বিক্ষোভ দমনে সেনা অভিযান চালানোর হুমকি ট্রাম্পের

বিক্ষোভকারীদের দমনে সেনা অভিযান চালানোর হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আজ মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।

গ্রেপ্তারের পর পুলিশি হেফাজতে নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভে উত্তাল পুরো যুক্তরাষ্ট্র। জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের শহরে শহরে টানা ছয় দিন ধরে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, সংঘর্ষ ও লুটপাট চলছে। কারফিউ জারি করে, বিশেষ বাহিনী নামিয়েও লোকজনকে রাস্তা থেকে সরানো যাচ্ছে না।

সোমবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প বলেন, সহিংস বিক্ষোভ থামাতে রাজধানীর সড়কগুলোতে হাজারো সেনা নামাচ্ছেন তিনি। অঙ্গরাজ্যগুলো বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে সেখানেও সেনা পাঠাবেন।

আগেও ট্রাম্প বিক্ষোভকারীদের হুমকি দিয়েছিলেন। বলেছিলেন উসকানিমূলক কথা। এমন প্রেক্ষাপটে বিক্ষোভকারীরা হোয়াইট হাউসের বাইরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। সেখানে সংঘর্ষও হয়। ভয়ে ট্রাম্প আশ্রয় নেয় বিশেষ বাঙ্কারে।

২৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিসে একটি দোকানে কেনাকাটা শেষে মূল্য পরিশোধ করেন জর্জ ফ্লয়েড। কিন্তু দোকানের কর্তৃপক্ষ পুলিশে ফোন করে অভিযোগ করে, ফ্লয়েডের দেওয়া ২০ মার্কিন ডলারের নোটটি জাল। পুলিশ গিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে গাড়িতে ওঠানোর সময় তিনি রাস্তায় পড়ে যান।

ওই ঘটনার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক পুলিশ কর্মকর্তা ফ্লয়েডের ঘাড়ের ওপর হাঁটু গেড়ে বসে আছেন। এ সময় ফ্লয়েডকে বলতে শোনা যায়, 'আমি শ্বাস নিতে পারছি না। আমাকে মারবেন না।'

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

প্রাথমিক ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফ্লয়েডের ঘাড়ের ওপর ডেরেক চাউভিন (৪৪) নামের ওই শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা ৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড বসেছিলেন। ওই অবস্থায়ই ফ্লয়েড অচেতন হয়ে পড়লে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং সেখানে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

পুলিশের দাবি, জর্জ ফ্লয়েড পুলিশকে সহযোগিতা না করে ধস্তাধস্তি করছিলেন। তাই তাঁকে হাতকড়া পরাতে হয়েছিল।

এই ঘটনার পরই বর্ণবাদী আচরণের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠে মেনোপোলিস। ক্রমেই তা মিনেসোটার অন্যান্য জায়গায়ও ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভের সঙ্গে ঘটতে থাকে লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ। এ পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হুমকি দেন, 'লুটপাট চললে গুলিও চলবে।' টুইটারে তাঁর এই মন্তব্যে ষাটের দশকের বর্ণবাদী আচরণ খুঁজে পান বিক্ষোভকারীরা। এতে আরও বেশি ফুঁসে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র।

ট্রাম্পের ওই টুইটের পর ক্যালিফোর্নিয়া, নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ। পুলিশ স্টেশনে ও পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে যে একে ১৯৬৮ সালে মার্টিন লুথার কিংয়ের খুনের ঘটনার পর সৃষ্ট অস্থিতিশীলতার সঙ্গে তুলনা করছেন অনেকে।

সিএনএন, নিউইয়র্ক টাইমসসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ৭৫টির বেশি শহর এখন বিক্ষোভে উত্তাল। অথচ করোনাভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কায় কয়েক দিন আগেও এসব শহরের অনেক সড়ক ছিল জনমানবশূন্য। প্রায় ৪০টি শহরে তো কারফিউ দেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় গত কয়েক দিনে বিক্ষোভের সময় গ্রেপ্তার হয়েছেন প্রায় সাড়ে চার হাজার মানুষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নামানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের রিজার্ভ মিলিটারি ফোর্স ন্যাশনাল গার্ডকে।