যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশ সংস্কারে তোড়জোড়

জর্জ ফ্লয়েড হত্যাসহ সব বর্ণবাদী হত্যার বিচার এবং বিচার, পুলিশ সংস্কারের দাবিতে টানা ১৬তম দিন বিক্ষোভ করেন শত শত মানুষ। গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে।  ছবি: এএফপি
জর্জ ফ্লয়েড হত্যাসহ সব বর্ণবাদী হত্যার বিচার এবং বিচার, পুলিশ সংস্কারের দাবিতে টানা ১৬তম দিন বিক্ষোভ করেন শত শত মানুষ। গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের হেফাজতে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড নিহত হওয়ার প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে দেশটির পুলিশে সংস্কারে তোড়জোড় শুরু করেছে নীতিনির্ধারণী সব পক্ষই। প্রথম সংস্কারের জন্য পার্লামেন্ট কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে প্রস্তাব পেশ করে ডেমোক্র্যাট সদস্যরা, যা নিয়ে শুনানি চলছে। গত বুধবারে শুনানিতে অংশ নিয়ে ফ্লয়েডের ভাই ফিলোনিজ ফ্লয়েড পুলিশে সংস্কার করে ‘স্বজন হারানোর বেদনা’ লাঘবের আহ্বান জানান। এদিন প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন হোয়াইট হাউস জানায়, পুলিশ সংস্কারের প্রস্তাব প্রণয়ন করছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। আর আগের দিন উচ্চকক্ষ সিনেটের রিপাবলিকান সদস্যরা বলেন, এই সংস্কারের জন্য তাঁরা নিজেদের মতো করে আইন করার কাজ করছেন।

ফ্লয়েডকে গত মঙ্গলবার নিজ শহর টেক্সাসে হিউস্টনে মায়ের পাশে সমাহিত করার পরও বিক্ষোভ থেমে নেই। বুধবারও যুক্তরাষ্ট্রের শহরে শহরে বিক্ষোভ হয়েছে পুলিশ সংস্কার ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দাবিতে। ভাইয়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন করার পরদিন ফিলোনিজ পুলিশ সংস্কারের বিষয়ে রাজধানী ওয়াশিংটনে প্রতিনিধি পরিষদের শুনানিতে অংশ নেন। আবেগাপ্লুত ফিলোনিজ বলেন, ‘আমি ব্যথিত। আমি বেদনায় ব্যথিত। আপনাকে সারা জীবন দেখভাল করেছেন, এমন বড় ভাইকে আপনি যখন এভাবে মরতে দেখবেন, মা, মা বলে করুণাভিক্ষা চাইতে দেখবেন, তখন আপনারা এই ব্যথা অনুভব করবেন। মাত্র ২০ ডলারের জন্য তাঁর মৃত্যু হতে পারে না। কালো মানুষের জীবনের মূল্য কি এটাই?’ তিনি তাঁর বড় ভাইয়ের হত্যার বিচার দাবি করেন, যাঁকে তাঁরা ‘পেরি’ নামে ডাকতেন। 

>ট্রাম্প প্রশাসন, কংগ্রেসের দুই কক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেট এই সংস্কারে কাজ করছে।

পুলিশ সংস্কারের প্রশ্নে প্রতিনিধি পরিষদে জুনের শেষ নাগাদ ভোটাভুটি হবে। ডেমোক্রেটিক পার্টি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকায় পুলিশ সংস্কার বিলটি পাস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

২৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটার মিনিয়াপোলিস শহরে এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা নিরস্ত্র ফ্লয়েডের ঘাড় হাঁটু দিয়ে ৯ মিনিট চেপে ধরলে তিনি মারা যান। এ সময় বাঁচার জন্য ফ্লয়েড বারবার আকুতি করেন, ‘আমি শ্বাস নিতে পারছি না। আমি মারা যাচ্ছি।’ এ সময় মা, মা বলে জীবন ভিক্ষা চান। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি একটি দোকান থেকে ২০ ডলারের জাল নোট দিয়ে সিগারেট কিনেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ সংস্কারে আলাদাভাবে আইন প্রণয়নের কাজ করছে সিনেটর টিম স্কটের নেতৃত্বে রিপাবলিকান পার্টির পাঁচ সদস্যের একটি দল। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টির একমাত্র আফ্রিকান-আমেরিকান সিনেটর টিম স্কট। ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে সমাঝোতার ভিত্তিতে আইনটি পাস হতে পারে। বুধবার ক্যাপিটল হিলে সাংবাদিকেদের স্কট বলেন, উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে পুলিশের কৌশলের প্রশিক্ষণের বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে আইনে। তবে গলা চেপে ধরা নিষিদ্ধ হবে না। 

মিনিয়াপোলিস, নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন স্থানীয় সরকারও আলাদাভাবে পুলিশ সংস্কারের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এদিকে বুধবার সংবাদ ব্রিফিংয়ে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কাইলে ম্যাকেনি বলেন, পুলিশের নৃশংসতার বিষয়ে বিক্ষোভকারীদের উদ্বেগ প্রশমনে পুলিশ সংস্কারের একটি প্রস্তাব প্রণয়ন করছে প্রশাসন, যা সম্পাদনার পর্যায়ে আছে।