ভুল পদক্ষেপে করোনার সংক্রমণ দিনে লাখ পার হতে পারে: ফাউসি

আমেরিকার শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ও আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশন ডিজিজেসের পরিচালক অ্যান্টনি ফাউসি। ছবি: রয়টার্স
আমেরিকার শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ও আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশন ডিজিজেসের পরিচালক অ্যান্টনি ফাউসি। ছবি: রয়টার্স

মহামারি মোকাবিলায় কর্তৃপক্ষ ও জনগণ যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস সংক্রমণ দ্বিগুণ হয়ে দিনে এক লাখ পার হয়ে যেতে পারে। গতকাল মঙ্গলবার মার্কিন কংগ্রেসে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি ফাউসি এ বিষয়ে সতর্ক করেন। বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের করোনা মোকাবিলায় গঠিত টাস্কফোর্সের সদস্য ফাউসি বলেন, মহামারি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র ভুল পথে হাঁটছে। তিনি মার্কিন নাগরিকদের মাস্ক পরার ও ভিড় এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন। লকডাউন শিথিল করায় মানুষ কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। রাখঢাকে না থেকে শিথিল আচরণ করায় নতুন করে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।

মার্কিন সিনেট প্যানেলকে ফাউসি বলেন, ‘আমি উদ্বেগে রয়েছি। যা ঘটছে, এতে আমি সন্তুষ্ট নই। কারণ, আমরা ভুল পথে হাঁটছি।’

ফাউসি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস বিস্তারের নতুন কেন্দ্রস্থল হিসেবে টেক্সাস ও ফ্লোরিডায় ব্যাপক হারে সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে। দেশজুড়ে প্রতিদিন এখন ৪০ হাজার রোগী শনাক্ত হচ্ছে। দ্রুত সংক্রমণ কমিয়ে আনা উচিত, যাতে দেশজুড়ে সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ না করে। আমাদের হাতে এখন আর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নেই। এখন যদি এটা ঘুরে না দাঁড়ায়, তবে দিনে এক লাখ সংক্রমণ ছাড়ালেও অবাক হব না।’

এই ভয়াবহ বার্তা মহামারি নিয়ন্ত্রণ সক্ষমতা সম্পর্কে উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ইতিমধ্যে দেশটিতে ১ লাখ ২৬ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। দেশটিতে সংক্রমিত মোট মানুষের সংখ্যা ২৬ লাখ পার হয়ে গেছে। ইউরোপ যে ১৫টি দেশের সঙ্গে আজ বুধবার থেকে সীমান্ত খুলছে, সে তালিকা থেকে যুক্তরাষ্ট্র বাদ পড়ছে। সামনে কীভাবে স্কুল আবার চালু করা হবে, তা নিয়েও দেশটিতে উদ্বেগ বেড়ে যাচ্ছে।

ফাউসি যুক্তরাষ্ট্রের তরুণদের জন্য কড়া বার্তা দিয়ে বলেন, ‘তরুণেরা বারে মাস্ক না পরেই এক হয়ে “বিপজ্জনক” আচরণ করছে। তারা সামাজিক দূরত্বের নিয়ম মানছে না। আমাদের এখন দায়িত্বের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। ব্যক্তি ও সামাজিক প্রচেষ্টা হিসেবে মহামারি মোকাবিলা করতে হবে।’

রিপাবলিকান সিনেটর লামার আলেক্সান্ডার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দিকে আঙুল তুলে বলেছেন, মাস্ক পরার বিষয়টি নিয়ে রাজনীতির ইতি টানার ক্ষমতা ট্রাম্পের আছে। বিষয়টি এমন দাঁড়িয়েছে যে ট্রাম্পের পক্ষে থাকলে মাস্ক পরার দরকার নেই। আর কেউ মাস্ক পরলে সে ট্রাম্পবিরোধ। ট্রাম্পের অনেক অনুসারী আছেন। তিনি মাস্ক পরলে তাঁরা তাঁকে অনুসরণ করতে পারেন।

ট্রাম্প অনেক বড় অনুষ্ঠানে মাস্ক পরেন না। এ নিয়ে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিদ্রূপও করেছেন। তিনি তাঁর করোনা সমস্যা দূরে রেখে নির্বাচন কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে জো বাইডেন ট্রাম্পকে নেতৃত্বের ঘাটতি ও মহামারি মোকাবিলায় ব্যর্থতার বিষয়গুলো তুলে ধরছেন।

গতকালের শুনানিতে যুক্তরাষ্ট্রে স্কুল খুলে দেওয়ার যথাযথ প্রস্তুতি আছে কি না, সে বিষয় গুরুত্ব পায়। ফাউসি এ ক্ষেত্রে বলেছেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন, যে করেই হোক, শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফেরাতে হবে। তিনি এ বছরের শেষ নাগাদ বা আগামী বছরের শুরুতে ভ্যাকসিন আসার বিষয়ে সতর্কতার সঙ্গে আশাবাদের কথাও বলেন।