নিনা আহমেদের জয়

প্রচণ্ড হতাশার মুহূর্তেই মানুষ আশার আলোর সন্ধান করে বেশি। আর এই আশার আলো দেখাতে পারেন একজন নেতা, যিনি স্বপ্ন দেখতে এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি নিয়ে হাজির হন। নিজের মধ্যে সংকুচিত থাকলে, নিজেকে নিয়েই প্রতিনিয়ত ব্যস্ত থাকলে নেতৃত্বের যত আকাঙ্ক্ষাই থাকুক না কেন, তা কখনো ধরা দেয় না।

প্রবাসের বাংলাদেশি কমিউনিটি দীর্ঘদিন ধরেই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থেকেছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন শাখা খুলে নিজেদের কমিউনিটির মধ্যেই তারা রাজনীতির চর্চা করেছে। আমেরিকায় থাকা বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যেও এই চর্চাই প্রবল। ফলে আমেরিকান সরকারের দিক থেকে বাড়তি সুবিধা আদায়, নিজেদের কমিউনিটির কোনো দাবি উত্থাপন এবং তা আদায়ের সক্ষমতা বরাবরই কম ছিল। কিন্তু এখন এই ধারায় বদল আসছে। আর এ ক্ষেত্রে যাঁরা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁদের একজন নিনা আহমেদ। সম্প্রতি পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের অডিটর জেনারেল পদে নির্বাচনের জন্য ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থিতা পেয়েছেন তিনি।

নিনা আহমেদের পথটি কিন্তু সরল ছিল না। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রশাসনের একজন উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করা নিনা আহমেদ ২০১৮ সালে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ঘোষণা করেন। কিন্তু পরে সরে এসে পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের লেফটেন্যান্ট গভর্নর পদের জন্য লড়াই করেন। সে যাত্রায় বাছাইপর্ব পেরোতে না পারলেও দমে যাননি। আর এই দমে না যাওয়ার ফলই এখন পাচ্ছেন তিনি। শুধু তিনি নন, নিজের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকেও তিনি তুলে ধরেছেন উজ্জ্বলভাবে।

প্রবাসের জীবন নিঃসন্দেহে কঠিন। আর প্রবাসী একটি জনগোষ্ঠীর হয়ে মূলধারায় নির্বাচন করা এবং সেই পথে নিজের প্রতি মানুষের আস্থা তৈরি করাটা আরও কঠিন। এই কঠিন কাজটি ততক্ষণ পর্যন্ত সম্ভব হয় না, যতক্ষণ না একজন ব্যক্তি সব মানুষের হয়ে কথা না বলেন।

শুধু নিনা আহমেদ কেন, শেখ রহমান, হেলাল এ শেখ, জয় চৌধুরী, তৈয়বুর রহমান, বদরুন নাহারসহ বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিতে এরই মধ্যে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পেরেছেন। তাঁদের সবাই এখনো সে অর্থে সাফল্য পাননি। কিন্তু যে পথে তাঁরা হাঁটছেন, তা নিজেই একটি সাফল্যের স্মারক। বাংলাদেশি কমিউনিটির একজন হিসেবে নিজের কমিউনিটির পাশাপাশি অন্য সবার হয়ে কথা বলার যে ক্ষেত্রটি তাঁরা তৈরি করছেন, তা সামনের দিনে আরও বিস্তৃত হবে।

আমেরিকায় নিনা আহমেদসহ আজ যাঁরা মূলধারার রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন, তাঁরাই আমেরিকায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা বাংলাদেশি প্রজন্মের জন্য ভবিষ্যৎ সাফল্যের রাস্তাটি তৈরি করছেন। এই মানুষদের পেছনে সমবেত হয়ে, তাঁদের এগিয়ে দেওয়া মানে হলো নিজেদেরই এগিয়ে যাওয়ার পথটি তৈরি করা। নিজের ও নিজের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে এই পথে যত বেশিসংখ্যক মানুষ যুক্ত হবেন, আমেরিকায় বাংলাদেশিরা তত বেশি এগিয়ে যেতে পারবেন। নিজের ও কমিউনিটির স্বার্থেই মূলধারার রাজনীতিতে তাই বাংলাদেশিদের আরও সম্পৃক্ত হওয়া উচিত।