জিয়ানার ছোট্ট আঙুল ধরে আর হাঁটা হবে না জর্জের

মা রক্সি ওয়াশিংটনের হাত জড়িয়ে ধরে আছে জর্জ ফ্লয়েডের ছয় বছরের মেয়ে জিয়ানা। পুলিশের পাশবিকতায় বাবাকে হারানোর পর মা-ই তার আশ্রয়। ছবি: রয়টার্স।
মা রক্সি ওয়াশিংটনের হাত জড়িয়ে ধরে আছে জর্জ ফ্লয়েডের ছয় বছরের মেয়ে জিয়ানা। পুলিশের পাশবিকতায় বাবাকে হারানোর পর মা-ই তার আশ্রয়। ছবি: রয়টার্স।

‘জর্জ ফ্লয়েড’—নামটির সঙ্গে সঙ্গে চোখের সামনে ভেসে ওঠে নিষ্ঠুর কদর্য এক ভিডিও। ফ্লয়েডকে মাটিতে ফেলে হাঁটু দিয়ে দীর্ঘ সময় তাঁর ঘাড় চেপে ধরে হত্যা করছেন এক পুলিশ সদস্য। তবে এই ভয়াবহ ভিডিও দিয়ে তাঁকে বিশ্ববাসীর কাছে স্মরণীয় করে রাখতে চান না পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের সদস্যরা চান, মানুষ যেন ফ্লয়েডকে মনে রাখে একজন অসাধারণ বাবা হিসেবে, একজন ভালো মানুষ হিসেবে।

জর্জ ফ্লয়েডের একমাত্র মেয়ে জিয়ানার বয়স মাত্র ছয় বছর। ও এখনো ঠিকমতো বুঝতেও পারেনি কী ঘটে গেছে তার জীবনে। বাবা আর ফিরে আসবে না। জিয়ানার মা রক্সি ওয়াশিংটন চান, মানুষ জানুক ওই পুলিশ অফিসাররা তাঁর কাছ থেকে কোন মানুষটিকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছেন। কারণ, দিন শেষে ওই মানুষগুলো পরিবারের সদস্যদের কাছে ফিরে যাবে, সুখে দিন কাটাবে।

রক্সি ওয়াশিংটন বলেন, ‘তবে ছোট্ট জিয়ানার বাবা তো আর ফিরে আসবে না। জিয়ানার বড় হওয়া, লেখাপড়া শিখে মানুষ হওয়া কিছুই তার দেখা হবে না। পৃথিবীর সবকিছু চলবে, কেবল জিয়ানার জীবনে জর্জ আটকে থাকবে ছয়টি বছরে। জিয়ানার ছোট্ট আঙুল ধরে আর হাঁটা হবে না জর্জের। ওর কোনো সমস্যায় পাশে থাকবে না সে, পাহাড়ের মতো আগলে রাখবে না মেয়েকে। আর জিয়ানা, এ জীবনে তার বাবা আর থাকবে না।’

আমেরিকার মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যে জর্জ ফ্লয়েড নামের এক আফ্রিকান-আমেরিকানকে গত ২৫ মে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে নির্যাতন করেন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার ডেরেক চাওভিন। এতে সাবেক বাস্কেটবল খেলোয়াড় ফ্লয়েডের মৃত্যু হয়। এক প্রত্যক্ষদর্শীর ধারণ করা ১০ মিনিটের ভিডিও ফুটেজে চাওভিন ফেঁসে যান। সেখানে দেখা যায়, গলায় হাঁটু চেপে ধরায় ফ্লয়েড বারবার কাতর স্বরে বলছেন, ‘আমি শ্বাস নিতে পারছি না।’ ভিডিওটি ভাইরাল হলে চাওভিনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। মিনেসোটা থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ এখন ছড়িয়ে পড়েছে পুরো আমেরিকায়। তবে জর্জের পরিবারের অন্তর পুড়ছে কেবলই প্রিয়জন হারানোর ব্যথায়।

জর্জদের পারিবারিক আইনজীবী ক্রিস স্টুয়ার্ট বলেন, ‘জর্জের যে ভিডিও আমরা সবাই দেখেছি, তা ভয়ংকর। এ ঘটনায় আমরা রাস্তায় প্রতিহিংসা দেখলাম, সহিংসতা দেখলাম। আবার মানুষের হৃদয়ের সৌন্দর্যও দেখলাম, যাঁরা জর্জের জন্য রাস্তায় নেমেছেন। তাঁরা এর বিরুদ্ধে কথা বলছেন। দেশের একটা বড় পরিবর্তন দেখলাম।’ তিনি বলেন, ‘তবে আমরা কী দেখতে চেয়েছিলাম? চেয়েছিলাম আমাদের সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যৎ দেখতে। জিয়ানার বেড়ে ওঠা, যে কিছুদিনের মধ্যে লম্বায় আমাকে ছাড়িয়ে যাবে। আমরা এ হত্যার বিচার চাই।’ স্টুয়ার্ট বলেন, এটা এমন নয় যে মানুষ রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে আর বিক্ষোভে দাঁড়িয়ে গেল। এটা এখন মানুষের ভবিষ্যতের বিষয়। জীবনের লড়াই। সন্তানের কাছ থেকে বাবাকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা প্রিয়জন হারিয়েছেন।

রক্সি ওয়াশিংটনও এ হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চান। তিনি বলেন, ‘অন্যরা কী ভাবছে, তা নিয়ে আমি ভাবি না। জিয়ানাকে দেখলেই বোঝা যায় তিনি কত ভালো মানুষ ছিলেন।’

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার, ফ্লয়েডকে যেখানে হত্যা করা হয়, সেই সড়কে যান বিশপ হার্ডিং স্মিথ। তিনি তাঁকে স্মরণ করেন একজন দানবীর মানুষ হিসেবে। আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘তিনি এমন কেউ ছিলেন, যাঁকে আমি খুব ভালো করে জানতাম। আপনিও দেখতে পাচ্ছেন যে ভালোবাসা, যে সহমর্মিতা মানুষ দেখাচ্ছে।’

আসলেই ৩৮ স্ট্রিট অ্যান্ড শিকাগো অ্যাভিনিউটি ভরে রয়েছে মানুষের দেওয়া ফুল, কার্ডে। সিক্ত চোখে মোম জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন শত শত মানুষ।