২০২০ সাল। আধুনিক এই সময়ে এসে যুক্তরাষ্ট্রে ‘বর্ণবাদী হত্যা’ হয়তো কেউ কল্পনা করেনি। আধুনিক, পরাক্রমশালী ও গণতন্ত্রের ধারক–বাহক হিসেবে পরিচয় দেওয়া দেশটিতে এখনো এই ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ড ঘটছে। এই বিষয়ে চোখ বন্ধ করে থাকার উপায়ও নেই।
বর্ণবাদের উৎকৃষ্ট উদাহরণ পেতে ঘাড়ে হাঁটু বাধিয়ে মাটিতে ঠেসে ধরে জর্জ ফ্লয়েড নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির হত্যার ভিডিও দেখতে হবে না আপনাকে, পুলিশের হাতে মৃত্যুর সংখ্যার দিকে তাকালেই হবে। যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গের চেয়ে তিন গুণ বেশি কৃষ্ণাঙ্গ মারা যায় পুলিশের হেফাজতে। করোনাভাইরাসে আক্রান্তের দিকে তাকালেও শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গের বৈষম্য স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে। করোনায় সাদা চামড়ার মানুষের চেয়ে কালোরা অনেক বেশি আক্রান্ত হয়েছে। এই তথ্য শুধু করোনো মহামারিকালেই নয়, অন্য সময়েও খাটে। দেশটিতে শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিদের গড় আয়ু তিন বছর কম। ঘনবসতি, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা এবং অপরাধপ্রবণ নগরে বসবাস করে অনেক কৃষ্ণাঙ্গ। আর্থিক অনটন তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। ফলে সন্তানদের সাধারণ স্কুলে পড়াতে বাধ্য হয় এসব মানুষ।
পুলিশের বর্বরতার বিরুদ্ধে লড়াই করা নাগরিক অধিকারবিষয়ক সংগঠন ক্যাম্পেইন জিরোর প্রতিষ্ঠাতা ব্রিটানি প্যাকনেট কার্নিংহাম বর্ণবাদী হত্যাকাণ্ড অস্বীকার করা ব্যক্তিদের একহাত নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আপনি যদি কালো বর্ণের হন, তাহলে আপনি হত্যার শিকার হবেন, তা আপনি কীভাবে বিশ্বাস করতে পারেন না? কীভাবে আপনি জঘন্য বর্ণবাদের প্রকৃতিকে উপলব্ধি করতে পারেন না?’
৪০১ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলে প্রথম ক্রীতদাসের আগমন। ১৫৫ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা অর্জন।কতশত সোনালি অধ্যায়ের যবনিকা। কিন্তু এত কিছুর পরও বর্ণবাদের ঘটনা এখন অহরহই ঘটছে আর সেটাই সত্য। শ্বেতাঙ্গরা সত্য থেকে অনেক দূরে দাবি করে কার্নিংহাম বলেন, বিশ্বের এই বিশাল পরিবর্তন, অগ্রগতি এখনো শ্বেতাঙ্গদের চোখে পড়ে না। তারা বিশ্বকে ককেশীয় চশমা, গোলাপ রঙের ভেতর দিয়ে দেখে।
মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনেপোলিস শহরে পুলিশের হাতে জর্জ ফ্লয়েড খুন, জর্জিয়ায় প্রতিবেশী এক শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তির গুলিতে ২৫ বছর বয়সী নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ যুবক আহমুদ আরবেরির মৃত্যু—এই রকম কোনো ঘটনাকেই এড়িয়ে যাওয়া যাবে না।
ইউনিভার্সিটির অব ম্যারিল্যান্ডের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক রায়শান রায় বলেন, পুলিশের অতিরিক্ত তৎপরতার বেশির ভাগ শিকার কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিরা। নিউইয়র্কে সামাজিক দূরত্ব নিয়ম লঙ্ঘনের দায়ে পুলিশ যাদের গ্রেপ্তার করেছে, তাদের ৮০–৯০ শতাংশই কৃষ্ণাঙ্গ বা লাতিনো।
যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ক্ষেত্রেও সাদা–কালোর বৈষম্য রয়েছে। ২০১০ সালে করা সমাজবিজ্ঞানী ইভলিন জে প্যাটারসনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, শ্বেতাঙ্গরা কারাগারে কম সময় বাঁচে। আর কারাগারের বাইরে থাকা কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিদের চেয়ে কারাগারে থাকা কৃষ্ণাঙ্গদের মৃত্যুহার কম। এর অর্থ হলো, বাইরের চেয়ে কারাগারে ভালো চিকিৎসাসেবা পায় কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিরা।