ট্রাম্প-বাইডেনের রাজনৈতিক শোডাউন ভেস্তে যাচ্ছে

জাতীয় কনভেনশনের মতো বৃহৎ মঞ্চে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন তাঁদের শোডাউনের সুযোগটা এবারে সেভাবে পাচ্ছেন না। ছবি: রয়টার্স
জাতীয় কনভেনশনের মতো বৃহৎ মঞ্চে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন তাঁদের শোডাউনের সুযোগটা এবারে সেভাবে পাচ্ছেন না। ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে চলতি বছর আমেরিকার প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের কনভেনশন বিশাল আকারে আর অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। এ কারণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য আগামী নির্বাচনের আগে বড় ধরনের রাজনৈতিক শোডাউন অনেকটাই ভেস্তে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত দলের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ আইনপ্রণেতা জানিয়েছেন, তাঁরা কনভেনশনে যোগ দিচ্ছেন না। কিছুটা একই দশা জো বাইডেনেরও।

ডেমোক্র্যাটদের জন্য দলের প্রাইমারিতে বিজয়ী জো বাইডেনকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা করার কথা। জাতীয় কনভেনশনের জমজমাট আসরে জো বাইডেনের সঙ্গে ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর নামও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ডেমোক্র্যাটদের শোডাউনের জন্য জরুরি ছিল।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বছরটিতে আমেরিকায় দুই দলের জাতীয় কনভেনশনের দিকে সবার দৃষ্টি থাকে। সাধারণত, আগস্ট মাসের দিকেই আমেরিকার বিভিন্ন নগরীতে দলগুলোর কনভেনশন হয়ে আসছে। এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। গত চার মাসে আমেরিকার মৃত্যুর সংখ্যা এর মধ্যেই ১ লাখ ৩১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিদিন নতুন মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে। মৃত্যুর তালিকায় প্রতিদিন যোগ হচ্ছে নতুন নতুন নাম। সংক্রমণের আশঙ্কা তাড়া করছে পুরো আমেরিকার সচেতন জনগোষ্ঠীকে।

রিপাবলিকান পার্টির এবারের জাতীয় কনভেনশন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল নর্থ ক্যারোলাইনাতে। নিউইয়র্ক নাজুক করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু হলে আগস্টের শেষ সপ্তাহে কনভেনশন নিয়ে নানা সংশয় দেখা দেয়। নর্থ ক্যারোলাইনার রাজ্য গভর্নর স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিয়ন্ত্রিত সমাবেশ করার পক্ষে অবস্থান নিলে কনভেনশনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ফ্লোরিডার জ্যাকসনভিলে সরিয়ে নেওয়া হয়। জ্যাকসনভিলেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে দলের পক্ষ থেকে তাঁর মনোনয়ন গ্রহণ করবেন এবং বক্তব্য রাখবেন বলে জানানো হয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২৭ আগস্ট সেখানে বক্তৃতা করার কথা রয়েছে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতির মধ্যেই ফ্লোরিডায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। এখন ওই রাজ্যে প্রতিদিন ১০ হাজার লোকের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে। কনভেনশনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকদের মাস্ক পরা বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম যে মানা হবে না, এ নিয়ে দলের লোকজনই নিশ্চিত। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ৯৯ শতাংশই ক্ষতিকারক নয় বলে এর মধ্যে বক্তব্য দিয়েছেন ট্রাম্প।

ওয়াশিংটন পোস্ট ৭ জুলাই এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রিপাবলিকান পার্টির অন্তত পাঁচজন সিনেটর এর মধ্যেই জ্যাকসনভিল কনভেনশনে উপস্থিত না থাকার কথা জানিয়ে দিয়েছেন। জাতীয় কনভেশনে দলের এসব সিনিয়র নেতার অনুপস্থিতি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য বা তাঁর সমর্থকদের জন্যও কোনো ভালো খবর নয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও ফক্স নিউজের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, জাতীয় কনভেনশন নিয়ে তাঁর এবং দলের অবস্থান এখন নমনীয়। হয়তো আনুষ্ঠানিকতা কমিয়ে আনা হবে, আসন সীমিত করা হবে। এখন পর্যন্ত রিপাবলিকান পার্টির পক্ষ থেকে কনভেনশন নিয়ে কোনো পরিবর্তিত সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়নি।

নিউজার্সির রিপাবলিকান সমর্থক লিন্ডা ব্লুমফিল্ড জানান, তাঁরা অপেক্ষা করছেন দলের সর্বশেষ নির্দেশনার জন্য। জাতীয় কনভেনশনে পুরো আমেরিকা থেকে দলের নানা পর্যায়ের লোকজন যোগ দেন। সেখানে অনেকটাই উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থানে উদ্বুদ্ধ হয়ে থাকেন দলের সমর্থকেরা। এবারে সবকিছু অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে করোনাভাইরাসের কারণে।

ডেমোক্র্যাট পার্টির জাতীয় কনভেনশন এবার হচ্ছে উইসকনসিনে। প্রথমে ১৩ থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত কনভেনশন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে ডেমোক্র্যাটদের কনভেনশন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। নতুন তারিখ পড়েছে আগস্ট মাসের ১৭ থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত। নির্বাচনের চার মাসের কম সময় বাকি। আমেরিকার রাজনীতিতে রিপাবলিকান বা ডেমোক্রেটিক পার্টি নয়। এখনো একাই খেলছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ডেমোক্রেটিক পার্টির পক্ষ থেকে অপেক্ষা করা হচ্ছে ট্রাম্প কতটা নিজের পরিস্থিতি নিজেই খারাপ করেন, তার ওপর। ডেমোক্রেটিক পার্টিতে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বিভক্তি বেশি। দলের যুব–তরুণের পছন্দের প্রার্থী বার্নি স্যান্ডার্স প্রাইমারিতে হেরে যাওয়ার পর তরুণদের মধ্যে উত্তেজনায় ভাটা পড়েছে। দলের অতি উদারনৈতিকদের সঙ্গে মধ্যপন্থীদের ফারাক বেড়েছে। জো বাইডেনের পক্ষে ডেমোক্রেটিক পার্টির বিভিন্ন পর্যায়ে ঘাপটি মেরে থাকা নেতৃত্ব এককাট্টা হলেও তাঁদের নিজেদের রাজনৈতিক কোনো উত্তাপ নেই। জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুপরবর্তী নাগরিক আন্দোলনের অগ্রভাগে ডেমোক্রেটিক পার্টির এসব মধ্যপন্থী নেতাকে দেখা যায়নি।

প্রাইমারিতে বিজয়ী জো বাইডেন এখনো ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর পছন্দের কথা জানাননি। বলেছেন, জাতীয় কনভেনশনের আগেই তাঁর পছন্দের কথা জানাবেন। সাধারণ জনমত জরিপে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে থাকা জো বাইডেনকে নিয়ে বনেদি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে আশাবাদ দেখা যাচ্ছে। যদিও আমেরিকার রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, জো বাইডেনের সঙ্গে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের মনোনয়নটি ডেমোক্র্যাটদের আগামী নির্বাচনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় কনভেনশনের মতো বৃহৎ মঞ্চে জো বাইডেন ও তাঁর মনোনীত ভাইস প্রেসিডেন্ট তাঁদের শোডাউনের সুযোগটাও এবারে সেভাবে পাচ্ছেন না।

ডেমোক্রেটিক পার্টির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে। দলের জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের পরামর্শেই জাতীয় কনভেনশন করা হবে। কনভেনশনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে উপস্থিত হওয়া বাধ্যতামূলক করাসহ উপস্থিতি এক হাজারের মধ্যে নিশ্চিত করার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

নিউজার্সির ডেমোক্র্যাট সদস্য আইলিন গ্যাগ্লিনো জানান, কাজকর্মের জন্য জীবনে কখনো দলের জাতীয় কনভেনশনে যোগ দেননি। এক বছর আগে পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন, এবারের কনভেনশনে যোগ দেবেন আজীবন ডেমোক্র্যাটদের ভোট দেওয়া এ সমর্থক। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ শুধু মানুষের চলাচলই বদলে দেয়নি, এর প্রভাব রাজনীতিতেও প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে।