মার্কিন ভণ্ডামি প্রকাশ পাচ্ছে

বিশেষজ্ঞরাই আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে দশকের পর দশক ধরে বর্ণবাদ চলে আসছে। শ্বেতাঙ্গের চেয়ে তিন গুণ বেশি কৃষ্ণাঙ্গ মারা যান পুলিশের হেফাজতে। স্বাস্থ্যসেবাতেও এই দু্ইয়ের মধ্যে বিভেদ প্রকট। আর্থিকভাবে সাদাদের চেয়ে অনেকটা দুর্বল কালোরা। এরই মধ্যে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অনেকটাই অপ্রত্যাশিতভাবেই জয় পান রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলা হয়ে থাকে, তিনি একজন শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদের গোঁড়া সমর্থক। সেটাই তিনি অনেক কাজে–কর্মে দেখিয়েছেনও। তাঁর শাসনামলে মার্কিন রাজনীতি চরম দ্বিধাবিভক্ত। তাই ঐক্যবদ্ধ সমাজ গঠনের কথা তাঁর কাছ থেকে ভাবাও যায় না।

এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তার হাতে কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক জর্জ ফ্লয়েড নিহত হওয়া পর সামনে চলে এসেছে ঐক্যবদ্ধ জাতির কথা। টানা ছয় দিন ধরে গোটা যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভকারীদের প্রতি সহমর্মিতার পরিবর্তে ‘অন্যায় কাজের’ জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি প্রয়োগের কথা বলেছেন ট্রাম্প। তিনি এই গণবিক্ষোভকে শুধু বামপন্থীদের অরাজকতা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেও কিছুই ঘটেনি বলে তিনি দাবি করে আসছেন। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে দেশটি যখন বিপর্যস্ত, তখন বিশাল এই বিক্ষোভ নতুন বিপদে ফেলেছে দেশটিকে।

ড্যান বাজ নামের এক সাংবাদিক লিখেছেন, যে সময় ঐক্যবদ্ধ করার কথা বলতে হবে, সেই সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিভেদকেই উসকে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘লুট শুরু হলে গুলি শুরু হবে।’ তিনি অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিরোধী ডেমোক্র্যাট নেতাদের আক্রমণ করেছেন। সংঘাত উসকে দেওয়ার জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে দায়ী করেছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

ট্রাম্পের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্র তার নিজেদের মানবাধিকার রক্ষার প্রশ্নে অনেকটা পিছিয়ে এসেছে। আন্তর্জাতিক নীতিমালা ও আইনকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়েছে। দেশটিতে সাংবাদিক, অধিকারকর্মীদের অধিকার সংকুচিত হওয়া নিয়ে প্রশ্নও উঠছে। যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে এই ‘বর্ণবাদী হত্যা’ পুরো বিশ্বের মনোযোগ কেড়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ হচ্ছে নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে।

রাশিয়া, চীন ও ইরানের মতো দেশগুলোও যুক্তরাষ্ট্রের আইনের শাসন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। দেশগুলোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল সোমবার পৃথকভাবে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরের অন্ধকারের দিকগুলোই তুলে এনেছে এই গণবিক্ষোভ।