কী আছে মেরি ট্রাম্পের বইয়ে?

এবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিপাকে পড়েছেন আপন ভাতিজি মেরি ট্রাম্পের লেখা একটি বই নিয়ে। ছবি: সংগৃহীত
এবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিপাকে পড়েছেন আপন ভাতিজি মেরি ট্রাম্পের লেখা একটি বই নিয়ে। ছবি: সংগৃহীত

নামের শেষে থাকা ‘ট্রাম্প’ শব্দটিই যথেষ্ট মনোযোগ কাড়ার জন্য। কিন্তু মেরি ট্রাম্প শুধু নাম দিয়েই মনোযোগ আকর্ষণ করছেন না। তাঁর দিকে সবার দৃষ্টি যাওয়ার কারণ, তাঁর লেখা বই ‘টু মাচ অ্যান্ড নেভার এনাফ: হাউ মাই ফ্যামিলি ক্রিয়েটেড দ্য ওয়ার্ল্ডস মোস্ট ডেঞ্জারাস ম্যান’। নাম থেকেই পরিষ্কার, এবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পড়েছেন একেবারে ঘরের লোকের তোপের মুখে।

মেরি ট্রাম্প সম্পর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাতিজি। ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্থান থেকে শুরু করে একেবারে প্রেসিডেন্ট হওয়া এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নানা দিক উঠে এসেছে বইটিতে। উঠে এসেছে ট্রাম্প পরিবারের অনেক অজানা তথ্য। মেরি ট্রাম্প এবারই শুধু নন, এর আগে নিউইয়র্ক টাইমস ট্রাম্পের আর্থিক বিষয়াদি নিয়ে যে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল, তারও মুখ্য সূত্র হিসেবে পর্দার আড়ালে কাজ করেছেন তিনি। ওই প্রতিবেদন পুলিৎজার পুরস্কারও জয় করে নিয়েছিল।

সে যা-ই হোক, মেরি ট্রাম্পের লেখা বইয়ের শিরোনাম থেকেই পরিষ্কার, এতে অনেক বিস্ফোরক তথ্য রয়েছে। আর এ কারণেই ডোনাল্ড ট্রাম্প চান না বইটি প্রকাশিত হোক। বইটির প্রকাশনা বন্ধের আরজি জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থও হয়েছিলেন প্রেসিডেন্টের ভাই রবার্ট ট্রাম্প। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। আদালত সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এ ধরনের আরজি বাক্‌স্বাধীনতার বিরোধী এবং এ কারণেই তা মার্কিন সংবিধানপরিপন্থী। ফলে বইটির প্রকাশ থামানো যাচ্ছে না। আগামী ২৮ জুলাই বইটি প্রকাশিত হওয়ার কথা রয়েছে। আর তা হলে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাবনায় পড়াটাই স্বাভাবিক। তাই কুইন্স কাউন্টির আদালতে ব্যর্থ রবার্ট ট্রাম্প দ্বিতীয় চেষ্টা করবেন বলে শোনা যাচ্ছে।

মেরি ট্রাম্প ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাই ফ্রেড ট্রাম্প জুনিয়রের মেয়ে। অ্যালকোহলে আসক্ত ফ্রেড ১৯৮১ সালে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। বাবার এই অকালমৃত্যুর জন্যও ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন মেরি ট্রাম্প। বইটির প্রকাশক সিমন অ্যান্ড শুস্টার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘মেরি ট্রাম্পই একমাত্র ট্রাম্প, যিনি বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ও অকার্যকর এ পরিবার সম্পর্কে সত্য বলতে রাজি হয়েছেন।’

বইটির প্রকাশ বন্ধ করতে চেয়ে নিউইয়র্ক আদালতে করা দ্বিতীয় মামলায় রবার্ট ট্রাম্প বলেছেন, ২০০১ সালে ফ্রেড ট্রাম্পের (ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাবা) উইলের সঙ্গে সঙ্গে একটি পারিবারিক গোপনীয়তার চুক্তিও সই হয়েছিল। ওই চুক্তিতে মেরি ট্রাম্পও সই করেছিলেন। সেখানকার মূল কথা ছিল, এই উইল বা পরিবারের সদস্যদের মধ্যকার সম্পর্ক বা বিরোধ নিয়ে কোনো কিছু কেউ প্রকাশ করবে না। ফলে মেরি ট্রাম্পের এই বই সেই চুক্তিকে ভঙ্গ করে। এতে এ–ও উল্লেখ করা হয় যে মেরি ট্রাম্প এরই মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের করবিবরণী নিউইয়র্ক টাইমসের হাতে তুলে দিয়ে চুক্তি ভঙ্গ করেছেন।

তবে এ মামলার বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন মেরি ট্রাম্প ও তাঁর প্রকাশক। সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের বইটির পর আরেকটি বই ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভিতকেই কাঁপিয়ে দিচ্ছে। আর এটি পরিবারের একজনের লেখা হওয়াতেই তা সবার মনোযোগ টানছে। এটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য আরও বড় ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। কারণ, এর সম্ভাব্য প্রকাশের সময় রিপাবলিকান দলের ন্যাশনাল কনভেনশনের ঠিক কয়েক সপ্তাহ আগে। আর ওই কনভেনশনেই রিপাবলিকান দলের মনোনয়ন পাওয়ার কথা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের।

আমাজনের ওয়েবসাইটে বইটি নিয়ে বলা হয়েছে, বইটিতে লেখক তাঁর চাচার (ডোনাল্ড ট্রাম্প) আজকের ব্যক্তিটি হয়ে ওঠার বর্ণনা দিয়েছেন, যিনি এখন গোটা বিশ্বের স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও সামাজিক কাঠামোটিকেই ঝুঁকিতে ফেলছেন। সুনির্দিষ্ট কোন কোন ঘটনা, কী ধরনের পারিবারিক আবহ বর্তমানে ওভাল অফিসে থাকা লোকটিকে নির্মাণ করেছে, ফ্রেড ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর বড় দুই ছেলে ডোনাল্ড ও ফ্রেড ট্রাম্প জুনিয়রের অদ্ভুতুড়ে সম্পর্কসহ অনেক কিছুই এতে উঠে এসেছে।

বইটিতে মেরি ট্রাম্প সুস্পষ্টভাবে তাঁর বাবা ফ্রেড ট্রাম্প জুনিয়রের মৃত্যুর জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর বাবা ফ্রেড ট্রাম্পের অবহেলাকে দায়ী করেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও গত বছর ওয়াশিংটন পোস্টে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ফ্রেড জুনিয়রকে যেভাবে তিনি আবাসন ব্যবসায় যুক্ত হওয়ার চাপ দিয়েছিলেন, তা নিয়ে তিনি এখনো আত্মগ্লানিতে ভোগেন। ফ্রেড জুনিয়রের ইচ্ছা ছিল পাইলট হওয়ার।

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে মেরি ট্রাম্প অনেকটা আড়ালে চলে যান। আগে থেকেই তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে সমালোচনামুখর থাকলেও তিনি এ নিয়ে কখনো সংবাদমাধ্যমের মনোযোগ কাড়েননি নতুন করে। তবে ২০ বছর আগের একটি মামলা নিয়ে ঘনিষ্ঠ মহলে ঠিকই আলোচনা হচ্ছিল। ওই মামলাটি মেরি ট্রাম্প ও তাঁর ভাই করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর ভাইদের বিরুদ্ধে। সেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফ্রেড ট্রাম্প জুনিয়রের নামে থাকা অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছিল। মেরি ট্রাম্প ও তাঁর ভাইয়ের করা মামলায় তাঁদের বঞ্চিত করার অভিযোগ সুস্পষ্টভাবে তোলা হয়েছিল। এরপর আরেকটি মামলাও করা হয়। দুটি মামলাই সমঝোতার মাধ্যমে রফা হলেও এ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায় না।

এই সবকিছুই সবিস্তারে উঠে এসেছে মেরি ট্রাম্পের বইটিতে। এমনকি আরও নতুন নতুন তথ্য উঠে আসতে পারে এতে। ফলে এই বই এমনকি জন বোল্টনের বইটি থেকেও বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য।