শহীদ জননীকে নির্মূল কমিটি নিউইয়র্ক চ্যাপ্টারের স্মরণ

জাহানারা ইমাম
জাহানারা ইমাম

কথাসাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করল ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন সংগঠন। গত ২৭ জুন শহীদ জননীর ২৬তম মৃত্যুবার্ষিকীতে জুম ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, নিউইয়র্ক চ্যাপ্টার।

সংগঠনের সভাপতি শহীদ সন্তান ফাহিম রেজা নূরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক স্বীকৃতি বড়ুয়ার সঞ্চালনায় সভায় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও নিউইয়র্কের অন্যান্য সংগঠন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন থেকে নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

জাহানারা ইমামের জীবনের শেষ লগ্নে তাঁর পাশেই ছিলেন নির্মূল কমিটি নিউইয়র্কের উপদেষ্টামণ্ডলীর সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন নবী। নিজের লেখা বই ‘জাহানারা ইমামের শেষ দিনগুলি’ থেকে শহীদ জননীর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বারবার আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। তিনি বলেন, ‘জাহানারা খালাম্মাকে যখন শেষবারের মতো মিশিগানের এক হাসপাতালে দেখতে যাই, তিনি কাগজে লিখে দেশের কথা জিজ্ঞেস করলেন, আন্দোলনের কথা জানতে চাইলেন।’

সংগঠনের উপদেষ্টা সাংবাদিক নিনি ওয়াহেদ বলেন, ১৯৭৫-এর পর থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত স্বাধীনতা বিরোধীরা নিজেদের যেভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিল, আমরা সেভাবে নিজেদের সুসংগঠিত করতে পারিনি। তাই বঙ্গবন্ধু যে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিপ্লবের কথা বলেছিলেন, তা আর হয়ে ওঠেনি। সেই দুঃসময়ে শহীদ জননী অত্যন্ত সাহসের পরিচয় দিয়ে মাঠে নেমেছিলেন।’

সংগঠনের উপদেষ্টা শহীদ সন্তান কবি হাসান আল আবদুল্লাহ বলেন, ‘যে আদর্শ ও উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের পিতারা মুক্তিযুদ্ধে রক্ত দিয়েছেন, সেই বাংলাদেশ আজও আমরা পাইনি। পাঠ্যপুস্তকে আজ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার লেখা উঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমি তাই উদ্বেগ প্রকাশ করছি।’
নির্মূল কমিটি সুইজারল্যান্ডের সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, ‘শহীদ জননীর আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে।’

বোস্টন থেকে নির্মূল কমিটি নিউ ইংল্যান্ড শাখার সভাপতি মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘মিশিগানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শহীদ জননীর সঙ্গে ফোনে কয়েকবার আলাপ হলেও তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের সৌভাগ্য আমার হয়নি। শহীদ জননী যে আদর্শ ও উদ্দেশ্য নিয়ে আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন তা আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব।’

নিউইয়র্ক স্টেট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিন আজমল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও মহীয়সী নারী জাহানারা ইমামের আদর্শ বাস্তবায়নে জননেত্রী শত প্রতিকূলতার মধ্যেও দিন-রাত পরিশ্রম করছেন।’

বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব তাহমিনা শহীদ জাহানারা ইমামকে শ্রদ্ধা জানিয়ে একটি গান পরিবেশন করেন। নিউইয়র্কের আরেক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শহীদ উদ্দিন তাঁর বক্তব্যে বাহাত্তরের সংবিধান বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানান।

সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য কণ্ঠযোদ্ধা শহীদ হাসান, সাংবাদিক শীতাংশু গুহ, সহসভাপতি অধ্যাপক নাজনীন সিমন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রওশন আরা নিপা প্রমুখ।

সবশেষে সংগঠনের সভাপতি ফাহিম রেজা নূর বলেন, ‘শহীদ জননী যে মশাল জ্বালিয়েছিলেন সেই মশাল আমরা আজও বহন করে চলেছি।’ তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।