করোনা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আমেরিকায় সংশয়

আগামী তিন মাস আমেরিকায় করোনার ভ্যাকসিনের ব্যাপক পরীক্ষা চালানো হবে। ফাইল ছবি: রয়টার্স
আগামী তিন মাস আমেরিকায় করোনার ভ্যাকসিনের ব্যাপক পরীক্ষা চালানো হবে। ফাইল ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আমেরিকায় সংশয় ও উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। কারণ, এখনো দেশের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। আগামী তিন মাস করোনার ভ্যাকসিনের ব্যাপক পরীক্ষা হবে বলে জানানো হচ্ছে। ভ্যাকসিন আসার পর বিপুলসংখ্যক মানুষ তা না পেলে ভবিষ্যতে কী হবে, এ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে স্বাস্থ্যসেবীদের মধ্যে।

ট্রাম্প প্রশাসনের হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিস সেক্রেটারি এলেক্স আজার সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ২৮ জুন বলেছেন, দুই মাস আগের চেয়ে পরিস্থিতি এখন ভিন্ন। সম্পূর্ণ ভিন্ন বাস্তবতা এবং জটিল থেকে জটিলতর হয়ে পড়া অবস্থায় আমেরিকার জন্য করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জানালা বন্ধ হয়ে পড়ছে।

আমেরিকার অধিকাংশ এলাকায় নিশ্চিত করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কোনো কোনো রাজ্যে হাসপাতালে রেকর্ডসংখ্যক লোকজন করোনার সংক্রমণ নিয়ে ভর্তি হচ্ছে। হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিস সেক্রেটারি অবশ্য বলেছেন, আমেরিকা করোনা মোকাবিলায় আগের চেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে। বর্ধিত টেস্টিং, কন্টাক্ট ট্রেসিং, হাসপাতালে বর্ধিত বেডের সংখ্যা ও ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী মজুতের পরিমাণ—এসবকেই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আগের চেয়ে ভালো পরিস্থিতি মনে করছেন তিনি। তাঁর এ বক্তব্যের সঙ্গে যদিও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথার কোনো সামঞ্জস্য নেই।

অন্যদিকে, আমেরিকার শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউসি সিএনএনকে দেওয়া পৃথক এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ কার্যকর হলেও তিনি সন্তুষ্ট হবেন। আমেরিকার উল্লেখযোগ্যসংখ্যক লোকজন ভ্যাকসিন নিতে অস্বীকার করলে রোগটির বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হবে না বলে ফাউসি মনে করেন।

সরকারের সহযোগিতায় আমেরিকার বাজারে আগামী তিন মাস করোনা ভ্যাকসিনের ব্যাপক পরীক্ষা শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে। অ্যান্থনি ফাউসি জানিয়েছেন, মিজেল রোগের বিরুদ্ধে আমেরিকার সাফল্য ছিল সবচেয়ে বেশি। ৯৭ থেকে ৯৮ শতাংশ সাফল্য ছিল মিজেলের ভ্যাকসিনে। তবে করোনার ভ্যাকসিনের সাফল্য সে পর্যায়ে সম্ভব নয়। তিনি ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ সাফল্য আসা করছেন।

সিএনএন পরিচালিত গত মাসে করা এক জরিপে দেখা গেছে, আমেরিকার এক-তৃতীয়াংশ লোকজন করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণে অনিচ্ছুক। স্বল্প মূল্যে সহজলভ্য হলেও সচেতনতার অভাবে আমেরিকার বহু লোক বিশ্বাস করে না, ভ্যাকসিন গ্রহণ করা নিজেদের স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে আমেরিকার ব্যাপক জনগোষ্ঠীর শরীরে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্যও এ বিষয়টি অন্তরায়। করোনার সংক্রমণের পর শরীরে স্থায়ী প্রতিরোধ গড়ে উঠলে বা ব্যাপক লোকজন ভ্যাকসিন গ্রহণ করলেই করোনাকে পরাজিত করা সম্ভব বলে ফাউসি মনে করেন। তিনি আমেরিকার জনগণের মধ্যে ভ্যাকসিন গ্রহণ নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

এ ছাড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কন্টাক্ট ট্রেসিং কর্মসূচি ততটা এগোচ্ছে না। সংক্রমিত হওয়া লোকজনকে টেলিফোনে ট্রেসিং করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন রাজ্য ও নগরের কর্মসূচিতে। তবে অধিকাংশ লোকজন ফোনই ধরছে না। প্রথম দফা ফোন ধরলেও পরে আর ফোনকল আর ধরছে না। কারা সংস্পর্শে এসেছে, সে তথ্যও দিচ্ছে না অনেকেই। এমন নানা জটিলতা, সংশয় ও অসচেতনতার মধ্য দিয়ে চলছে আমেরিকার করোনা পরিস্থিতি। এর মধ্যেই করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে ২৮ জুন পর্যন্ত ১ লাখ ২৮ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটেছে আমেরিকায়। সংক্রমিত ২৬ লাখ মানুষকে শনাক্ত করা হয়েছে।