আমরা সবাই পজিটিভ

জায়গাটা কচি নরম দুর্বা ঘাসে ভরে গেছে। শান্তা নরম ঘাসে হাত বুলাতে থাকে। কয় দিন হল, মনে করতে পারছে না শান্তা।
তাদের কানাডা, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার বাড়ির সব কাগজপত্র শিহাবের স্টিলের সিন্দুকে রাখা আছে। ব্যাংকের কাগজপত্রও ওখানেই থাকার কথা। কিন্তু সিন্দুকের চাবি?
চাবি কার কাছে?
শান্তা বিড়বিড় করে নিজের সঙ্গে কথা বলে।
কোথায় যেন অ্যাম্বুলেন্সের বিকট শব্দ হচ্ছে। শান্তার মাথার ভেতরে ভোঁতা একটা যন্ত্রণা। বুকটা ভারী হয়ে আছে। শিহাবকে সবাই কোথায় নিয়ে গেল? চারদিকে এমন নীরব কেন?
আজ কি কোন ছুটির দিন? শান্তার সব স্মৃতি, সব হিসাব এলোমেলো হয়ে যায়। মনে পড়ল, মার্চে লকডাউন শুরু হয়েছিল। তারপর সবকিছু কেমন যেন উল্টাপাল্টা হয়ে গেল। শিহাবের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হল। হঠাৎ শিহাবের খুব শরীর খারাপ হয়ে গেল। সব কেমন যেন ধোঁয়াশার মত মনে হয়।
ওর ছোট ছেলেরটার কলেজ গ্র্যাজুয়েশন কি শেষ? ছেলের দিকে তাকিয়ে শান্তার অদ্ভুত লাগে। ছেলেটা যেন কয়েক দিনেই অনেক বড় হয়ে গেল। খুব গম্ভীর। দায়িত্ববান। ছেলেটি এগিয়ে এসে শান্তার দিকে তার হাত বাড়িয়ে দিল। বলল, ‘মা চল। বাসায় চল এবার!’
‘দেখ বাবা, মাটি এখনো ঝুরঝুরে নরম। এরই মধ্যে তাজা দুর্বা ঘাস জন্মেছে।’
‘মা চলো বাসায়’।
শেষ পর্যন্ত তোর বাবাকে এখানেই মাটি দিলি তোরা?
‘মা উপায় ছিল না। দেখছ না, সারা দুনিয়া বন্ধ!
শান্তা ছেলের হাত ধরে উঠে দাঁড়িয়ে বলল—
‘আমাদের রিপোর্ট কি এসেছে?’
‘মা আমরা সবাই পজিটিভ।’