্থতা থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।