প্লাস্টিক ব্যবহারে সচেতন হতে হবে

প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে প্রায় নিত্যদিনের বাজারে যাচ্ছেন, ঘরে ফিরছেন হাতভর্তি প্লাস্টিকের ব্যাগ নিয়ে। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে ব্যাগগুলো নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে দিয়েই নিশ্চিন্ত-যাক বাবা, সচেতন নাগরিকের দায়িত্ব তো পালন করা হলো। কিন্তু একবারও কি ভেবে দেখেছেন, ফেলে দেওয়া ব্যাগগুলোর শেষ পরিণতি কী হয়? প্লাস্টিক ব্যবহারে আপনি কি আদৌ সচেতন?

প্লাস্টিক একটি অপচনশীল উপাদান। তার মানে ১৯০৭ সাল থেকে শুরু করে যত প্লাস্টিকের পণ্য উৎপাদিত হয়েছে তার সবই কোনো না কোনোভাবে প্রকৃতিতেই রয়ে গেছে।

বর্তমানে প্রতি বছর সারা বিশ্বে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন প্লাস্টিকের ব্যাগ উৎপাদিত হয়। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের মতে, যে হারে প্লাস্টিকের ব্যাগের উৎপাদন বাড়ছে তাতে ২০৫০ সাল নাগাদ পৃথিবীর সাগর, মহাসাগরে যত প্রাণী থাকবে, তার চেয়ে বেশি প্লাস্টিকই পাওয়া যাবে। কারণ, পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের ব্যাগগুলোর শেষ গন্তব্য হয় জলাধারে, নদী আর মহাসাগরে যা জলজ প্রাণীর ওপর ভয়ংকর প্রভাব ফেলছে। ইতিমধ্যে ২৫০টি প্রজাতি এতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সংখ্যাটা দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ১৩০টির‌ও বেশি সামুদ্রিক প্রাণী ও পাখির দেহে পাওয়া গেছে প্লাস্টিকের অস্তিত্ব। আরও ভয়ংকর ব্যাপার হলো, এই প্লাস্টিক কিন্তু ঢুকে যাচ্ছে মানুষের শরীরেও। মানুষ প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৫ গ্রাম মাইক্রোপ্লাস্টিক (ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা) সামুদ্রিক খাদ্য, বাতাস কিংবা পানীয় বোতলের সঙ্গে গ্রহণ করে। সহজভাবে বললে, ফি সপ্তাহে মানুষ একটি ক্রেডিট কার্ডের সমান প্লাস্টিক খাচ্ছে। তাহলে, বছরের হিসেবে প্রত্যেকে প্রায় হাফ পাউন্ড প্লাস্টিক নিজেদের অজান্তেই গিলে ফেলছি।

প্রকৃতির জন্য, জীববৈচিত্র্যের জন্য, সর্বোপরি মানুষের শরীরের জন্য প্লাস্টিক কতটা ক্ষতিকর নিত্যনতুন গবেষণায় তা বেরিয়ে আসছে। এসব বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতে ও প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে প্রতি বছর ৩ জুলাই ‘আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক ব্যাগ ফ্রি দিবস’ পালন করা হয়। প্লাস্টিক বর্জনের নানা উদ্যোগের মধ্যে ‘প্লাস্টিক ফ্রি টুয়েসডে’ও বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এতে অংশগ্রহণকারীরা প্রতি মঙ্গলবার প্লাস্টিকের তৈরি অথবা প্যাকেটজাত পণ্য কেনা-বেচা ও ব্যবহার থেকে বিরত থাকে। প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যক্তিগতভাবে যে কেউ শামিল হতে পারেন দৈনন্দিন কিছু অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে। এর মধ্যে রয়েছে-১. প্লাস্টিকের ব্যাগের পরিবর্তে কাগজ, কাপড়ের বা চটের ব্যাগ ব্যবহার করুন। সবচেয়ে ভালো হয়, দোকানে যাওয়ার সময় বাড়ি থেকে নিজে ব্যাগ নিয়ে যাওয়া। আপনার যদি নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকে তবে প্লাস্টিকের ব্যাগে প্যাকেজিং বন্ধ করে ক্রেতাদের পুনর্ব্যবহারযোগ্য ব্যাগ ব্যবহারে উৎসাহিত করতে পারেন। ২. প্লাস্টিক ও স্টাইরোফোমের ওয়ান-টাইম গ্লাস, প্লেট, চামচ ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। এর বদলে কাগজের, কাচের বা স্টিলের জিনিসপত্র ব্যবহার করতে পারেন। ৩. প্লাস্টিকের জগ, বোতল ও ফুড কনটেইনারের পরিবর্তে কাচের বা স্টিলের পণ্য ব্যবহার করুন। প্লাস্টিকের পাত্রে রেখে মাইক্রোওয়েভে খাবার গরম করা খুবই অস্বাস্থ্যকর। বস্তুত প্লাস্টিকের তৈরি বোতলে ও পাত্রে রাখা খাবার ও পানীয় (বিশেষত গরম অবস্থায়) প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ৪. প্লাস্টিকের কফি কাপ ও স্ট্র পরিত্যাগ করুন। আজকাল অনেকেই স্টিলের ট্রাভেল কফি মগ ও স্ট্র নিজের সঙ্গে বহন করে থাকেন। ৫. যতটা সম্ভব সুতির কাপড় ব্যবহার করুন। লন্ড্রিতে সিনথেটিক কাপড় ধোয়ার সময় ওয়াশিং মেশিনের ‘কোল্ড ওয়াশ’ প্রক্রিয়া ব্যবহার করুন। এতে কাপড় থেকে অপেক্ষাকৃত কম পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক তন্তু নির্গত হয়, কাপড়ের স্থায়িত্ব বাড়ে।

 ইচ্ছা থাকলে আরও হাজারটা উপায়ে দৈনন্দিন জীবন থেকে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো যায়। রান্নাঘরের তৈজসপত্র থেকে শুরু করে টুথব্রাশ পর্যন্ত আস্তে আস্তে প্লাস্টিকের তৈরি  প্রয়োজনীয় পণ্যেরই বিকল্প পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি বাজারে আসছে। অনেক ক্ষেত্রেই এসব বিকল্প এখনো প্লাস্টিকের মতো সহজলভ্য ও স্বল্প মূল্যের হয়ে উঠতে পারেনি। তবু ভবিষ্যতের লাভ-ক্ষতির অঙ্কটা হিসাব করে নিজেদের এইটুকু ক্ষতি কি স্বীকার করতে পারি না?