ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে কী করবেন, জানেন না কেউ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় দফা নির্বাচন নিয়ে প্রচারে নেমে পড়েছেন। নির্বাচিত হলেও যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের জন্য তাঁর পরিকল্পনা কী, তা একমাত্র ট্রাম্প ছাড়া আর কেউ জানে না। রিপাবলিকান দলের কেউ যে জানেন না, এ নিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম প্রতিবেদনও করেছে। ট্রাম্পের নিজ দলের দলের লোকজনও এ ব্যাপারে নিজেদের অজ্ঞতার কথাই জানিয়েছেন।

এ নিয়ে 'ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফার পরিকল্পনা রিপাবলিকান দলের কাছেই এখনো রহস্যের' শিরোনামে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নিউজ পোর্টাল দ্য হিল একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

 রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা দ্য হিল'কে বলেছেন, কেউ কেউ ট্রাম্পের পরিকল্পনার কথা কিছু জানেন, আর কেউ একেবারেই জানেন না। নির্বাচনের আর মাত্র চার মাস বাকি। এর মধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের রাজনৈতিক পরিকল্পনা ও কর্মসূচি সম্পর্কে নিজেরা না জানার কারণেও নির্বাচনী বার্তা নিয়ে মাঠে নামতে পারছেন না তাঁরা।

সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা মিচ ম্যাককনেল গত বছর বলেছিলেন, ২০২০ সালের আমেরিকার নির্বাচন হবে সাম্যবাদীদের সঙ্গে রক্ষণশীলদের রেফারেন্ডাম (গণভোট)। বার্নি স্যান্ডার্সকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অতি উদারনৈতিকতার ঝড় উঠেছে ২০১৫ সাল থেকে। সামাজিক সাম্যের আওয়াজ জোরদার করে রক্ষণশীলতা ও সামাজিক অসাম্যের বিরুদ্ধে জনগণের মধ্যে একটি আলোড়ন ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে আমেরিকার রাজনীতিতে। বার্নি স্যান্ডার্স যদিও ডেমোক্রেটদের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে এখন নেই। আমেরিকার সাম্প্রতিক বিক্ষোভ সমাবেশে দেশজুড়ে সাম্যের আওয়াজই ধ্বনিত হয়েছে বেশি করে। এখন মনে হচ্ছে, আমেরিকার আগামী নির্বাচন ভাবাদর্শের নয়। নির্বাচন হবে ব্যক্তি ট্রাম্পের থাকা না থাকার গণভোট।

রিপাবলিকান দলের লোকজনও মনে করেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মানুষের সমালোচনা করেই দিনের বেশির ভাগ সময় কাটান। তাঁর টুইট বার্তায় ব্যক্তি ও সংবাদমাধ্যমের সমালোচনাই বেশি। দ্বিতীয় দফা নির্বাচিত হয়ে দেশের জন্য কী করবেন-এ নিয়ে কোনো পরিকল্পনা গুছিয়ে আনার কাজেই তিনি সময় দিচ্ছেন না। আমেরিকার নির্বাচনে অনেকগুলো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে থাকে। এর মধ্যে কর আইনের সংশোধন, নানা নিয়ম নীতির সংস্কার নিয়ে আগে থেকেই আলোচনা শুরু হয়। এসব নিয়ে রিপাবলিকান দলের এখনও কোনো কর্মসূচির কথা জানা যায়নি।

রিপাবলিকান সিনেটররা দ্য হিল'কে জানিয়েছেন, তাঁরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের কর্মসূচি সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না। তবে তাঁরা মনে করছেন, তিনি সুপ্রিম কোর্টে নতুন বিচারক নিয়োগের সুযোগ পাবেন এবং বিচার বিভাগে নিজেদের পছন্দের লোক নিয়োগের কাজ করবেন।

সিনেটে ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান রিপাবলিকান সিনেটর চাক গ্রাসলি বলেছেন, দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ দেবেন, এ কথাটিই শুধু তিনি জানেন।

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাঁর শুধু এ নিয়েই কথা হয়েছে। তিনি অবশ্য মনে করেন, পরের চার বছরে যুক্তরাজ্য ও কেনিয়ার সঙ্গে অবাধ বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কাজ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে হয়তো প্রেসিডেন্ট এ নিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলবেন।

ফক্স নিউজের সেইন হেনরি সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে এ নিয়ে প্রশ্ন করলেও ট্রাম্প সরাসরি কোনো উত্তর দেননি। জবাবে তিনি সাবেক উপদেষ্টা জন বোল্টনকে গালাগালি করেছেন।

রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেছেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম দফা শুরু করা কাজ দ্বিতীয় দফায় সমাপ্ত করবেন প্রেসিডেন্ট। তিনি ভেঙে পড়া আমেরিকার অভিবাসন আইনের সংস্কার করবেন। সীমান্তের দেয়াল নির্মাণ শেষ করবেন। এ ছাড়া মেধাভিত্তিক অভিবাসন ব্যবস্থা চালু করবেন, নতুন বিচারক নিয়োগ দেবেন, মার্কিন সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করবেন এবং জ্বালানি খাতে স্বনির্ভরতা আনার পদক্ষেপ নেবেন।

রিপাবলিকান দলের আইনপ্রণেতারা এমন কথাই বলছেন। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী প্রচারে এসব নিয়ে কোনো পরিকল্পনার কথা এখনও স্পষ্ট করে উচ্চারণ করেননি। বরং সমাবেশে করোনা বিপর্যয়ে তাঁর সাফল্যের কথা বলছেন। যদিও করোনা সংক্রমণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে রীতিমতো উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। বিভিন্ন রাজ্যে পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। স্বাধীনতা দিবসের আনন্দ-উৎসবের পর করোনার সংক্রমণ আরও বাড়বে, আরও মানুষের মৃত্যু হবে- এমন কথাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।