ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিমের ৫৭ কর্মকর্তার পদত্যাগ

শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের শেষ দিকে ৪ জুন মার্টিন গুগিনোকে তাড়া করে কর্তব্যরত পুলিশ। এ সময় মার্টিন মাটিতে পড়ে যান। এ ঘটনায় দুজন পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে তদন্ত শুরু হয়েছে। ছবি: রয়টার্স
শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের শেষ দিকে ৪ জুন মার্টিন গুগিনোকে তাড়া করে কর্তব্যরত পুলিশ। এ সময় মার্টিন মাটিতে পড়ে যান। এ ঘটনায় দুজন পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে তদন্ত শুরু হয়েছে। ছবি: রয়টার্স

প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে নিউইয়র্কের বাফেলো নগরীর ৫৭ জন পুলিশ কর্মকর্তা ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম থেকে পদত্যাগ করেছেন। একজন বিক্ষোভকারীকে মাটিতে ফেলে দেওয়ার অভিযোগে দুজন পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলে বাহিনীতে অসন্তোষ দেখা দেয়। ৫ জুন মার্টিন গুগিনো নামের একজন প্রতিবাদকারীকে গ্রেপ্তারের জের ধরে এমন ঘটেছে বলে সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

মিনেপোলিসে পুলিশের হাতে জর্জ ফ্লয়েডের নিহত হওয়ার ঘটনায় দেশব্যাপী প্রতিবাদের অংশ হিসেবে বাফেলোর নায়েগ্রা স্কয়ারে প্রতিবাদ সমাবেশ চলছিল। ৪ জুন দিনভর শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের শেষ দিকে মার্টিন গুগিনোকে তাড়া করে কর্তব্যরত পুলিশ। এ সময় মার্টিন মাটিতে পড়ে যান। প্রথমে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, মার্টিন নিজেই পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মার্টিনের পক্ষ থেকে বক্তব্য আসতে শুরু হলে পুলিশের বক্তব্যও পাল্টে যায়। খোদ রাজ্য গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো ভিডিও দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এ ঘটনায় দুজন পুলিশকে সাময়িক বরখাস্ত করে তদন্ত শুরু হয়েছে।
দুই সহকর্মীর ওপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থার প্রতিবাদে বাফেলো পুলিশের ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম থেকে পরদিন ৫ জুন ৫৭ জন কর্মকর্তা নিজেদের প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। এই ৫৭ জন পুলিশের চাকরি থেকে পদত্যাগ করেননি। তাঁরা নিজেদের ইমার্জেন্সি রেসপন্স ইউনিট থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

এদিকে নিউইয়র্ক নগরীর পুলিশ প্রধান, রাজ্য গভর্নর ও নগরীর মেয়রের মধ্যে দুরত্ব ক্রমেই প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে। পুরো আমেরিকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভের আগুন দমনে নিউইয়র্কের মেয়রের ব্যর্থতা নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলেছেন গভর্নর কুমো। এনওয়াইপিডির সঙ্গেও মেয়র ব্লাজিওর চলছে ঠান্ডা যুদ্ধ। মেয়র ব্লাজিওর বিরুদ্ধে নাগরিক আন্দোলনের সভা থেকেও বক্তব্য রাখা হয়েছে। রিপাবলিকান দলের একজন স্থানীয় আইনপ্রণেতা মেয়র ব্লাজিওকে বরখাস্ত করার জন্য গভর্নরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। নিউইয়র্কে বিক্ষোভরত লোকজনের প্রতি পেশাগত আচরণের সীমা লঙ্ঘনের দুটি পৃথক ঘটনায় এনওয়াইপিডির দুই কর্মকর্তাকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

এদিকে আমেরিকার বিভিন্ন এলাকায় হঠাৎ করেই করোনা পরিস্থিতির আবারও অবনতি হচ্ছে। করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ন্ত্রণে হোয়াইট হাউসের টাস্কফোর্স সদস্য অ্যান্থনি ফাউসি দেশজুড়ে বিক্ষোভ সমাবেশের কারণে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, যখনই কোনো সমাবেশ হবে তখন সংক্রমণ নিশ্চিত বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে সর্বাধিক।

আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়া আন্দোলনের প্রভাব পড়েছে দেশটির ক্রীড়াঙ্গনেও। আমেরিকান ফুটবলের সবচেয়ে বড় ইভেন্ট ইউএস ফুটবল লীগ খেলোয়াড়েরা জাতীয় সংগীত পরিবেশনের সময় হাঁটু গেড়ে জর্জ ফ্লয়েডকে স্মরণ করেছেন। এ ঘটনায় বিরক্তি প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীতের এমন অবমাননা ঠিক নয় বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।

জর্জ ফ্লয়েডের নিহত হওয়ার ১০দিন পরও আমেরিকাজুড়ে আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। বেশ কিছু নগরীতে রাতে কারফিউ জারি আছে। নিউইয়র্কে রাত আটটা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ রয়েছে। গত দুই দিন থেকে আন্দোলন বিক্ষোভের নামে লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনা কমে এসেছে। নিউইয়র্কেও বিক্ষোভ ছিল শান্তিপূর্ণ। বিভিন্ন নগরীতে আন্দোলনের কারণে এ পর্যন্ত ১০ হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।