ভাড়া পরিশোধ নিয়ে আশা-নিরাশায় ভাড়াটেরা

নিউইয়র্কের বিভিন্ন অ্যাপার্টমেন্টের দেয়ালে ঝুলে আছে ‘নো জব’, ‘নো রেন্ট’। করোনায় চাকরি হারিয়ে দিশেহারা মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন রাজ্যের আইনপ্রণেতারা। চার মাসের ভাড়া মওকুফ করতে স্টেট সিনেট ও অ্যাসেম্বলিতে পাশ হয়েছে ১০০ মিলিয়ন ডলারের বিল। গভর্নর স্বাক্ষর করলে এই বিল আইনে পরিণত হতে পারে। যদিও অর্থ তহবিল ও চাহিদা অনুযায়ী রাজ্যের বিপদগ্রস্ত ভাড়াটেরা আদৌ কোন সুবিধা পাবেন কি না, পেলে কবে পাবেন—তা নিয়ে সংশয় দেখা যাচ্ছে।
বিলটি নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোর স্বাক্ষরের অপেক্ষায় রয়েছে। বিলে স্বাক্ষর হলেই শর্ত সাপেক্ষে বাড়ির মালিকেরা ভাউচার দিয়ে আংশিক ভাড়া আদায় করতে পারবেন বলে আইন প্রস্তাবে বলা হয়েছে।

বিপদাপন্ন অর্থনৈতিক বাস্তবতায় ভাড়া পরিশোধ করতে না পারা নিউইয়র্কের কয়েক লাখ বাসিন্দা রয়েছে। করোনার মধ্যে এসব মানুষ চরম উৎকণ্ঠায় দিন যাপন করছেন। একদিকে দৈনন্দিন জীবনযাপনের ব্যয়ভার বহন, অপর দিকে বাসা ভাড়া। সব মিলিয়ে চাকরি না থাকায় বাড়ির মালিকদের এড়িয়ে চলেছেন অনেকেই। আইনটি পাশ হওয়ায় অনেকেই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিলেন।
জ্যামাইকার বাসিন্দা আবরার হাবিব বলেন, ‘আমার ঘরে ছোট দুই বাচ্চা আছে। তাদের ফেলে আমি চাকরিতে যেতে পারিনি। কারণ, চাকরিতে থেকে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে ঘরে থেকেছি। কিন্তু বাসা ভাড়া দেওয়া হয়নি। এখন বাসা ভাড়া স্টেট দেবে, আমি চিন্তা মুক্ত।’
জ্যাকসন হাইটসের বাসিন্দা অরুণ চক্রবর্তী বলেন, ‘কোনো চাকরি নেই। কীভাবে ভাড়া দেব। গভর্নরের কাছে অনুরোধ, দ্রুত বিলে সাক্ষর করে বাড়ির মালিকদের কাছ থেকে আমাদের মুক্তি দিন।’
এ দিকে বিল পাশ হলেও অনেক ভাড়াটিয়া প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের অভাবে ভাড়া স্টেট থেকে আদায় করতে পারবেন না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কারণ আমাদের কমিউনিটির ভাড়াটিয়া এবং বাড়ির মালিকের সঙ্গে কোন প্রকার লিজ চুক্তি নেই। মুখে মুখে কথা বলে ভাড়া বাড়িতে উঠেছেন ভাড়াটিয়ারা। কিন্তু স্টেট ভাড়া পরিশোধের আগে বাড়ির মালিকের সঙ্গে ভাড়াটিয়ার লিজ চাইবেন। এ ছাড়া করোনা মহামারির কারণে এলাকা অনুযায়ী মাসিক আয় হিসাব করে এই অর্থ দেওয়ার কথা আইন প্রস্তাবে বলা হয়েছে।
ব্রুকলিনের আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাড়ির মালিক আমার সঙ্গে কোন প্রকার লিজ চুক্তি করেনি। জানি না আমার ভাড়া বাড়ির মালিক কীভাবে আদায় করবেন। স্টেট থেকে যদি ভাড়া আদায় করতে না পারেন, তাহলে বাড়ির মালিক আমাকে ভাড়া দিতে চাপ প্রয়োগ করবেন। কিন্তু ভাড়া দেওয়ার মতো কোন সামর্থ্য আমার নেই।’
এমন পরিস্থিতিতে নিউইয়র্কে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটছে। নিউইয়র্কের গভর্নর ও রাজ্য আইন প্রণেতারা উপেক্ষা করছেন ফেডারেল সহযোগিতার। কংগ্রেসে আরেক দফা করোনা সহযোগিতা আইন পাশ হলে আশা করা হচ্ছে ভাড়াটে ও বাড়ির মালিকদের জন্য প্রণোদনা থাকবে। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া এখনই ভাড়া মওকুফ হচ্ছে বলে মনে করার কোন কারণ নেই বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।