করোনার কারণেও নিউইয়র্কে সহিংসতা বেড়ে গেছে: ব্লাজিও

নিউইয়র্ক নগরীর মেয়র বিল ডি ব্লাজিও। ছবি: রয়টার্স
নিউইয়র্ক নগরীর মেয়র বিল ডি ব্লাজিও। ছবি: রয়টার্স

নিউইয়র্কে সহিংসতা বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য করোনাভাইরাসকে দায়ী করেছেন নগরীর মেয়র বিল ডি ব্লাজিও। নগরীতে একের পর এক সহিংস ঘটনার পর মেয়র ব্লাজিও ৬ জুলাই এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সপ্তাহজুড়ে সহিংসতায় নিউইয়র্কে ১১ জন নিহত ও ৪৫ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর আগে পুলিশ সংস্কারের প্রতি নিজের সমর্থন জানিয়ে নিউইয়র্ককে আমেরিকার সবচেয়ে নিরাপদ নগরী হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন মেয়র।

সংবাদ সম্মেলনে মেয়র ব্লাজিও বলেন, বহু লোক এ সময়ে স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপনের জন্য বাইরে ছিল। অনেক সহিংসতা হয়েছে। এ নিয়ে অনেক কাজ করতে হবে। সহিংসতার জন্য কেবল একটি কারণকেই দায়ী করা যাবে না। তবে এসব সহিংসতার সঙ্গে করোনাভাইরাসের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গুরুতর সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। নিউইয়র্কের আবহাওয়া উষ্ণ হচ্ছে, মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। দেশের অর্থনীতি এখনো চালু হয়নি। গৃহবন্দিত্বের প্রতিক্রিয়া এখন এভাবে দেখা যাচ্ছে।’

মেয়র ব্লাজিও বলেন, ‘আমরা সত্যি অনেক সমস্যায় আছি।’ শিগগির ব্রুকলিন, ব্রঙ্কস, কুইন্স, ম্যানহাটনসহ সবখানে সহিংসতা কমিয়ে আনার অঙ্গীকারের কথা বলেছেন মেয়র ব্লাজিও। পাদরি, ধর্মগুরুসহ স্থানীয় নির্বাচিত লোকজনের সহযোগিতায় নেইবারহুড পুলিশিং চালু করার কথাও বলেছেন তিনি।

মেয়র আরও বলেন, গত মার্চ-এপ্রিল মাসে স্বাস্থ্য সংকটে পড়তে হয় নিউইয়র্ক নগরীকে। বিপর্যয় থেকে বেরিয়ে আসার এই সময়ে এখন উষ্ণ আবহাওয়া। তাই লোকজন এখনো কার্যত ঘরে আছে। স্বাভাবিক সময়ে নিত্যদিনের স্বাভাবিক কাজ এখনো লোকজন করতে পারছে না। এ সংকট থেকে উত্তরণ ঘটবে। কঠিন এবং শক্ত কাজ করতে হবে। সহিংসতা জনগণের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে স্বীকার করে মেয়র ব্লাজিও বলেন, ‘আমরা রুখে দাঁড়াব।’

জামিন আইনের সংস্কারসহ অন্যান্য বিষয়ে আলোকপাত করে নগরীর মেয়র বলেছেন, অনেক অপরাধীকেই রাইকার্স আইল্যান্ড কারাগার থেকে ছেড়ে দিতে হয়েছিল করোনার তীব্র সংক্রমণের সময়। এখন এই অপরাধীরাই সড়কে ঘুরে বেড়াচ্ছ। অথচ তাদের কারাগারে থাকার কথা।

নিউইয়র্ক পুলিশের চিফ টেরেন্স মোনহ্যান সাম্প্রতিক সহিংসতার বিষয়ে বলেছেন, এসব ঘটনার জন্য অনেক বিষয়ই দায়ী। করোনাভাইরাস ছাড়াও আদালত বন্ধ রয়েছে। নগরীতে বহু নতুন লোকের আগমন ঘটেছে। তিনি বলেন, আইনের প্রয়োগ করতে দ্বিধাগ্রস্ত হচ্ছে পুলিশ। গ্রেপ্তারের সময় গলায় পেঁচিয়ে ধরা বা হাঁটু দিয়ে চাপ দিতে পারছে না। দীর্ঘদিন থেকে অপরাধীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ যেসব কৌশল অবলম্বন করছিল, পুলিশ সংস্কার আইনে তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে। পুলিশের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ সর্বত্র। এখন কমিউনিটিকে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের পুলিশের পক্ষে কথা বলতে হবে।

পুলিশের তহবিল থেকে এক বিলিয়ন ডলারের তহবিল কর্তনের প্রতিক্রিয়ায় এমন কিছু হচ্ছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে নগরীর মেয়র ও পুলিশপ্রধান বলেছেন, অবশ্যই না। পুলিশ থেমে নেই উল্লেখ করে তাঁরা বলেন, অনেক মামলা প্রস্তুত রয়েছে। আদালত পুরো চালু হলেই অনেক অপরাধীর দণ্ড হবে।

মেয়র ব্লাজিও জোর দিয়ে বলেছেন, নগরী একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নিউইয়র্ক নগরী আমেরিকার সবচেয়ে নিরাপদ নগরী হিসেবে সুনাম অর্জন করেছে। এ সুনাম অক্ষুণ্ন রাখা হবে। সবাইকে নিয়ে কাজ করে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।